চোর-ডাকাত থেকে ট্রেনযাত্রীদের রক্ষা করার জন্যই জিআরপি। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কাছাড় এক্সপ্রেসে যাঁদের চাপতে হয় তাঁদের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই অন্য রকম। অধিকাংশ যাত্রীরই অভিযোগ, এই ট্রেনে চাপলেই জিআরপি-র ‘সেবা’ সহ্য করতে হয় মুখ বুঁজে। টিকিট কেটেও নিস্তার নেই। বিশেষ করে ‘এসএলআর’ নামাঙ্কিত কামরায়।
‘সেবা’র নমুনাটা কেমন? যাত্রী এবং এবং কয়েকজন রেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিলচর কিংবা লামডিং যাত্রা শুরুর প্রথম স্টেশনেই বরাক এক্সপ্রেসের অসংরক্ষিত দু’টি এসএলআর কামরার দখল নিয়ে নেন জিআরপি জওয়ানরা। টিকিট হাতে সাধারণ যাত্রীরা ছোটাছুটি করলেও দরজা খোলেন না তারা। তারপরে শুরু হয় দরদাম করে যাত্রী তোলা। হাফলং পর্যন্ত ৫০ টাকা। হাফলং পেরোলেই ১০০ টাকা। টিকিট কাটা, না-কাটায় ফারাক নেই। দাবিমতো টাকা না পেলে ‘অবাধ্য’ যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়াও হয়। খাকি উর্দিধারীদের দাপট দেখে বিতর্কে যান না প্রায় কেউই। যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও রেলের কর্মী ও অফিসাররা হাত জোড় করে বলেন, “অনুগ্রহ করে আমাদের নাম উল্লেখ করে কিছু লিখবেন না।”
রেল সূত্রে জানা যায়, ট্রেনের সামনে ও শেষে এসএলআর কামরা রাখা হয় যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থেই। ইঞ্জিনের পরই এর অবস্থান। তবে পাহাড়পথে চড়াইয়ে ওঠার সময় সামনে-পিছনে ইঞ্জিন লাগাতে হয় বলে বরাক এক্সপ্রেসে থাকে দু’টি এসএলআর। পুরো কামরার অর্ধেকটা মালপত্র রাখার জন্য। বাকি অর্ধেকে থাকে সাধারণ যাত্রীদের বসার আসন। |
এর মধ্যে ছ’টি আসন বরাদ্দ ট্রেনে প্রহরারত জিআরপি জওয়ানদের জন্য। শুধুই শেষেরটিতে। কিন্তু বদরপুর বা লামডিং জিআরপি থানা সে-সবের ধার ধারে না। দু’টিই দখল করে রাখে তারা। গত দশ-বারো বছর ধরেই এই ‘ব্যবস্থা’ চলছে বলে অভিযোগ।
প্রতিদিন দু’দিক থেকে চলে দু’টি কাছাড় এক্সপ্রেস। অর্থাৎ চারটি এসএলআর কামরায় মোট ১২৮টি আসন। কিন্তু এই কামরাগুলি সবটাই প্রহরারত জিআরপি জওয়ানরা দখল করে রেখে ‘যাত্রীসেবা’ চালান বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ এক যাত্রী বলেন, “কাছাড় এক্সপ্রেসে প্রহরারত শুধু পাঁচ-ছ’জন কনস্টেবলই এই ‘কারবার’ চালাচ্ছেন এমন ভাবার কারণ নেই। জিআরপি-র উঁচু থেকে তলাসব স্তরেই তোলা টাকাটা ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। জিআরপি-র ‘সেবা’র চোটে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।”
বদরপুর জিআরপি থানার ওসি পি কে দেব অবশ্য এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ওই ট্রেনে যাত্রীর তুলনায় কামরা কম। ১৩ কামরার ট্রেনে দু’টি এসএলআর, ছ’টি স্লিপার ক্লাস, একটি এসি এবং একটি সেনা জওয়ানদের জন্য নির্দিষ্ট। অধিকাংশ সময়ে সাধারণ যাত্রীরা জিআরপি কামরায় এসে ওঠেন। অনেকে টিকিট কাটতে না পেরে টাকা-হাতে ছুটে আসেন। তাঁদের পরের স্টেশনে টিকিট কাটানো হয়।” কিন্তু জিআরপি’র জন্য এই ট্রেনে কি কোনও কামরা বরাদ্দ আছে, না কি শুধুই ছ’টি আসন? প্রশ্ন এড়িয়ে রেলপুলিশের ওসি বলেন, “এমন ঘটলে যাত্রীরা জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ দায়ের করতেই পারেন।”
যাত্রী অভিযোগ আছে, সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধেও। এই ট্রেনে সামরিক বাহিনীর জন্য একটি কামরা এবং আধা-সামরিক বাহিনীর জন্য শেষ এসআরএল-এ চারটি আসন বরাদ্দ। কিন্তু তাঁরা নাকি সাধারণ যাত্রীদের কামরা দখল করে রাখেন। |