সম্প্রতি সোল-এ পরমাণু নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাঁদের দেশে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। কিন্তু মনমোহন জানিয়েছেন, আগে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চোখে পড়ার মতো কিছু কাজ হোক, তার পরে তিনি পাক সফরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করবেন। ‘চোখে পড়ার মতো’ বড় কিছু না হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ধাপে ধাপে যে অগ্রগতি হচ্ছে, তারই রেশ ধরে আগামী ৮ এপ্রিল অজমের সফরে আসছেন পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। এই ‘তীর্থযাত্রার’ মধ্যেও কী ভাবে মনমোহনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করা যায়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৈঠকটি যদি সম্ভব হয়, তা হলে তা হবে দু’বছর বাদে পাক প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রথম বৈঠক।
২০১০ সালে ভুটানের পার্শ্ববৈঠক থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির লক্ষ্যে যে কৌশল মনমোহন-গিলানি নিয়েছেন, তা অব্যাহত। বস্তুত, জারদারির অজমের সফর তারই অন্যতম ফল বলে মনে করা হচ্ছে। পাক বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বলছে, জারদারির আসন্ন সফরটির উদ্দেশ্য নিছকই দরগা দর্শন। তিনি বড়জোর এক বেলার জন্য এসে অজমের শরিফ ঘুরে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যাবেন। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ক্রিকেট হোক অথবা তীর্থদর্শন সফরের উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, পাক রাষ্ট্রপ্রধানের ভারতে পা রাখাটাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার হলেও দীর্ঘদিন পাক প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে মনমোহনের বৈঠক হয়নি। মুম্বই হামলার কয়েক মাস পরেই, ২০০৯-এর জুনে রাশিয়ার ইয়েকটরিনবার্গে বৈঠক হয়েছিল দু’জনের। তখন দ্বিপাক্ষিক পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ। তার পর দু’বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত। সার্কের পার্শ্ব বৈঠকে কথার পথ খোলার পর দু’দেশের মধ্যে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপগুলি বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পর্যায়ের বৈঠক অনেকাংশেই ফলপ্রসূ হয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের শাস্তির প্রশ্নে ইসলামাবাদ কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না করলেও এ ব্যাপারে ধারাবাহিক চাপ বজায় রেখেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, বাণিজ্য ক্ষেত্রে কিন্তু ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করেছে জারদারি সরকার। আফগানিস্তানে গম পাঠানোর ক্ষেত্রে নিজেদের মাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়াই শুধু নয়, গত নভেম্বরে ভারতকে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’-এর মর্যাদাও দিয়েছে জারদারির মন্ত্রিসভা।
গত বছর পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ভারত সফরে এসে বলেছিলেন, দু’দেশের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি যে রয়েছে, তা বাস্তব। তাকে কমানোটাই হবে আশু রাজনৈতিক পদক্ষেপ। জারদারির আসন্ন ভারত সফর তাই ভারত-পাক ভবিষ্যতের জন্য এক মাইল ফলক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জারদারির প্রস্তাবিত সফরের আগেই রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন হিজবুল প্রধান সৈয়দ সালাউদ্দিন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যে, কৌশলগত কারণে কাশ্মীর সীমান্ত থেকে জঙ্গিদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সংগঠন। জঙ্গি সরানোর কারণ ব্যাখ্যা করে সালাউদ্দিন বলেছেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও কৌশলের বদল ঘটিয়েছি। ভারত যদি দেখে কাশ্মীরের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে এক-দু’জনেরও হাতে অস্ত্র রয়েছে, তা হলে ভারত নিরপরাধ নাগরিকদের গুঁড়িয়ে দেবে।” |