হুগলির হেস্টিংস জুটমিল
আন্দোলনের জেরে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত
র্তৃপক্ষের ‘অনৈতিক’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন হুগলির রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিলের তাঁত বিভাগের কর্মীরা। শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে মিলে কাজ বন্ধ করে দিলেন কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে মিলের গেটে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানো হয়। এর ফলে মিলের স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিক অসুবিধায় পড়লেন। তাঁরা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
শ্রমিকদের দাবি, গত বুধবার প্রমোদ শাহ নামে তাঁত বিভাগের এক শ্রমিক কাজে আসেননি। অভিযোগ, পর দিন মিলে এলে তাঁকে কাজ দেওয়া হয়নি। শঙ্কর সাউ নামে অপর এক শ্রমিক তাঁর হয়ে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে যান। অভিযোগ, ওই অফিসার কোনও কথাই শোনেননি। উল্টে, শঙ্করবাবুর সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন। কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, শঙ্করবাবুর ‘উস্কানি’তে প্রমোদ ওই অফিসারের গায়ে হাত তোলেন। তার জেরে প্রমোদের পাশাপাশি শঙ্করবাবুকেও কাজ থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। শঙ্করবাবু তৃণমূলের নেতা। ওই মিলে অবশ্য তৃণমূলের সংগঠন নেই।
ছবি: প্রকাশ পাল
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান তাঁত বিভাগের শ্রমিকেরা। ওই দু’জনকে কাজে বহাল করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকাল ১১টা থেকে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁত বিভাগের শ্রমিকেরা। ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে তিনটি নোটিস দেন কর্তৃপক্ষ। যদিও, শ্রমিকেরা নিজেদের দাবিতে অনঢ় থাকেন। এর পরেই রাত ১০টা থেকে কাজ বন্ধের নোটিস ঝোলান কর্তৃপক্ষ। নোটিসে মিলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জানান, কোনও কারণ ছাড়াই তাঁত বিভাগের শ্রমিকরা ‘অবৈধ’ ভাবে ধর্মঘট করেছিলেন। এতে এক দল শ্রমিকের মদত ছিল। কারখানার সমগ্র কাজের উপরেই এর প্রভাব পড়ছিল। কোম্পানির ক্ষতি হচ্ছিল। সে কারণে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করা ছাড়া তাঁদের কোনও উপায় ছিল না।
শ্রমিকেরা অবশ্য পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন। তাঁত বিভাগের শ্রমিক অভিজিৎ দত্ত, আফতাব আলমরা বলেন, “সম্পূর্ণ মর্জি-মাফিক দু’জনকে বসিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ না করলে তো যে কোনও দিন যে কাউকে বসিয়ে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের জুলুম না মুখ বুজে সহ্য না করাতেই এ ভাবে আমাদের রোজগার বন্ধ করা হল।” সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক তথা ওই সংগঠনের ‘সারা ভারত চটকল ফেডারেশন’-এর সম্পাদক দেবাশিস দত্ত বলেন, “চটকলে শ্রমিকদের উপর মালিকদের আক্রমণ বাড়ছে। লক আউট বাড়ছে। একটা সাধারণ ঘটনা নিয়ে হেস্টিংস মিল বন্ধ করা হল। যতদূর জানি, লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়েই কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বসিয়ে দেন। বেআইনি ভাবে ভীতির পরিবেশ তৈরি করে চটকলগুলি চালানো হচ্ছে।”
এআইটিইউসি-র অভিযোগ, সম্প্রতি শ্রীরামপুরের ওয়েলিংটন জুটমিলে তাঁদের সংগঠনের এক শ্রমিককে অন্য এক শ্রমিক মারধর করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রহৃত শ্রমিককেই কাজ থেকে বের করে দেন। দেবাশিসবাবু বলেন, “ওই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মিলের গেটের সামনে শান্তিপূর্ণ ভাবে অনশনে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি করে আমাদের আন্দোলন বানচাল করে দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ভাবে শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথের আবার বক্তব্য, “রাজ্যের শ্রম দফতরের নিষ্ক্রিয়তার জন্য মিল মালিকেরা যা খুশি করছেন। সিপিএমের আমলে যে পরিস্থিতি ছিল, এখনও তার পরিবর্তন হয়নি। শ্রমিকদের উপরে একতরফা অন্যায় হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সিটু নেতা সুনীল সরকারের অবশ্য বক্তব্য, “রাজ্যে এখন গুণ্ডাদের রাজত্ব চলছে। মিলে তৃণমূলের সংগঠনই নেই। অথচ ওদের এক নেতা মাতব্বরি করলেন। গণ্ডগোল করলেন। কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কর্তৃপক্ষের কিছু করার ছিল না।” এ ব্যাপারে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, “আসলে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে সিপিএমের যোগসাজস এখনও যায়নি। তাই ওদের নেতারা এখনও মালিকদের গলাতেই কথা বলেন। কোনও দিনই ওরা শ্রমিকের পাশে দাঁড়াননি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.