কারও হাতে কোদাল বা বালতি। কেউ বা ধরেছেন ঝুড়ি-ঝাঁটা। হাতে হাত মিলিয়ে গ্রামের পরিবেশ বদলে দিয়েছেন ওঁরা। ওঁরা কেউ পঞ্চায়েত বা পুরসভার কর্মী নন, নানুরের খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী। জাতীয় সেবা প্রকল্পে স্থানীয় গোপডিহি গ্রামের চিত্রটা বদলে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, বিপর্জয় মোকাবিলা, পঞ্চায়েত কিংবা ব্যাঙ্কিং পরিষেবার বিষয়ে এক সপ্তাহ ধরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নির্মল গ্রাম গড়ার লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করেছেন।
গোপডিহি গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। অধিকাংশ দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। সংস্কারের অভাবে গ্রামের নালা, নর্দমা মজে যেতে বসেছিল। আবার কোথাও চৌবাচ্চা বা পাতনা মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল। ২৫ মার্চ থেকে সাত দিন ওই কলেজের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী নালা-নর্দমা পরিষ্কার করেছেন, জলাধার থেকে বের করেছেন জমা জল। গ্রামের মোল্লাপাড়ার একটি নলকূপের চাতাল তৈরি শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের দু’টি নলকূপ মেরামত করেছেন তাঁরা। |
এ সবেই থেমে থাকেনি কলেজ পড়ুয়াদের উদ্যোগ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক কিংবা পঞ্চায়েতের নানা পরিষেবা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন তাঁরা। এক দিন বিকেলে একটি আলোচনাসভায় সামীল করেছেন বাসিন্দাদের।
এ সব দেখে বিস্মিত গ্রামবাসীরা। দিনমজুর অজয় দাস, কৃষিজীবী শেখ আব্দুল রাইহান, ফিরোজা বিবিরা বলেন, “সাত দিন আগের গ্রামটাকে আর চেনাই যায় না। কত কিছু যে অজানা ছিল তা ওদের কাছেই জানলাম।” বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বাবন মেটে, প্রথম বর্ষের রাধাশ্যাম অধিকারী, দ্বিতীয় বর্ষের নুরনিহার খাতুন, দেবযানী ঘোষরা বলেন, “জাতীয় সেবা প্রকল্পে বিভিন্ন সময়ে যে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম তা গ্রামবাসীদের কাজে লাগাতে পেরে ভাল লাগছে।” ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক নিরঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং আতাউর রহমান বলেন, “গত ১০ বছর ধরে এই কলেজে জাতীয় সেবা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে প্রতিবছর সাত দিন করে ছাতিন গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ হয়েছে। এ বার থেকে কয়েক বছর কাজ হবে ভোগডিহি গ্রামে।”
কলেজের অধ্যক্ষ নুরসাত আলি বলেন, “শুধু পড়াশোনা নয়, মানুষের কল্যাণে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রয়েছে। এই কলেজের পড়ুয়ারা তা পালন করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।” |