পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে আর্জি
বাড়ির পাশেই নলকূপ। অথচ বহুদিন ধরে অকেজো। আবার কোথাও নলকূপ থেকে ঠিক মতো জলই ওঠে না। কিছু এলাকায় গভীর নলকূপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা হয়নি তারও। সব মিলিয়ে বোলপুরের পানীয় জল সরবরাহের অবস্থা তথৈবচ।
ইন্দো-জার্মান প্রকল্পের মাধ্যমে বোলপুর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের কথা। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, এমনিতেই বোলপুর পুরসভা এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জলসঙ্কটে ভুগলেও কোনও সুরাহা পাচ্ছেন না তাঁরা। কোনও দিন জলের যোগান অনিয়মিত, আবার কোনও দিন জলে বেগই থাকে না। তাঁদের আশঙ্কা এখন থেকেই যদি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তা হলে গরমকালে বোলপুরবাসীর সামনে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন নম্বর ওয়ার্ডের মিশন কম্পাউন্ড, চার নম্বর ওয়ার্ডের ভুবনডাঙার একাংশ, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুপল্লি ও ভুবনডাঙার বাকি অংশ, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের জামবুনী ও কালীযোজনপল্লি, বারো নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লি, আঠারো নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমবাজার এবং উনিশ নম্বর ওয়ার্ডের কাছারিপট্টি এলাকায় জলসঙ্কট সব থেকে বেশি। ওই সমস্ত ওয়ার্ডে পুরসভা ইন্দো-জার্মান প্রকল্পের মাধ্যমে জলের যোগান দেয়। কিন্তু জলের গতি খুব বলে অভিযোগ। তা ছাড়া এলাকায় থাকা নলকূপগুলি সংস্কারের অভাবে বহুদিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে বিকল্প পানীয় জল পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এলাকাবাসীদের চিন্তা, এখন যদি এই অবস্থা দাঁড়ায় তা হলে আরও গ্রীষ্মে কী হবে! দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে বোলপুরবাসীকে তীব্র জলসঙ্কটে পড়তে হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের পুর-এলাকা ও সংলগ্ন এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের জন্য ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দো-জার্মান প্রকল্পের মাধ্যমে জল সরবরাহ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্প থেকে সর্বাধিক ৬০০০ সংযোগের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি পুরসভা সংলগ্ন বিশ্বভারতী এবং শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় থাকা বোলপুর ব্লকের রূপপুর, রাইপুর-সুপুর ও বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের একাংশও এই প্রকল্পে জলের সুবিধা পান। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং নজরদারির অভাবে ওই সব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান, কংগ্রেসের তপনকুমার সাহা বলেন, “পুর-এলাকার ৫২ হাজার বাসিন্দার জন্য ইন্দো-জার্মান প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। পাশাপাশি বিশ্বভারতী ও বোলপুর ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতও ওই জল সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়েছিল। পুর এলাকায় সর্বাধিক ৬০০০ লাইনের সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। এই মুহূর্তে আরও প্রায় আট হাজারেরও বেশি সংযোগ দেওয়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, ধার্য ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি সংযোগ হয়ে যাওয়ায় পানীয় জলের গতি কমছে এবং জল জোগান অনিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ বিকল্প পানীয় জলের বিষয়ে এখন থেকে উদ্যোগী না হলে সমস্যা বাড়বে।
তাঁদের এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা টের পাচ্ছেন বাসিন্দারা। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কম করে পনেরো বার জল জোগান অনিয়মিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্চের প্রথম সপ্তাহে একাধিক ওয়ার্ডে একাধিক দিন জল জোগান বন্ধ ছিল। পুরপ্রধানের হস্তক্ষেপে অবশ্য দিন চারেকের মধ্যে জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। সেই সমস্যা সাময়িক ভাবে কাটলেও গ্রীষ্মে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে চিন্তিত বাসিন্দারা।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সম্প্রতি এই সমস্যা নিয়ে লিখিত ভাবে পুরপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর দাবি, “যে সমস্ত ওয়ার্ডে জল সরবরাহ অনিয়মিত ও বেগ কম সেখানে গাড়ির মাধ্যমে দু’বেলা জল দিক পুরসভা।”
সমস্যার কথা স্বীকার করেনিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান নরেশচন্দ্র বাউড়ি। তিনি বলেন, “জনসংখ্যা বাড়ছে। ফলে জল সংযোগ বাড়ছে। সে কারণেই চাপ বেড়ে জলসঙ্কট দেখা দিচ্ছে।” তাঁর দাবি, “জল জোগানের জন্য অতীতে নেওয়া ব্যবস্থাগুলির সংস্কার করা হবে। তা ছাড়া এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে মাটির জল তোলায় জলের স্তরও কমছে। সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” জল সমস্যার কথা স্বীকার করে পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “সম্প্রতি বোলপুর সফরে এসেছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। গভীর নলকূপ, বাড়তি জনসংখ্যা এবং নতুন এলাকাগুলির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে আমরা সচেষ্ট। প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং আনুষঙ্গিক খরচের কথা জানিয়ে, সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.