সাইকেলে ব্যাগ ঝুলিয়েই গ্রামে মোবাইল ফেরি করতেন সরিফুল
মোবাইল নেবে গো, মোবাইল।
সাইকেলের হাতলে একটা ঝোলা। তার মধ্যে গোটা কুড়ি মোবাইল নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ফেরি। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিক্রিবাটা করে বাড়ি ফিরতে বিকেল হয়ে যেত। শুধু ফেরি নয়, মোবাইল বেচাকেনা চলত বাড়ি থেকেও। এ ভাবেই এলাকায় মোবাইল ফোন বিক্রি করত কাটোয়ার নতুনগ্রামের সরিফুল শেখ।
পুলিশের হাতে ধরা না পড়লে এলাকার বাসিন্দারা জানতেই পারতেন না, সরিফুল যে মোবাইলগুলি বিক্রি করত তা চোরাই জিনিস। গত শুক্রবার বিকেলে নতুনগ্রামের শ্রীবাটি বাসস্টপ থেকে কেরলের পালারিভত্তম থানার এসআই এস বিজয়শঙ্কর গ্রেফতার করেন সরিফুলকে। সে দিনই তার বাড়ি থেকে ২২টি ও এলাকা থেকে সরিফুলের বিক্রি করা বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই রাতে বর্ধমান শহরের একটি হোটেলে কেরলের চার পুলিশের সঙ্গে ছিল সরিফুল। একে লোডশেডিং। তার উপরে গরম। সে কারণে বারান্দার দরজা খুলে ঘুমিয়ে ছিল তিন পুলিশ। হাতকড়া পরে তাদের সঙ্গে ছিল সরিফুলও। ঘুমন্ত পুলিশকে দেখে সুযোগ বুঝে ছাদের আলসে বেয়ে পালায় সে। রাত ৩টেয় ঘুম ভেঙে পুলিশ বুঝতে পারে পাখি উড়ে গিয়েছে। শনিবার এস বিজয়শঙ্কর বর্ধমান থানায় বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এখন সরিফুলকে খোঁজার দায়িত্ব পড়েছে বর্ধমান থানার উপর।
কাটোয়ার নতুনগ্রামে সরিফুলের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সকালে নতুনগ্রামের দক্ষিণপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সরিফুলের বাড়িতে তালা ঝুলছে। তাঁর বাবা-মা কেউ এলাকায় নেই বলে জানান গ্রামবাসীরা। পড়শিরা জানান, ২৬ বছরের সরিফুল কাজের খোঁজে তিন বছর আগে কেরল গিয়েছিল। তার আগে দিনমজুরির কাজ করত। তখন তার নামে কোনও অপবাদ শোনেননি তাঁরা। গ্রামবাসীরা আরও জানান, প্রতি বছর তিনবার করে গ্রামে আসত সরিফুল। কিন্তু গত ২ মাসে কেরলে আর ফেরেনি সে। নতুনগ্রামেই থাকত। বাড়িতে বসে বা সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করত মোবাইল। শ্রীবাটি, বাসকা, সিঙ্গি, মুলটি, সাহেবনগর গ্রামেও মোবাইল বিক্রি করেছে সে। কাঁচা টাকা হাতে আসায় আচরণেও পরিবর্তন এসেছিল তার। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আর আগের মতো মিশত না। এমনকী এই ক’মাসের মধ্যে তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। স্থানীয় এক মোবাইল দোকানের মালিক জানান, “মাস দুয়েক আগের ঘটনা। সাইকেলের হাতলে গোটা কুড়ি ‘সিল’ খোলা মোবাইল নিয়ে আমার কাছে আসে সরিফুল। বাজারে ওই মোবাইলগুলির দাম ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। সে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় আমায় দিয়ে দেবে বলে জানায়। কিন্তু আমি নিইনি।” ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলা বলেন, “আমাদের স্বামীরাও কেরলে কাজ করেন। ও চুরি করে ধরা পড়ল। আবার পালিয়েও গেল। ওর জন্য এর পর থেকে তো আমাদের স্বামীদেরও কেউ বিশ্বাস করবে না!”
সরিফুলের ‘ঘনিষ্ঠ’দের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল ১০টায় গ্রামে এসেছিল সে। সিঙ্গি বাস-স্টপেজে নেমে মুলটির মাঠ ধরে সোজা নতুনগ্রামে আসে সে। তার হাতে অবশ্য কোনও হাতকড়া ছিল না। গ্রামের ভিতর কাচ্চু শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে জল খেতে চায়। তার পরে গ্রামেরই আলিম শেখের খোঁজ করে। কিন্তু তাঁকে গ্রামে না পেয়ে মন্তেশ্বরের দিকে হাঁটা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একটি দামি মোবাইল আলিম শেখের কাছে বিক্রি করেছিল সরিফুল। তার পরেই নির্মাণ কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আলিম কোচি চলে যান। ইতিমধ্যে মোবাইলটিতে একটি ‘সফ্ট ওয়্যারে’র সমস্যা হওয়ায় সেখানেই একটি নামী কোম্পানির ‘সার্কিট পয়েন্টে’ সারাতে দেন মোবাইলটি। মোবাইলটি যে চোরাই মাল, সেখানেই ধরা পড়ে। আলিমের কাছ থেকে সরিফুলের নাম জানতে পারে কেরল পুলিশ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীবাটিতে এসে সরিফুলকে গ্রেফতার করে তারা। সেই কারণেই পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে এসে প্রথমেই সরিফুল আলিমের খোঁজ করে বলে দাবি করেন তাঁরা।
কিন্তু সরিফুলকে পাকড়াও করার দায়িত্ব পেয়ে বিরক্ত বর্ধমান থানার পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “একে বর্ধমান মেডিক্যালে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে জেরবার আমরা। তার উপরে কেরল পুলিশের গাফিলতিতে উটকো ঝামেলা এসে পড়ল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.