থালা তৈরিতে চাই কাঠি, তাঁবু পড়ল কাঁকসার জঙ্গলে
শাল পাতার থালা তৈরি করেই দিন গুজরান হয় ওঁদের। শাল গাছের অভাব নেই জঙ্গলে। কিন্তু পাতার সঙ্গে পাতা গেঁথে থালা তৈরির জন্য ছোট্ট যে কাঠিটির প্রয়োজন হয়, সেটাই মেলে না ঠিক মতো। উপযুক্ত কাঠির খোঁজে তাই তাঁদের পাড়ি দিয়ে আসতে হয় কয়েকশো কিলোমিটার। দীর্ঘ পথ উজিয়ে দুর্গাপুর আর সংলগ্ন কাঁকসায় দলে দলে আদিবাসীরা চলে আসেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। সময় ঠিক এটাই। প্রতি বছর এই সময়েই আসেন ওঁরা। জঙ্গলের পাশে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটান। সব শেষে বোঝা বোঝা শিরিষ কাঠি সংগ্রহ করে, বাসের মাথায় সে সব চাপিয়ে তাঁরা ফিরে যান নিজেদের এলাকায়। সারা বছর সেই কাঠি ব্যবহার করেই চলে শালপাতার থালা তৈরির কাজ।
নিজস্ব চিত্র।
এত দূর থেকে কাঠি জোগাড় করে নিয়ে যেতে খরচ পড়ে ভালই। তবু উপায় নেই। তাঁদের কথায়, “বছরে এই এক বার কষ্ট করলে সারা বছর আর কোনও চিন্তা থাকে না।” বছরের পর বছর চলছে এ ভাবেই। অনেকে আবার আসছেন পুরুষানুক্রমে।
কেন শুধু এই সময়টাকেই বেছে নেন তাঁরা? জানা গেল, বসন্তে পাতা ঝড়ে যাওয়ার পরে গাছের শুকনো সরু ডালগুলিও খসে পড়ে গাছের নীচে। সে সবই তাঁরা সংগ্রহ করেন।
দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার থেকে যে রাস্তাটি মহকুমা হাসপাতালের দিকে চলে গিয়েছে, সেই রাস্তার পাশে দেখা হল এমনই একটি দলের সঙ্গে। তিন পুরুষ এবং ৭ মহিলার একটি দল। এসেছেন শালবনি থেকে। তুলসি বাস্কে, সোনামনি বাস্কেরা জানালেন, দলের পুরুষেরা মূলত নিরাপত্তার দিকটা দেখেন। আর কাঠি জোগাড়ের দায়িত্বে থাকেন মহিলারা। সকাল থেকে জঙ্গল ঘুরে কাঠি জোগাড় করে বোঝা বাঁধার কাজ তাঁদের। শেষে রাতে তাঁবুতে ফিরে বিশ্রাম। সকালে ফের জঙ্গল-অভিযান। বছরের এই কয়েকটা দিন একটু বেশিই পরিশ্রম হয় তাঁদের।
কিন্তু তাঁদের এলাকায় কি শিরিষ গাছ নেই? বাবুরাম কিস্কু, সোনালি সোরেন’দের কথায়, “আছে, কিন্তু খুবই কম। আর ওখানকার শিরিষ গাছের কাঠি এখানকার মতো এত শক্তপোক্ত নয়। একটু চাপ দিলেই ভেঙে যায়। কিন্তু এখানকার কাঠি নষ্ট হয় না। তাড়াতাড়ি পাতা তৈরির কাজ করা যায়।” তাঁদের কাছ থেকেই জানা গেল, এমনই আরও কয়েকটি দল এসেছে এলাকায়। দুর্গাপুর ও কাঁকসার জঙ্গলে কাঠি খোঁজার কাজ করছেন তাঁরাও।
শালপাতা তৈরিতে শিরিষ গাছের কাঠি কি সত্যি এতই মহার্ঘ? কাঁকসার মলানদিঘি এলাকার বাসিন্দা মনসাপদ হেমব্রম এবং আশপাশের বহু বাসিন্দাই শালপাতার থালা তৈরি করেন। মনসাপদ বললেন, “আরও অনেক গাছের কাঠি দিয়েই শালপাতা তৈরি করা সম্ভব। তবে শিরিষ কাঠি দিয়েই সবথেকে ভাল কাজ হয়।” বাড়ির কাছেই মেলা শিরিষ গাছ। তাঁদের আর তাই অন্যত্র যাওয়ার দরকার পড়ে না। সময় শেষ।
কাজ গুটিয়ে তুলসি, সোনালি-রা এখন বাড়ির পথে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.