এক শিশি আতর ও ১৫০ টাকা চুরির অপবাদে এক বালককে পিটিয়ে খুনের পরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের ফালাকাটা থানার কাদম্বিনী চা বাগান এলাকায়। পুলিশ জানায়, নিহত বালকের নাম শিবরাজ ওঁরাও (১২)। ওই বাগানেই শ্রমিক বস্তিতে তার বাড়ি। তাকে খুনের অভিযোগে এলাকার এক মনিহারি দোকানের মালিক দীপক চিকবরাইক-সহ ৬ জনকে পুলিশ খুঁজছে। শিবরাজ ওই দোকানের কর্মীও ছিল না।
আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, “নিহতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে শিবরাজের দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে শিবরাজ ‘লজ্জায় আত্মঘাতী’ হয়েছে বলে বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশকে জানিয়েছিলেন। এসডিপিও বলেন, “আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ময়না-তদন্ত করতে গিয়ে মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তখনই দেহটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগে পাঠানো হয়।”
অভিযুক্ত মনিহারি দোকানের মালিককে এ দিন এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী গীতাদেবী বলেন, “স্বামী বাড়িতে নেই। শনিবার দোকান থেকে আতর ও কিছু টাকা চুরি হয়েছে। সে জন্য আমার স্বামী কাউকে মারধর করেননি।”
শিবরাজ চা বাগানের প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাড়ির লোকেরা জানান, রোজই বিকালে সে মাঠে গোবর আনতে যেত। সেদিনও শিবরাজ বালতি নিয়ে গোবর আনতে যাচ্ছিল। দীপকবাবু মনিহারি দোকানের সামনে তাকে ধরে চুরির অপবাদ দেন। তার পরেই শিবরাজের হাত বেঁধে দীপকবাবুরা কয়েকজন মিলে অনেকক্ষণ ধরে মারধর করেন বলে অভিযোগ। শিবরাজের ঠাকুমা সনিয়া ওঁরাওয়ের অভিযোগ, তিনি সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ শিবরাজকে মারধর করতে দেখে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে পরিবারের লোকেদের খবর দেন। কিন্তু বাড়ির লোকেরা দীপকবাবুর দোকানের সামনে গিয়ে কাউকে দেখতে পাননি। রাত ৮টা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে চা বাগানের একটি গাছে দেহটি ঝুলতে দেখা যায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। শিবরাজের মা রিমনিদেবী অভিযোগ করেন, “আমার ছেলে চুরি করতে পারে না। কেউ বলতে পারবে না বস্তির কোথাও সে অন্যায় কাজ করেছে। ওকে চোরের অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলা হল। ওদের শাস্তি চাই।” বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয় রান্নার কাজ করেন মৃতের বাবা জত্রু ওঁরাও। তিনি বলেন, “ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম না। পরে সমস্ত ঘটনা শুনেছি। ছেলেকে যারা পিটিয়ে মেরে ঝুলিয়ে দিল, তাদের বিরুদ্ধে সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। ওদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি না দিলে ছেলের আত্মা শান্তি পাবে না।” এলাকার সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রণজিৎ কুজুরও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।” |