অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ধৃত মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতালের ৪ কর্তার জামিনের আবেদনই সোমবার মঞ্জুর করলেন সিজেএম কল্লোল দাস। এ দিকে, এ দিনই অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাসের সঙ্গে দেখা করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, হাসপাতাল সম্পর্কিত কিছু কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। সেই সূত্রেই এ দিন কালেক্টরেটে এসে অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
ডিসেম্বরের গোড়ায় কলকাতার আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের পর জেলার অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সঙ্গেই মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালটিও যৌথ ভাবে পরিদর্শন করেছিল দমকল ও স্বাস্থ্য দফতর। পরিদর্শন শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঠিক কী কী করতে বলা হয়েছিল, সেই কাগজপত্রই জেলাশাসক দেখতে চেয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। অনেকে মনে করছেন, এই পদক্ষেপ থেকেই স্পষ্ট, জেলা স্বাস্থ্য দফতর রবীন্দ্রনগরের হাসপাতালটির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে ‘লঘু’ করে দেখাতে চাইছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা জেলা প্রশাসন গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। |
মেদিনীপুর আদালতে অভিযুক্ত অলোক ঘোষ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
গত বুধবার রবীন্দ্রনগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আমরি-র মতো ওই হাসপাতালেরও বেসমেন্টেই আগুন ধরে। পরে সেখান থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক ছড়ায় রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনেদের মধ্যে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। উদ্ধার কাজ শুরু হয়। শেষমেশ ওখানে ভর্তি সব রোগীকেই উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শহরের কয়েকটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য, বুধবার সকালে না হয়ে এমন ঘটনা যদি রাতে ঘটত, তা হলে আরও বড় বিপদ হত। বুধবার রাতেই ৪ হাসপাতাল কর্তা পীযূষ পাল, অলোক ঘোষ, পার্থসারথী মণ্ডল ও মনোজ পতি-কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হলে অলোক ঘোষকে ৩ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজত ও বাকি ৩ জনকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন মেদিনীপুরের সিজেএম। পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে রবিবারই অলোক ঘোষকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিচারক ফের সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। সেই মতো এ দিন দুপুরে ৪ হাসপাতাল কর্তাকেই সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। শুরুতেই অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। পরে সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে সপ্তাহে এক দিন কোতোয়ালি থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের হাজিরা দিতে হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে চলতি সপ্তাহেই মেদিনীপুরে আসবে ফরেন্সিক দল। হাসপাতালের বেসমেন্টে দাহ্য-বস্তু মজুত করা ছিল বলে অভিযোগ। যার জন্যই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরি-র ঘটনার পর কেন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল না, সেই প্রশ্ন রয়েইছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে বেসমেন্টে স্টোররুম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা না হলেও রবিবার আদালতে যে পুলিশ-রিপোর্ট জমা পড়েছে, সেখানে বেসমেন্টে দু’টি স্টোর-রুম থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই রুমে কী কী মজুত থাকত, তার কোনও উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ১৭টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর এর মধ্যে কেন একটি সিলিন্ডারও ব্যবহার করা হল না, স্বাভাবিক ভাবে সে প্রশ্নও উঠেছে। শুনানি চলাকালীন সোমবার এই প্রশ্ন তোলেন বিচারকও। এ দিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে হাসপাতালটির বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য জানতে চান অতিরিক্ত জেলাশাসক। জানা গিয়েছে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জেলাশাসকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। |