সরকারি অনুমতি ছাড়াই রক্তদান শিবির করে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে রক্ত পাঠানোর অভিযোগ উঠল আসানসোলের একটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে। বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সরকারের আগাম অনুমতি নিয়ে তবেই রক্তদান শিবির করা যায়। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমও রক্তদান শিবির করতে পারে। তবে তার জন্য সরকারি অনুমতি নিতে হয়। সংগৃহীত রক্ত সরকারি বা সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাঙ্কে জমা দিতে হয়।”
ওই নিয়ম না মেনেই গত রবিবার আসানসোলের কোর্ট রোডে স্থানীয় পুজো কমিটি আয়োজিত রক্তদান শিবির হয়েছে বলে অভিযোগ। আসানসোল মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ বলেন, “আমাদের অনুমতি ছাড়াই ওই শিবির করা হয়েছে। এটা অবৈধ। কী করে এমন হল, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” আসানসোল ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিক শ্যামল সান্যালও বলেন, “ওই রক্তদান শিবিরের আগাম খবর আমাদের কাছে ছিল না। সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। আমাদের অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ ভাবে রক্তদান শিবির করা যায় না।”
অভিযুক্ত পুজো কমিটির কর্তারা অবশ্য দাবি করেন, এই সব ‘নিয়মকানুন’ তাঁদের জানা নেই। সে কারণেই ৪৩ বোতল রক্ত সংগ্রহ করে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং বাঁকুড়া শহরের এক নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে। কমিটির উপদেষ্টা সুব্রত দত্তের দাবি, “একটি বেসরকারি হাসপাতাল আমাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির ও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা তা আয়োজন করেছি মাত্র। এত নিয়ম-নীতি আমরা জানি না। স্বাস্থ্য দফতর জানতে চাইলে পরিষ্কার করে সব জানিয়ে দেব।”
রক্তদান শিবিরে সংগৃহীত রক্ত কি সরাসরি নার্সিংহোম নিতে পারে?
সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা সৌরেন্দ্রনাথ গুছাইত বলেন, “নার্সিংহোম বা হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকলে এক মাত্র সে ক্ষেত্রেই তারা সংগৃহীত রক্ত নিজেরা রাখতে পারে। অন্যথায় তা বেআইনি।” দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার এস সারেঙ্গির দাবি, “বাঁকুড়ায় আমাদেরই সহযোগী এক নার্সিংহোমে ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। সব নিয়ম মেনে সেখানেই রক্ত জমা করা হয়েছে।” বাঁকুড়ার সেই নার্সিংহোমের কর্ণধার সুজিত দত্ত বলেন, “আসানসোল থেকে আমাদের রক্ত পাঠানো হয়েছে। তা রোগীদের দেওয়া হবে, আবার কেউ ব্লাড ডোনর্স কার্ড দেখিয়েও রক্ত নিতে পারেন।”
ঘটনাচক্রে, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ওই স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও রক্তদান শিবিরে হাজির ছিলেন। এ দিন মলয়বাবু বলেন, “সব নিয়মকানুন মানা হয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখব।” তাপসবাবুর বক্তব্য, “বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।” আসানসোলের মহকুমাশাসক তথা মহকুমা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি সন্দীপ দত্ত জানান, তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইবেন। বর্ধমানের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-৩ নিশীথ মণ্ডল বলেন, “ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্ট হাতে পেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” |