২০০৭-এর ৪ নভেম্বর খেজুরির কলাগেছিয়ায় লক্ষ্মণ শেঠের উপস্থিতিতেই দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছিল সিপিএম। তদন্ত-দলের সঙ্গে সোমবার সেই কলাগেছিয়া লোকাল কমিটির অফিসে পৌঁছে ধৃত সিপিএম নেতা অশোক গুড়িয়া এমনই কবুল করেছেন সিআইডি-র কাছে। এই ‘স্বীকারোক্তি’ ‘তাৎপর্যপূণর্’ বলে দাবি সিআইডি-র। কেননা, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডের চার্জশিটে সিআইডি-র দাবি, কলাগেছিয়ার বৈঠক থেকেই ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উপরে আক্রমণের ছক কষা হয়। |
কলাগেছিয়ায় সিপিএম অফিসের সামনে এ দিন এক সিআইডি অফিসারের প্রশ্নের জবাবে অশোকবাবুকে বলতে শোনা যায়, “হ্যাঁ, সেই ৪ নভেম্বর আমরা এখানে মিটিং করেছিলাম। লক্ষ্মণবাবুও (শেঠ) ছিলেন।” এর পরেই তাঁকে নিয়ে সিপিএম পার্টি অফিসের ভিতরে চলে যায় সিআইডি-র দল। পরের কথোপকথন শোনা যায়নি। অশোকবাবুর সঙ্গেই সিআইডি হেফাজতে থাকা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অমিয় সাউ অবশ্য দাবি করেন, তিনি কলাগেছিয়া পার্টি অফিসে কখনও আসেননি। বৈঠকের কথাও তাঁর জানা নেই। এমনকী, ওই অফিসের ভিতরে ঢুকতেও প্রাথমিক ভাবে অস্বীকার করেন তিনি।
তবে এ দিন বিকেলে তাদের আরও এক ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি’ ঘটেছে বলেও দাবি সিআইডি-র। লক্ষ্মণ শেঠের ‘অঙ্গুলিহেলন’ ছাড়া যে নন্দীগ্রাম-খেজুরিতে কিছু ঘটা অসম্ভব ছিল, গোয়েন্দা অফিসারদের কাছে তেমনই দাবি করেন একদা লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ হলদিয়ার বহিস্কৃত সিপিএম নেতা অশোক পট্টনায়ক। ২০১০-এ বহিস্কারের আগে অশোকবাবু ছিলেন হলদিয়ায় দলের জোনাল সম্পাদক ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য। তাঁকে এ দিন হলদিয়ার দুর্গাচক থানায় ডেকে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা অফিসারেরা। |
এ দিন সকালে অশোক গুড়িয়াকে সিআইডি নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। চলে জেরা-তল্লাশি। সিআইডি কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে। পরে কলকাতায় সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) কে জয়রামন বলেন, “ওই সব নথিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যা তদন্তের স্বার্থে ব্যবহার হবে।”
পরে সিআইডি-দল নন্দীগ্রামের সামসাবাদে এক ‘ফেরার’ সিপিএম নেতা অশোক বেরা, গোকুলনগরের করপল্লির কাছে আর এক ‘ফেরার’ সিপিএম কর্মী শক্তিপদ পড়ুয়ার বাড়ি যায়। তার পরে রওনা হয় খেজুরির শেরখাঁচকে জননী ইটভাটার দিকে। |
জননী ইটভাটায় অশোকবাবু-অমিয়বাবুদের কিছু ক্ষণ জেরা করা হয়। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় আমড়াতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। পরে খেজুরি থানা হয়ে কলাগেছিয়া ও হেঁড়িয়ায় সিপিএম অফিসে পৌঁছয় সিআইডি। হেঁড়িয়া জোনাল পার্টি অফিসে পৌঁছেও অশোকবাবু সিআইডি-কে জানান, ২০০৭-র ৪ নভেম্বর যুব সংগঠনের ব্যানারে শিবপ্রসাদ ইনস্টিটিউটের মাঠে সমাবেশ হয়। হেঁড়িয়া জোনাল অফিসেও তাঁরা আলাপ-আলোচনার জন্য এসেছিলেন। ঘটনা হল, ওই যুব সমাবেশের ‘আড়ালে’ জড়ো হওয়া ‘বহিরাগতেরা’ স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে খেজুরির দিক থেকে নন্দীগ্রামে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
দিনভর তল্লাশি-জিজ্ঞাসাবাদের পরে রাতে দুই সিপিএম নেতাকে রাখা হয়েছে হলদিয়াতেই। আজ, মঙ্গলবার হলদিয়া আদালতে তাঁদের সঙ্গেই হাজির করানোর কথা ভবনীভবনে বন্দি লক্ষ্মণ শেঠকেও।
|