|
|
|
|
২ এপ্রিল ফের সর্বদল বৈঠক |
ঝাড়গ্রাম জেলায় সম্মত বামেরা চায় ৩ মহকুমা |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনে সম্মতি দিয়েই সম্ভাব্য নতুন জেলায় দু’টির বদলে তিনটি মহকুমা গঠনের প্রস্তাব দিল দুই বাম-শরিক সিপিএম ও সিপিআই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে এই দুই দল যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, সেখানে ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুরের পাশাপাশি শিলদা মহকুমা গঠনের কথা বলা হয়েছে। যদিও কোন মহকুমায় কতগুলি ব্লক থাকবে, ব্লকের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা কী হবে এবং সেগুলি কী কীতা নিয়ে দুই শরিকের প্রস্তাবে কিছু ফারাকও রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, সিপিএমের প্রস্তাবে গোপীবল্লভপুর মহকুমার মধ্যে সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর ১ ও ২, নয়াগ্রাম ১ ও ২ ব্লক, শিলদা মহকুমার মধ্যে লালগড়, বিনপুর, বেলপাহাড়ি এবং ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে জামবনি, মানিকপাড়া, চন্দ্রি ব্লক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্য দিকে, সিপিআইয়ের প্রস্তাবে গোপীবল্লভপুর মহকুমার মধ্যে গোপীবল্লভপুর ১ ও ২, চাঁদাবিলা ও বালিগেড়িয়া (নয়াগ্রাম) ব্লক, শিলদা মহকুমার মধ্যে বেলপাহাড়ি, বিনপুর ও জামবনি ব্লক এবং ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে লালগড়, মানিকপাড়া, ঝাড়গ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লক অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সিপিএমের প্রস্তাবিত মানিকপাড়া এবং চন্দ্রি বা সিপিআইয়ের প্রস্তাবিত চাঁদাবিলা, মানিকপাড়া-র ব্লক হিসাবে এখন অস্তিত্ব নেই। সেই হিসাবে এই দুই বাম-শরিক নতুন ব্লক গঠনেরও প্রস্তাব রেখেছে। সেই সঙ্গে এখনকার ব্লকগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসেরও প্রস্তাব। অন্য বাম-শরিক আরএসপি-ও তিনটি মহকুমার পক্ষে। তবে তাঁদের প্রস্তাব, মহকুমা হোক--ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং বিনপুর। বহুজন সমাজ পার্টিও আরএসপি-র মতোই ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর এবং বিনপুর মহকুমার দাবি জানিয়েছে। বিজেপি আবার ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুরএই দুই মহকুমাতেই সন্তুষ্ট হলেও গোপীবল্লভপুর পুরসভা গঠনের দাবি জানিয়েছে। নতুন কয়েকটি থানা গঠন এবং ব্লক-সীমার পুনর্বিন্যাসও চেয়েছে তারা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন নিয়ে গত ৫ মার্চ জেলাস্তরে এক সর্বদল বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসনের তরফে যে প্রাথমিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছিল, তাতে ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে দু’টি মহকুমা থাকবে বলে জানানো হয়েছিল--ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর। ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, এখন যে আটটি ব্লক ও একটি পুর-এলাকা ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে রয়েছে, সেগুলিই নতুন জেলার মধ্যে থাকবে। তবে বিনপুর ১ ও বিনপুর ২ ব্লক ভেঙে নতুন লালগড় ব্লক গঠন করা হবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে থাকবে ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড় ও জামবনি ব্লক। সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকা। গোপীবল্লভপুর মহকুমার মধ্যে থাকবে গোপীবল্লভপুর ১, গোপীবল্লভপুর ২, সাঁকরাইল ও নয়াগ্রাম ব্লক।
৫ মার্চের সর্বদল বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রস্তাব-মতামত লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসনকে জানাবে। জেলা প্রশাসন আবার সেই প্রস্তাব-মতামত রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দেবে। এর পর ফের সর্বদল বৈঠক হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২ এপ্রিল জেলাস্তরে ফের সর্বদল বৈঠক হতে চলেছে। তার আগে আগামী ২৭ মার্চ ঝাড়গ্রামে এক প্রশাসনিক বৈঠকে বর্তমান ঝাড়গ্রাম মহকুমার অন্তর্গত প্রতিটি ব্লকের বিডিও এবং থানাগুলির আইসি-ওসিদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, বিএসপি এবং বিজেপি তাদের যে-সব মতামত-প্রস্তাব জানিয়েছে, সেগুলি সম্পর্কেও ২৭ মার্চের বৈঠকে বিডিও এবং থানার আইসি-ওসিদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।
এ দিকে, জেলাস্তরের আগের সর্বদল বৈঠকে ডাক না পেয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জঙ্গলমহল এলাকার আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডী দলগুলি। তাদের বক্তব্য, আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে নতুন জেলা গঠন হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আগে স্থানীয় মানুষের মতামত শোনা জরুরি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর--এই তিন জেলার ২২টি ব্লক নিয়ে ঝাড়খণ্ডী দলগুলির স্বশাসিত পরিষদ গঠনের দাবি দীর্ঘ দিনের। ফের সেই দাবিও উঠেছে। বিশেষত, পাহাড়ে জিটিএ গঠন জঙ্গলমহলেও স্বশাসিত পরিষদের দাবিকে চাঙ্গা করেছে। ঝাড়খণ্ড আন্দোলন সম্বন্বয় মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক সন্তোষ রাণা-র বক্তব্য, জেলা ভাগ করার আগে স্থানীয় মানুষের সমস্যা বুঝতে হবে।
আবার অনেকের মতে, জেলা ভাগ করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। নতুন জেলা হলেই গরিব মানুষের দুঃখ দূর হবে না। ভাগের চেয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে ‘পিছিয়ে থাকা’ অবস্থা কাটানোই বেশি জরুরি। আবার এমনও মত রয়েছে যে, নতুন জেলা যদি করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে জেলার নামের সঙ্গে ‘মেদিনীপুর’ নাম-মাহাত্ম্যও যুক্ত থাক। মেদিনীপুরের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারের যে শ্লাঘা যুক্ত, তা হারাতে চান না অনেকে। এই ভাবাবেগ থেকে কেউ কেউ পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রস্তাবিত দু’টি ভাগের জন্য ‘মেদিনীপুর’ এবং ‘পশ্চিম মেদিনীপুর’ নামকরণের দাবি করেছেন। |
|
|
|
|
|