দোলের দিন বিকেলে কল খুলতেই বেরিয়েছিল রঙিন জল। কয়েক দিন পরে এল দুর্গন্ধে ভরা জল। তারও কয়েক দিন পরে জলের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছিল নানা রকম পোকামাকড়।
হাওড়া পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে যাওয়ায় গত ১৫ দিন ধরে এমনই হাল হয়েছে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ওই বিষাক্ত জল খেয়ে অন্তত ২০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কিত বাসিন্দারা ওই জল খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় সংক্রমণ আর বেশি ছড়ায়নি। তবে, গোটা এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা ঘটনাটি জানিয়ে পুরসভার কাছে বারবার দরবার করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। |
রবিবার গভীর রাতে ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা, মধ্য হাওড়া আইএনটিইউসি-র সভাপতি শৈলেশ রায় সেই জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। সোমবার দুপুরে ওই এলাকার আইএনটিইউসি-সমর্থকেরা অসুস্থ শৈলেশবাবুকে নার্সিংহোম থেকে স্ট্রেচারে করে হাওড়া পুরসভায় নিয়ে এসে মেয়রের ঘরের মেঝেতে শুইয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
দুপুরে পুরসভায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়র তখনও আসেননি। তাঁর ঘরের ভিতরে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে শৈলেশবাবুকে। সেখানে শুয়েই শৈলেশবাবু বলেন, “আমি বারবার স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুরসভার মেয়র পারিষদদের জানিয়েছিলাম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ কিছু করেননি। ওই দূষিত জল খেয়ে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
এলাকার বাসিন্দা সুনীল রায় বলেন, “ওই ওয়ার্ডের ভগবান গাঙ্গুলি লেন, রজনীকুমার সেন লেন, চিন্তামণি দে রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলের সঙ্গে নিত্যদিন পোকা বেরোচ্ছে। জল বাইরে থেকে এনে বা কিনে খেতে হচ্ছে আমাদের।”
বিক্ষোভ চলাকালীন পুরসভায় আসেন মেয়র মমতা জয়সোয়াল। ঘরে ঢুকতেই তাঁর সামনে একটি কাচের গ্লাসে আনা পোকা ভর্তি জল তুলে ধরেন এলাকার লোকজন। মেয়র অসুস্থ শৈলেশবাবুর সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দিলে বিক্ষোভকারীরা চলে যান।
পরে মেয়র জানান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে জল দূষিত হওয়ার খবর তাঁর জানা ছিল না। খবর পেয়েই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে যেতে বলেছেন। যেখান থেকে এই দূষণ হচ্ছে, তা খুঁজে বার করে অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু কেন ঘটল এই ঘটনা?
হাওড়ার মেয়র বলেন, “ওই ওয়ার্ডে বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি ভাবে মেন পাইপ লাইনে ফুটো করে কলের সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। সম্ভবত সেখান দিয়েই কোনও ভাবে নর্দমার জল মিশে যাওয়ায় এই দূষণ ছড়াচ্ছে। আমি এ বিষয়ে পুরসভার কমিশনারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।” |