কোনও ক্ষেত্রে হয় তো উদ্ধারকাজ চলার সময় কাউকে উঁচু নির্মাণ থেকে লাফাতে হবে, এ জন্য দরকার লাফানোর সরঞ্জাম (জাম্পিং শিট)। কিন্তু এই সরঞ্জাম গোটা হুগলি জেলাতেই নেই। শাটার-বন্ধ কোনও ঘর বা গুদামে আগুন লাগলে শাটার কাটার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম (কাটিং গিয়ার) থাকার কথা। এই সরঞ্জামও নেই হুগলি দমকলের ভাঁড়ারে। অগত্যা, শাবল বা হাতুড়ি দিয়েই সেই কাজ করতে বাধ্য হন দমকলের কর্মীরা।
‘নেই’-এর তালিকায় আরও এক সংযোজন কৃত্রিম ভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার সরঞ্জাম (ব্রিদিং অ্যাপারেটাস)। বহু ক্ষেত্রেই আগুন নেভাতে গিয়ে প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করতে হয় দমকলকর্মীদের। শ্বাসকষ্ট হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে দমকলকর্মীদের কাছে ‘ব্রিদিং অ্যাপারেটাস’-এর বিকল্প হল ভিজে গামছা অথবা রুমাল। ধোঁয়া মোকাবিলায় তা বেঁধেই কাজ করতে হয়। আগুন নেভানো হোক অথবা কোনও গ্যাসের মোকাবিলা ফায়ার স্টেশন থেকে বেরনোর সময় গামছা নিতে ভোলেন না দমকলের কর্মীরা। কিছু দিন আগে চণ্ডীতলার গরলগাছায় একটি গেঞ্জি কারখানায় আগুন লেগেছিল। সেখানে প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করতে অসুবিধায় পড়েন দমকলকর্মীরা। শেষমেশ কারখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া গেঞ্জির কাপড় মুখে বেধে ৬-৭ ঘণ্টা আগুন আর ধোঁয়ার সঙ্গে লড়াই চালাতে হয়। |
দমকলের অনেক কেন্দ্রেই কর্মীদের আবাসনগুলির লজঝড়ে দশা। জেলা সদর চুঁচুড়ায় হুগলি দমকল কেন্দ্র এবং আবাসন রীতিমতো জীর্ণ হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের চাঙড় খসে পড়ছে। দেওয়াল ফাটিয়ে বাসা বেধেছে বট-অশত্থের সারি। দরজা-জানলা ভাঙা। বর্ষায় জল জমে যায়। ওই অবস্থাতেই কোনও রকমে থাকতে হয় কর্মীদের। উত্তরপাড়াতেও দমলক কেন্দ্রের অবস্থা তথৈবচ। কলকাতা পুরসভার প্রায় সাড়ে ৪শো বিঘা জমি রয়েছে উত্তরপাড়ায়। ওই জমিতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিছুটা জমিতে নতুন দমকল কেন্দ্র গড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। তবে, কবে সেই কেন্দ্র হবে, তা জানেন না কেউ।
ত্রিবেণীতে বিটিপিএসের কাছে রয়েছে বাঁশবেড়িয়া দমকল কেন্দ্র। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট জায়গায় গড়ে উঠেছে কেন্দ্রটি। ফলে, গাড়ি রাখার জায়গা থেকে শুরু করে কর্মীদের হাত-পা ছড়িয়ে থাকার জায়গা সবেতেই অভাব স্থান সঙ্কুলানের। ত্রিবেণী, বাঁশবেড়িয়া, মগরার পাশাপাশি পেলবা-দাদপুর ব্লকের একাংশ এবং পাণ্ডুয়া, বলাগড় বিস্তীর্ণ এলাকায় কাজ করতে হয় এই কেন্দ্রকে। এই কেন্দ্র থেকে ত্রিবেণী স্টেশনের পাশ দিয়ে মূল রাস্তায় উঠতে হয় দমকলের গাড়িগুলিকে। কিন্তু রাস্তাটি বেশ সংকীর্ণ। ত্রিবেণী পোস্ট অফিস মোড়ে ঘিঞ্জি রাস্তায় সাইকেল, রিকশার চাপ সরিয়ে পথ করে নিতে ঘাম ছুটে যায় দমকলের গাড়ির। এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে, এই মোড় পেরোতে বহু সময় লেগে যায় দমকলেরও। ঘণ্টা বাজিয়েও কোনও কাজ হয় না। বর্ধমান লাগোয়া পাণ্ডুয়া এবং বলাগড়ে দমকল কেন্দ্রের দাবি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখান থেকে বাঁশবেড়িয়া বেশ দূরে। ফলে দমকল পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। আরামবাগেও দমকল কেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। |
কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে হেলমেট, গামবুট এমনকী ইউনিফর্ম নিয়েও। অবশ্য ইউনিফর্ম কিনেই পড়েন অনেকে। সরকারি ইউনিফর্মের মান নিয়ে মুচকি হাসেন সকলে। বছরের পর বছর ধরে। যদিও, চাকরির বাধ্যবাধকতায় মুখে রা কাড়েন না কেউ। দফতরে কর্মী সংখ্যাও অপ্রতুল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিভাগীয় সদরে ফায়ার অপারেটর থাকার কথা ৮০ জন। যদিও আছেন ৫০-৫২ জন। ১১ জনের পরিবর্তে অফিসার রয়েছেন মাত্র ৬ জন। ডিভিশনাল অফিসার সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষাল ‘এফ’ ডিভিশনের পাশাপাশি ‘জি’ (দুর্গাপুর) ডিভিশনেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
এই বিষয়ে রাজ্য দমকল বিভাগের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “পরিকাঠামো উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক নতুন পরিকল্পনা হচ্ছে। সরজ্ঞাম, গাড়ি সবক্ষেত্রেই পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চলছে। আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে সাধারণ মানুষের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কলকাতা বা রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় বাড়ি বা ব্যবসা ক্ষেত্রে কেউই কোনও নিয়ম মানছেন না। বাড়ছে বিপদ।”
|