বকেয়া ঋণ না-মেটানোর দায়ে ডানলপকে লিকুইডেশনে পাঠাল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এই রায় দিয়ে ডানলপে অস্থায়ী (প্রভিশনাল) লিকুইডেটর নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন। এ দিন হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পর রুইয়া গোষ্ঠীর হাতে আপাতত ডানলপ পরিচালনার ক্ষমতা রইল না। ডানলপ কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবেন।
মুদ্রা কোর্টস নামে একটি সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে জানায়, ডানলপের কাছ থেকে তারা ২ কোটি টাকা পায়। ২০০৯ সাল থেকে ডানলপ এই টাকা মেটাচ্ছে না। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি ডানলপকে লিকুইডেশনে পাঠানোর রায় দেন। অর্থাৎ, এ বার ডানলপের সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনাদারের টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করবেন হাইকোর্ট নিযুক্ত লিকুইডেটর।
এ দিন বিচারপতি শুধু মুদ্রা কোর্টসের মামলার সূত্রেই তাঁর রায় দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ডানলপ কর্তৃপক্ষ টাকা মেটাচ্ছেন না বলে অন্য যে ১১টি সংস্থা মামলা করেছে, সেই সব মামলার শুনানি এক সঙ্গে হবে।
ডানলপে লিকুইডেটর নিয়োগ প্রসঙ্গে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ওই সংস্থায় লিকুইডেটর বসুক, রাজ্য সরকার তা চায়নি। আমরা চেয়েছিলাম রুইয়ারা কারখানা চালিয়ে কর্মীদের বেতন দিক, বকেয়া পাওনাগন্ডা মেটাক। আমরা এখনও চাই কারখানা ফের চালু হোক।” রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্রও আদালতকে বলেন, রাজ্য সরকার ডানলপ কর্তৃপক্ষকে কারখানা চালানোর জন্য সর্বপ্রকার সহায়তা দিতে রাজি। তবে জমি বিক্রি করা যাবে না।
শ্রমমন্ত্রী এ দিন বলেন, “ডানলপের পাওনাদার অনেক। কিন্তু সংস্থাটি ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং’-এর সুবিধা পাচ্ছিল বলে এত দিন মামলা হচ্ছিল না। গত অগস্ট মাসে ওই সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই এ বার মামলা করছেন পাওনাদারেরা।” ২০০৯ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ডানলপকে ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং’ হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, ডানলপ কর্তৃপক্ষ যাতে পাওনাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পান। কারখানা চালু রাখার স্বার্থেই রাজ্য সরকার এই সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ফল কিছু হয়নি।
ডানলপের এই দশার জন্য শ্রমিকরা দায়ী নন, জানিয়ে পূর্ণেন্দুবাবু এ দিন বলেন, “আমাদের রাজ্যে বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকরা ভাতা পান। তবে তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। ডানলপের শ্রমিকদের ওই ভাতা দেওয়া যায় কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখব।” পাশাপাশি ডানলপের বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ডানলপের বিরুদ্ধে আর যে-সব পাওনাদার সংস্থা মামলা করেছে, তাদের অধিকাংশই দক্ষিণ ভারতের। কাঁচামাল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করেছিল তারা। আদালতের কাছে তারা অভিযোগ করে, ২০০৯ থেকে পাওনা টাকা শোধ করছে না ডানলপ।
রুগ্ণ ডানলপ সংস্থা ২০০৫ সালে হাতে নিয়েছিল রুইয়া গোষ্ঠী। রাজ্য সরকার, ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন স্তরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংস্থাটি চালু হয়। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। ফলে গত সাত বছরে কারখানা বেশ ক’বার বন্ধ হয়েছে, আবার খুলেছে। ২০১১ সালের ৮ অক্টোবর সাহাগঞ্জের কারখানায় শেষ বারের মতো সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ জারি করেন কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই কারখানা বন্ধ। কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। |