প্রবন্ধ ১...
বাস্তবে যা করা সম্ভব, বাজেট সেটাই করেছে
র্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে এই বছরের বাজেট পেশ করলেন। শেষ কয়েকটি ত্রৈমাসিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বৃদ্ধির হার যে ভাবে হ্রাস পেয়েছে, বিশেষত শিল্প-উৎপাদনের ক্ষেত্রে, তা খুবই চিন্তার কারণ। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে ঠিকই বলেছেন কৃষি এবং পরিষেবা ক্ষেত্র এই অর্থবর্ষে একেবারে ঠিক ভাবে বেড়েছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হারে যে ধাক্কা লেগেছে, তার পুরোটাই শিল্প-উৎপাদনের কারণে।
এই প্রেক্ষিতে দেখলে, এই বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কয়েকটি সুসংবাদ রয়েছে। রাজকোষ ঘাটতি কমানোর যে প্রতিশ্রুতি অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটি রাখতে পারলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকার জোগান বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫.১ শতাংশে বেঁধে রাখা হবে। হারটি একটু বেশি, কিন্তু রাজকোষ ঘাটতি কমানোর প্রত্যাশিত পথে ফিরে আসতে খানিক সময় লাগবে বইকি।
রাজস্ব আদায়ের জন্য অর্থমন্ত্রী উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছেন এবং হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে আর সব পরিষেবা ক্ষেত্রে পরিষেবা কর আরোপ করার সিদ্ধান্ত করেছেন। দুটি করের হারই ১২ শতাংশ ধার্য হয়েছে। বাজেটের আগে সি আই আই-এর পক্ষ থেকে এই হার ১০ শতাংশে বজায় রাখার দাবি জানানো হয়েছিল, কারণ গোটা দুনিয়ার আর্থিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল হয়নি। আমরা রাজস্ব বাড়ানোর কয়েকটি বিকল্প পথের কথা বলেছিলাম। যেমন, করের পরিধি বিস্তৃত করা, কর বিষয়ক মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করা। আশা করি, পরোক্ষ কর বৃদ্ধির ফলে যে মূল্যস্ফীতি হবে, বেসরকারি ক্ষেত্রকে যে সুবিধাগুলি দেওয়া হয়েছে, তাতে সেই মূল্যস্ফীতির কু-প্রভাব আংশিক ভাবে হলেও এড়ানো যাবে। বিলগ্নিকরণ, ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস ইত্যাদিও রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করি।
এই বাজেটের দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, যেমন কৃষি, পরিকাঠামো এবং বিদ্যুৎ, সেই উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে অবশ্যই বিনিয়োগ প্রয়োজন। এখনও এই ক্ষেত্রটির ওপর দেশের ৫২ শতাংশ মানুষ নির্ভরশীল। দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়লে খাদ্যের নিশ্চয়তাও সহজ হয়। কৃষকদের জন্য ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার ওপর, যে কৃষকরা সময়ে টাকা ফেরত দেবেন, তাঁদের জন্য সুদের হার কমানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতি জরুরি সিদ্ধান্ত। এর ফলে, ফসল ঘরে তোলার পরে কৃষকদের তৎপরতার মাত্রা বাড়বে।
এই বাজেটে কৃষির বেশ কয়েকটি জরুরি বিষয় ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং-এর আওতায় এসেছে যেমন সেচ, কৃষিপণ্যের বাজারের পরিকাঠামো, মাটি পরীক্ষার গবেষণাগার, সার ইত্যাদি। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে ‘জাতীয় মিশন’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কৃষি এবং শিল্পের মধ্যে যোগসূত্রটি দৃঢ়তর হবে। কৃষি-সংক্রান্ত পরিষেবায় মূলধনী বিনিয়োগ করলে সে ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, আশা করা যায়, কৃষিক্ষেত্রে অনেক বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ হবে। গুদাম এবং তৎসংক্রান্ত পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রেও গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন ভাণ্ডার থেকে ৫০০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লবের প্রকল্পটি সফল হওয়ায় এই বছর সেই প্রকল্পের ক্ষেত্রে আরও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পূর্ব ভারতের জমি স্বভাবতই উর্বর। এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিনিয়োগ হলে তা গোটা দেশের, এমনকী গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার খাদ্য ভাণ্ডারে পরিণত হতে পারে।
এই বাজেট কৃষিক্ষেত্রের পক্ষে আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজেটে কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন গবেষণা প্রকল্পকে আকৃষ্ট করতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সাতটি কৃষি গবেষণা উৎকর্ষ কেন্দ্রের জন্যও অনেকটা অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থায় গবেষণার ক্ষেত্রে বিনিয়োগে যে ২০০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা এই বছর ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল, অর্থমন্ত্রী তাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত করেছেন। এই সিদ্ধান্তগুলির ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। ভারতে গবেষণাক্ষেত্রে মানবসম্পদের অভাব নেই। সরকারি সহায়তায় ভারত এক দিন গোটা দুনিয়ার গবেষণা-রাজধানী হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও নজর দেওয়া হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানে ব্যয়বরাদ্দ বেড়েছে ২২ শতাংশ, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। প্রায় ৬০০০ আদর্শ বিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে। এর ২৫০০ তৈরি হবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে। এই মডেল স্কুলগুলির গুণগত মানের উদাহরণ শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনকে ১০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে আগামী ১০ বছর প্রায় সাড়ে ছ’কোটি ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ পাবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি অন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পে যে টাকা ব্যয় করবে, তা করের আওতার বাইরে থাকবে।
পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য, বিশেষত বিদ্যুৎ, অসামরিক বিমান পরিবহণ, সড়ক এবং হাইওয়ের ক্ষেত্রে, আয়কর ছাড়যুক্ত ঋণপত্রের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৬০,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। পরিকাঠামো নির্মাণের যে প্রকল্পগুলি এখনই চলছে, তার সঙ্গে এই নতুন ব্যবস্থার সাযুজ্যের ফলে এই ক্ষেত্রটি গতিশীল হয়ে উঠবে বলে আমরা আশা করি। যে কারণগুলির জন্য পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ গতি হারায়, আশা করব, দেশের সরকার বাজেটের বাইরেও সেই সমস্যাগুলি সমাধান করতে সচেষ্ট হবে।
সব মিলিয়ে, এই বাজেট বাস্তবমুখী। যে কাজগুলো সত্যিই করা সম্ভব, এই বাজেটে সেগুলির কথাই বলা হয়েছে। দেশে দারিদ্র দূরীকরণ এবং সর্বজনীন উন্নয়নের জন্য যে উঁচু বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে পৌঁছনো প্রয়োজন, দেশের শিল্পমহল সরকারের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়।

সি আই আই-এর মহানির্দেশক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.