বিশেষ সম্মান বাংলাদেশের
প্রয়াত মা রোশেনারার হয়ে পুরস্কার নেবেন মুকুল
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষকে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়ে সাহায্য করা রোশেনারা বেগম সাংমাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করছে বাংলাদেশ। আগামী কাল, ২৭ মার্চ বাংলাদেশ সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, রোশেনারা বেগম সাংমার ছেলের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন।
বছর তিনেক আগে রোশেনারাদেবী মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তাঁর আক্ষেপ ছিল, বাংলাদেশ তাঁকে ভুলে গিয়েছে। শেষ অবধি গত বছর রোশেনারাদেবীর খোঁজে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা মেঘালয়ে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে, রোশেনারাদেবী ও তাঁর ছোট্ট সন্তানের ব্যাপারে খোঁজখবর করেন তাঁরা। তখনই প্রকাশ হয়, রোশেনারার সেই ছেলে মুকুল, এখন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানাতে যে জাতীয় কমিটি গড়া হয়েছে তার আহ্বায়ক তথা বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি রোশেনারাদেবীকে সম্মান দেওয়ার কথা জানিয়ে, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছেন। তিনি লেখেন, “মুক্তিযুদ্ধে ভিটেছাড়া অসহায় মানুষকে কেবল খাদ্য নয়, নিজের জমি থাকবার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন রোশেনারাদেবী। অসহায় বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সাহায্য করেন। তাঁর অবদান ভোলার নয়।”
মুকুলবাবু জানান, অসমের বনগাঁওয়ের বাঙালি মুসলিম পরিবারের মেয়ে রোশেনারা ও গারো খ্রিষ্টান বিনয়ভূষণ মোদক মারাক, গুয়াহাটির কটন কলেজে পড়বার সময় পরস্পরের প্রেমে পড়েন। পরিবার, সমাজ, ধর্মের বিভেদ ঘুচিয়ে রোশেনারাদেবী গারো সমাজকে আপন করে নিয়েছিলেন। স্থানীয় স্কুলে পড়ানোও শুরু করেন। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় খানসেনাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত শরণার্থীরা আমপাতির দিকে পালিয়ে আসতে থাকেন। ভারতীয় সাহায্য আসার আগেই সম্পদশালী রোশেনারাদেবী শরণার্থীদের খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করেন। তাঁর জমিও ‘রিফিউজি’-দের জন্য ছেড়ে দেন তিনি। প্রতিদিন সকালে পাঁচ বছরের ছেলের হাত ধরে, পরিচারকদের নিয়ে নিজে শিবিরে শিবিরে ঘুরে শরণার্থীদের খবর নিতেন রোশেনারা বেগম। দরকার হলেই যে কেউ তাঁর বাড়িতে যেতে পারতেন। শরণার্থী শিবিরে মড়ক ছড়ানোর সময় তিনি নিজে শিবিরে ঘুরে ঘুরে রোগীদের শুশ্রূষা করেছিলেন। ভারত সরকার সাহায্য পাঠাবার পরেও রোশেনারাদেবী নিজের সাহায্য চালিয়ে যান। এমন কী তাঁর ছেলে মুকুলও শরণার্থীদের সঙ্গে বসে পাত পেড়ে খেত।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে, ধীরে ধীরে শরণার্থীরা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে যান। ছেলে মুকুল বড় হয়ে ডাক্তার হন। মায়ের আদর্শেই বিনা পারিশ্রমিকে দরিদ্রদের চিকিৎসা করতেন তিনি। মাত্র ২৮ বছর বয়সে মুকুল সাংসদ হন। ৩৮ বছর বয়সে রাজ্যের শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শেষ অবধি ৪৫ বছরের জন্মদিনে মুকুল মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হলেন। সেটি অবশ্য রোশেনারা দেবী দেখে যেতে পারেননি।
মুকুলবাবু বাংলাদেশি প্রতিনিধি কর্নেল সাজ্জাদকে বলেন, “মৃত্যুর আগে, মা প্রায়ই দুঃখ করতেন, বাংলাদেশের কেউ তাঁকে মনে রাখেনি। চল্লিশ বছর পরে, বাংলাদেশ থেকে কেউ, আমপাতির রোশেনারা ও তাঁর ছেলেকে খুঁজতে এসেছে জানতে পারলে মা বড় আনন্দ পেতেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.