নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এত দিন অণ্ণা হজারের আক্রমণের মূল নিশানা ছিল কংগ্রেস। কিন্তু গত কাল ‘টিম-অণ্ণা’ যন্তর মন্তরের অনশন মঞ্চ থেকে জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের বিরুদ্ধে অপশব্দ ব্যবহার করায় এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হল বিজেপি-কেও। এনডিএ-র শরিক জেডিইউ-এর পাশে দাঁড়িয়ে আজ ‘টিম-অণ্ণা’কে রীতিমতো ভর্ৎসনা করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ। সমালোচনা করল গোটা সংসদও।
স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে সবথেকে খুশি কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্ব এ-ও মনে করছেন, সার্বিক ভাবে ‘টিম-অণ্ণা’ যখন রাজনৈতিক শ্রেণির তোপের মুখে, তখন সংসদে লোকপাল বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। আর সেই লক্ষ্যে বিজেপি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির সূত্র মেনে বর্তমান লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিলে সংশোধন করতেও এখন প্রস্তুত সরকার।
গত মাস তিনেক চুপচাপই ছিলেন অণ্ণা ও তাঁর সঙ্গীরা। গত কাল দিল্লির যন্তর মন্তরে একদিনের জন্য অনশনে বসেন অণ্ণা। সেখানেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমলনাথের মতো কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনা করার পাশাপাশি জেডিইউ নেতা শরদ যাদবকে ‘চোর’ বলে কটাক্ষ করেন অণ্ণা-সঙ্গীরা। সাংসদদের ‘ডাকাত’ বলে গালমন্দও করেন তাঁরা।
আজ সংসদের অধিবেশন বসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শরদ যাদব। মুখ খোলে বিজেপিও। ‘টিম অণ্ণা’র তীব্র সমালোচনা করে সুষমা বলেন, “এ ভাবে সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতাদের গালমন্দ করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ‘টিম-অণ্ণা’ সব রকমের লক্ষণরেখা পার করে ফেলছে!” একই সুরে সরব হয় জেডিইউ, সিপিএম এবং সমাজবাদী পার্টিও। সংসদের তরফে ‘টিম অণ্ণা’র বিরুদ্ধে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশের দাবিও ওঠে।
সংসদের এই সমবেত ক্ষোভে দৃশ্যতই খুশি কংগ্রেস। বিশেষ করে বিজেপি অণ্ণার সমালোচনায় মুখর হওয়ায় হাঁফ ছেড়েছে তারা। কারণ মনমোহন সিংহ-প্রণব মুখোপাধ্যায়রা গোড়া থেকেই চাইছিলেন, সব রাজনৈতিক দলই যাতে অণ্ণার সমালোচনা করে। কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই বিজেপি বা বাম নেতারা এত দিন তা করেননি।
তবে আজকের ঘটনায় কংগ্রেসের যে কিছুটা সুবিধা হয়ে গেল, তা বুঝতে পারছে বিজেপি। এমনকী সংসদে ‘টিম-অণ্ণা’ সম্পর্কে সুষমার মন্তব্যের সঙ্গে বিজেপি-র সবাই যে সহমত, তা-ও নয়। কিন্তু জোটের অঙ্কেই তাঁদের সরব হতে হয়েছে। তবে ‘টিম-অণ্ণা’ কিন্তু আজও চুপ করে থাকেনি। আজও সাংসদদের ফের সমালোচনা করেছেন তাঁরা।
আর এই পরিস্থিতিকেই কাজে লাগিয়ে সংসদে লোকপাল বিলটি পাশ করাতে সক্রিয় হতে চাইছে সরকার। সরকারের এক শীর্ষ নেতা আজ জানান, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবনে সর্বদল বৈঠকের পর বর্তমান বিলটিতে সংশোধন করতে রাজি সরকার। সরকার নিজেই রাজ্যসভায় সংশোধনী প্রস্তাব এনে বিলটির নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব দেবে। লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল-এর পরিবর্তে নতুন নাম হবে লোকপাল বিল। সেই সঙ্গে বিল থেকে লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত ধারা বাদ দেওয়া হবে। তবে একই সঙ্গে অন্য একটি প্রস্তাব এনে একটি মডেল লোকায়ুক্ত বিলও সরকার সংসদে পাশ করাতে চাইবে।
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে জেটলির পরামর্শই মেনে নিতে পারে সরকার। সর্বদল বৈঠকে জেটলি পরামর্শ দেন, সংবিধানের ২৫২ নম্বর ধারার আওতায় একটি মডেল লোকায়ুক্ত বিল পাশের জন্য সরকার দু ’টি রাজ্য থেকে প্রস্তাব আনাক। তার পর সেই মডেল বিল সংসদে পাশ করিয়ে নিক। সে ক্ষেত্রে ওই মডেল অনুসরণ করা না করার বিষয়টি নির্ভর করবে রাজ্যের ওপরেই। |