নিজস্ব সংবাদদাতা •নয়াদিল্লি |
দেশের ‘মুমূর্ষু’ অর্থনীতির জন্য সরাসরি মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধীকে দায়ী করল বিজেপি।
রাজ্যসভায় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি আজ বলেন, “সাধারণত আর্থিক নীতির প্রশ্নে মূল স্রোতের দলগুলি সরকারকে সমর্থন করে। কিন্তু বিরোধীরা তো দূর, রাজনৈতিক মিত্ররাও কেন মনমোহন সরকারের আর্থিক সিদ্ধান্তগুলিকে সমর্থন করছে না?” এর উত্তরও দেন জেটলি নিজেই। তাঁর দাবি, “সততার অভাব ও রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যের কারণেই জাতীয় স্তরে বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে সরকার সহমত গড়ে তুলতে পারছে না।”
জেটলির যুক্তি, বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা, তাদের বিভিন্ন বিল ও উন্নয়ন প্রকল্প আটকে দেওয়া, সিবিআইয়ের অপব্যবহার এই সব তো চলছে গোড়া থেকেই। যার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির আস্থা অর্জন করতে পারছে না। কিন্তু শরিক দলগুলির সঙ্গেও একই আচরণ করা হচ্ছে। দীনেশ ত্রিবেদীর নাম না করেই কংগ্রেস নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলেন জেটলি, “এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সহানুভূতি আদায় করে, তাঁকে দিয়ে নিজেদের কর্মসূচি চালানোর চেষ্টা করলেন। ভাবলেন, ঐকমত্যের পথে না হেঁটে তৃণমূলকে ভাঙিয়েই উদ্দেশ্য সাধন হবে। কিন্তু এর ফলে তৃণমূলের সঙ্গেই সম্পর্ক আরও তিক্ত হল।” ইউপিএ-র আর এক শরিক ডিএমকে-র প্রসঙ্গও তোলেন জেটলি। তাঁর বক্তব্য, এই দলটির নেতারা জেলে যাচ্ছেন, অথচ একই সিদ্ধান্ত নিয়ে বা তাতে সামিল থেকেও কংগ্রেসের মন্ত্রীরা দিব্যি রাজপাটে বসে আছেন। এক জন শাস্তি পাচ্ছেন, অন্য জনকে আড়াল করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার বাঁচাতে হাতিয়ার করা হচ্ছে সিবিআইকেও। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টিকে চাপে রেখে সমর্থন আদায় করা হচ্ছে তাদের।
বাজেট নিয়ে আলোচনার সূত্রেই জেটলি মন্তব্য করেন, ইউপিএ-র দ্বিতীয় সরকার আসতে আসতে দশ জনপথ ও সাত রেস কোর্সের মধ্যেও দু’টি পৃথক ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এক জন ১৯৯১ সালের আগের দর্শনে বিশ্বাসী, এক জন ১৯৯১ সালের পরবর্তী জমানার পন্থী। দেশের অর্থনীতিকে এর ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে। জেটলির বক্তব্য, দশ জনপথ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে কত খরচ করতে হবে, তা স্থির করে দেন। আর অর্থমন্ত্রী নর্থ ব্লকে বসে সে টাকা আদায়ের জন্য ‘আম-আদমি’র উপর বোঝা চাপান। আরও কর বসান। এ বারের বাজেটেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।
বাজেট পেশের পরে অর্থমন্ত্রী বণিকসভা ফিকি-র অনুষ্ঠানে স্বীকার করে নিয়েছেন, বিজেপির সহযোগিতা ছাড়া এগোনোর ক্ষমতা নেই সরকারের। সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনেও বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে আর্থিক বিষয়গুলিতে তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন প্রণববাবু। বিজেপি সাংসদরা সে দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম না মানে, রাজ্যগুলির আস্থা না আদায় করতে পারে, তবে বিল পাশের সময় শুধু বিরোধীদের সাহায্য চাইলে কার্যসিদ্ধি হবে না। জেটলি কার্যত আজ সংসদে দাঁড়িয়ে সেই একই বার্তা দিলেন মনমোহন-সনিয়াকে।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, “অর্থনীতিকে রাজনীতির সঙ্গে পৃথক করে দেখলে চলবে না। সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সরকারকে। গোটা অর্থনীতি ও শিল্পমহলের কাছে যেন এই বার্তা যায় যে, ভারত বিনিয়োগের জন্য আদর্শ।” এর জন্য বাজেটের বেশ কিছু প্রস্তাব পুনর্বিবেচনারও দাবি জানান তিনি।
সুষমা স্বরাজ প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠক করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। সোনার উপরে চাপানো কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি। |