পণ্য মাসুলও কমাবেন কি, জবাব এড়ালেন মুকুল
‘মা-মাটি-মানুষ’-এর উপরে ‘বাড়তি চাপ’ পড়বে বলে দীনেশ ত্রিবেদীর প্রস্তাবিত বর্ধিত ভাড়া অনেকটাই কমিয়েছেন তিনি। তা হলে এ বার কি পূর্বসূরির বাড়িয়ে দেওয়া পণ্য মাসুলও কমাবেন? মূলত এই প্রশ্নেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে কলকাতায় তাঁর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক মাত্র আট মিনিটে গুটিয়ে ফেললেন মুকুল রায়।
মন্ত্রী যে শেষ পর্যন্ত পণ্য মাসুল কমানো নিয়ে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন রেলকর্তারা। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘জনমোহিনী রাজনীতির’ স্বার্থে যাত্রিভাড়া নিয়ে দু’কদম পিছিয়ে এসে একেই উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির উপরে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী (বিশেষ করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলি)। তার উপরে যদি পণ্য মাসুলের বর্ধিত হারও কমিয়ে দিতেন, তাতে কোপ পড়ত রেলের নিরাপত্তার উপরে।
কতটা বেড়েছে পণ্য মাসুল? রেলকর্তাদের বক্তব্য, বাজেটের দিন কয়েক আগেই ২০ শতাংশ হারে পণ্য মাসুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে রেলের প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশপাশি, সব স্তরে যাত্রিভাড়া বাড়ানো হলে রেলের হাতে আসত বাড়তি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। ভাড়া কমিয়ে দেওয়ায় সেখান থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা হারাবে রেল। পণ্য মাসুল থেকে অতিরিক্ত অর্থ যেমন রেলের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন দীনেশ, তেমনই যাত্রিভাড়া থেকে বাড়তি আয় এ রাজ্যের নতুন প্রকল্পগুলির পিছনেও ঢালার কথা ভেবেছিলেন তিনি।
পরের পর প্রশ্নবাণে জেরবার
রেলমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বর্ধিত পণ্য মাসুল নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে পড়েন মুকুলবাবু। প্রশ্ন ওঠে, যে নীতি মেনে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলেন তিনি, সেই ‘আদর্শ’ মেনেই কি এ বার বাড়তি পণ্য মাসুলও কমিয়ে দেবেন? কারণ, পণ্য মাসুল বাড়লে তার পরোক্ষ চাপও সহ্য করতে হয় সাধারণ মানুষকেই। এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে মুকুলবাবু বলেন,“বিষয়টি বাজেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তাই জবাবি ভাষণেও আমি এই বিষয়ে কিছু বলিনি। এ নিয়ে তাই আর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” এর পরেও অবশ্য বারবার রেলমন্ত্রীর কাছে একই প্রশ্ন করা হতে থাকে। তিনিও বারবারই বলতে থাকেন, “প্রশ্নই ওঠে না।” শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলন তড়িঘড়ি শেষ করে দেন রেলমন্ত্রী।
শিল্পমহলের বক্তব্য, বাস্তবিকই পণ্য মাসুল বাড়লে তার কিছুটা চাপ সাধারণ মানুষকে সহ্য করতে হবে। কারণ, এর ফলে কয়লা, লৌহ আকরিক, সিমেন্ট-সহ বহু পণ্যেরই দাম বাড়বে। বিদ্যুৎ শিল্পমহল ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, কয়লার দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও ইউনিট পিছু গড়ে ৬ থেকে ১০ পয়সা বাড়ার সম্ভাবনা। কিন্তু পণ্য মাসুলে এই বৃদ্ধি না হলে রেলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ওঠার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাবে, সেটাও মেনে নিচ্ছেন সকলে।
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, যাত্রিভাড়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আসায় বাংলার প্রকল্পগুলির উপরে কি আঁচ পড়বে না? রেলমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, এ রাজ্যের সব ক’টি প্রকল্পই সময়সীমা মেনে শেষ করা হবে। এ দিন তিনি বলেন, “রেলমন্ত্রী থাকার সময় মমতা রাজ্যের জন্য যে সব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলি যাতে দ্রুত শেষ করা যায়, সে জন্যই আমি পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেল ও মেট্রো রেলের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছি।”
রাজ্যের যে প্রকল্পগুলি এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে ডানকুনি, হলদিয়ায় ডিজেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা গড়ার প্রকল্পও রয়েছে। এ বারের রেল বাজেটে রাজ্যের যে প্রকল্পগুলির জন্য দরাজহস্তে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সিংহভাগই অবশ্য পাচ্ছে প্রস্তাবিত মেট্রো প্রকল্পগুলি। বাজেট নথি অনুযায়ী, ওই খাতে ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণে রাখা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। জোকা থেকে মাঝেরহাট হয়ে বিবাদী বাগ পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণে বরাদ্দের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকা। নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর, বারাসত এবং বিমানবন্দর থেকে রাজারহাট হয়ে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। বরাহনগর থেকে দক্ষিণেশ্বর-ব্যারাকপুরের মেট্রো সম্প্রসারণেও দেওয়া হয়েছে ৬০২ কোটি টাকা। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, মুকুলবাবু রেলের অধিকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টা দেড়েক বৈঠক করলেও রাজ্যের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা হয়নি। তবে মেট্রো সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কোথাও যে জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তা রেলমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আজ, মঙ্গলবার ফের মুকুলবাবু মেট্রো রেলের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
রাজনৈতিক ভাবে রাজ্যের রেল প্রকল্পের রূপায়ণকে মুকুলবাবু ‘পাখির চোখ’ করলেও, ভাড়া কমিয়ে দেওয়ায় যে টাকা হারাতে চলেছে রেল, তা কোথা থেকে আসবে? রেলকর্তাদের বক্তব্য, ভাড়া কমিয়ে দেওয়ায় যে আড়াই হাজার কোটি টাকা হারাবে রেল, তা অন্য কোনও খাত থেকে না তুলতে পারলে উন্নয়নের কাজ মার। কী ভাবে ওই টাকা তোলা হবে, তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। এর মধ্যে যদি পণ্য মাসুলও কমানো নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করে বসতেন? এক রেলকর্তা বলেন, “পণ্য মাসুলে কোপ পড়লে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। সবাই জানেন, জনমোহিনী রাজনীতির বলি হচ্ছে রেল। তাই এ নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.