নিজস্ব সংবাদদাতা • লাভপুর |
বালি বোঝাই ‘ওভার লোড’ ট্রাক চলাচলের ফলে সেতু ভেঙে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল। তাই ‘ওভার লোড’ ট্রাক রুখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবিতে বিকল্প রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ ট্রাক আটকে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুর থানা এলাকায় ময়ূরাক্ষ্মী নদী থেকে বালি তোলার জন্য সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ঘাট রয়েছে তিনটি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই তিনটি ঘাট ছাড়াও বেশ কিছু ঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয়। লাঘোঁষা গ্রামের ঘাটটি থেকে মূলত বালি বোঝাই হয়ে দৈনিক শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক চলাচল করে তরুলিয়া-গোপালপুর রাস্তায়। রবিবার রাতে ওই রাস্তায় ভালাস গ্রাম লাগোয়া কাঁদরের উপর নির্মিত পুরনো সেতুটি ভেঙে যায়। ওই সেতুর পাশে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নতুন সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু তার কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওই রুটে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাক চালকেরা তখন ওই রাস্তার পরিবর্তে সংলগ্ন সাওগ্রাম-অমৃতবাঁধ রাস্তায় চলাচল শুরু করেন। |
(বাঁ দিকে) ভাঙা সেতু। (ডান দিকে) লাভপুরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ। ছবি: অনির্বাণ সেন। |
কিন্তু ‘ওভার লোড’ ট্রাকের জন্য ওই রাস্তাও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে এই আশঙ্কায় স্থানীয় মানুষজন সকাল থেকেই লায়েকপুর গ্রামে ‘ওভার লোড’ ট্রাক আটকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ প্রশাসনিক আশ্বাসে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এই পরিস্থিতিতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, বিশেষত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। তরুলিয়া-গোপালপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোটর চালিত রিকশা ভ্যান কিংবা ৫-৬ কিমি ঘুরপথে লাভপুরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। লাভপুর যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লায়েকপুরের রুমি পাল, লাঘোঁষার অনুপ দাসদের অভিযোগ, “বাস স্ট্যান্ডে এসে জানতে পারি সেতু ভাঙার জন্য বাস বন্ধ। তখন তড়িঘড়ি মোটর চালিত রিকশা ভ্যানে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসি। সময় মত পৌঁছতে পারব কিনা সেই দুশ্চিন্তায় ছিলাম।”
স্থানীয় বাসিন্দা অশোক মণ্ডল, সাক্ষ্মীগোপাল মণ্ডল, শিবনাথ পাল-রা বলেন, “বছর আটেক আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত তরুলিয়া-গোপালপুর রাস্তা ‘ওভার লোড’ বালির ট্রাক চলাচলের ফলে ভেঙেচুরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি বছর খানেক আগে ওই রাস্তা সংস্কার হলেও একই কারণে ফের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি।” তাঁদের আশঙ্কা, “সাওগ্রাম-অমৃতবাঁধ রাস্তায় ‘ওভার লোড’ ট্রাক চলাচল শুরু করলে একই হাল হবে।” অবৈধ ভাবে বালি পাচারের বিষয়ে তাঁদের অভিযোগ, “প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মীর সঙ্গে আর্থিক বোঝাপড়ায় এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যথেচ্ছ হারে ‘ওভার লোড’ করে ট্রাকে বালি পাচার করা চলছে। ঘাট লিজ নেওয়া মালিকরাও এর সঙ্গে যুক্ত।”
এ দিকে সংশ্লিষ্ট লাভপুরের বিএলএন্ডএলআরও শান্তনু সরকারের দাবি, “আমরা মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে বেআইনি বালি পাচার ধরে জরিমানা করি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।” শান্তনুবাবু বেআইনি বালি পাচার রুখতে আরও জোরদার অভিযান চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন। একই বক্তব্য লাভপুরের বিডিও অনাবিল দত্ত-রও। তিনি বলেন, “বেআইনি বালি পাচার রুখতে বিএলএন্ডএলআরও এবং লাভপুরের ওসি-র সঙ্গে বৈঠক করা হবে। গোপালপুর সড়ক অস্থায়ী ভাবে চালু করার জন্য উদ্যোগ নেব।” |