নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
উপ-পুরপ্রধানের ‘উদ্ধত’ আচরণের প্রতিবাদ না করার অভিযোগ তুলে রামপুরহাট পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন ৬ কাউন্সিলর। সোমবার তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাটের পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব মহকুমাশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন ওই কাউন্সিলররা।
তাঁদের অভিযোগ, উপপুরপ্রধান তৃণমূলের আব্বাস হোসেন কোনও কাউন্সিলরকে গুরুত্ব দেন না। তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ সব দেখেও ব্যবস্থা নেন না পুরপ্রধান। তাই এ দিন মহকুমাশাসকের কাছে অনাস্থার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন নির্দলের তিন, বিজেপির দুই ও ফরওয়ার্ড ব্লকের এক কাউন্সিলর। ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পুরপ্রধানকে ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা প্রমাণের সভা ডাকতে হবে। তা না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” নির্মলবাবু বলেন, “তাঁদের অনাস্থা প্রস্তাব জমা নিয়েছি। আইনগত দিক খতিয়ে দেখে আমি আস্থা প্রমাণের সভা ডাকব।”
এই পুরসভায় দলগত অবস্থানতৃণমূল ৭, নির্দল ৩, কংগ্রেস ২, সিপিএম ২, ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসন পায়। নির্বাচনের সময়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট না হলেও পুরপ্রধান নির্বাচনের সময় দুই দল জোট করে বোর্ড গঠন করে। তাদের সমর্থন করেছিলেন নির্দল ৩ এবং বিজেপির ১ জন সদস্য। সাত নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “বোর্ড গঠনের সময়ে তৃণমূলকে সমর্থণ করেছিলাম। আমাকেও পূর্ত বিভাগের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর অভিযোগ, “বছর ঘুরতেই পূর্ত, অর্থ এমন কী উন্নয়নমূলক সভা সব ক্ষেত্রেই উপপুরপ্রধান ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। কিছু বলতে গেলে নানা রকম কথা বলা হচ্ছে।” আর এক নির্দল কাউন্সিলর ১ নম্বর ওয়ার্ডের সবিতা দাস বলেন, “কাউন্সিলররা জন প্রতিনিধি। এক জনকে অপমান করা মানে সব কউন্সিলরকে অপমান করা। উপপুরপ্রধান কোনও কাউন্সিলরকে সম্মান দিতে জানেন না।”
অন্য দিকে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুপর্ণা চৌধুরীর দাবি, “চুরির অভিযোগে আব্বাস হোসেন তিন জন মহিলাকে কান ধরে ওঠবোস করিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন গর্ভবতী মহিলাও ছিল। দলীয় বিধায়ক থেকে সাংসদ প্রতিবাদ করেছিলেন। তবুও তিনি নিজের আচরণ বদলাননি। উপপুরপ্রধান পদেও থেকে গিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে অনাস্থায় সই করেছি।” আর এক বিজেপি কাউন্সিলর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাধব সর্দার বলেন, “আব্বাস হোসেন একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেন। তাঁর দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সরব হয়েছি।” অনাস্থা আনা কাউন্সিলরদের মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর মঞ্জুরা খাতুনের অভিযোগ, “জোটের বোর্ডকে সমর্থণ করলেও দু’বছর ধরে বুঝতে পারিনি কে পুরপ্রধান। আব্বাস হোসেন নিজের ওয়ার্ডে পাইপ লাইনের কাজ করলেও এখনও পর্যন্ত আমার ওয়ার্ডে কাজ হল না।”
ফব কাউন্সিলর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপন দত্তের দাবি, “উপ-পুরপ্রধানের ঔদ্ধত্য, একনায়কতন্ত্র সহ্য করা যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” অনাস্থায় সই না করলেও সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর হিমাংশু মণ্ডলের অভিযোগ, “উপপুরপ্রধান তাঁর কাছে রাজনীতির শিক্ষা নিতে বলেছেন। তাই আমি তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়ে রাজনীতির শিক্ষা নিচ্ছি।” আর, দুই সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিক ও অসীম মজুমদার এই বোর্ডকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দাবি করেছেন। যদিও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “বর্তমান পুরসভা চোর ও ডাকাতদের পুরসভা। জোট শরিক হিসেবে অনাস্থায় কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে, দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে।” অবশ্য সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আব্বাস হোসেন।
এ দিকে তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ দলীয় উপপুরপ্রধানের আচরণে ক্ষুব্ধ। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাট বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ভুল বোঝাবুঝি অনেকবার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়েছে। আশা করি এ ক্ষেত্রেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটবে এবং বোর্ড তৃণমূলের হাতে থাকবে।” |