ইসিএলের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলায় আসানসোলের চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় দেড়শো শ্রমিক-কর্মীকে স্বেচ্ছাবসরের নোটিস দিয়েছে ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন (ডিপিএসসি)। ওই শ্রমিক-কর্মীদের গড় বয়স ৪৫ বছরের আশপাশে। সোমবার থেকে তাঁরা বর্ধমানের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের গেটে ধর্না-অবস্থান শুরু করেছেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের সামনে কোনও রাস্তা নেই।
১৯৯১-এ বর্ধমানের ডিসেরগড়ে ৩০ মেগাওয়াটের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে ইসিএল। বাৎসরিক ভাড়ায় সেটি ডিপিএসসি-কে ২০ বছরের লিজ দেওয়া হয়। এ জন্য ইসিএলই কয়লা দিত এবং রোজ ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিত। গত ৩১ মার্চ ফের এক বছরের জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৩১ মার্চ সেই সময়সীমাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে লিজ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ‘গ্লোবাল টেন্ডার’ও ডেকেছে ইসিএল। |
ডিপিএসসি সূত্রের খবর, পুরনো লিজ চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য ইসিএল-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা টেন্ডার ডেকে দেওয়ায় সে সম্ভাবনা যে কার্যত নেই, তা-ও পরিষ্কার। সংস্থার প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশ দাশগুপ্ত বলেন, “ইসিএলের ডাকা টেন্ডারে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যা আমাদের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই নতুন করে লিজ পাওয়াও সম্ভব নয়।” ইতিমধ্যে পাওনাগন্ডা সংক্রান্ত বিবাদ হাইকোর্টে গড়ানোয় ইসিএল কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সোমেশবাবু জানান, এর ফলে ২১ নভেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধ। প্রায় দেড়শো স্থায়ী শ্রমিক-কর্মীকে (এ ছাড়াও শ’দেড়েক অস্থায়ী কর্মী আছেন) বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। সোমেশবাবু বলেন, “ভেবেছিলাম, চুক্তি পুনর্নবীকরণ হলে কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াব। কিন্তু ইসিএল টেন্ডার ডাকায় সেই সব সম্ভাবনা রইল না। ফলে, শ্রমিক-কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে সব গুটিয়ে নিতে চাইছি। অনেককেই তুলনামূলক কম বয়সে স্বেচ্ছাবসর নিতে হচ্ছে। আমরাও চিন্তিত। কিন্তু কিছু করার নেই। আশা করি, শ্রমিক-কর্মীরা বিষয়টি বুঝবেন।”
স্বেচ্ছাবসরের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় শ্রমিক সংগঠনগুলি যৌথ কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইএনটিটিইউসি-র শাখা সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তীর দাবি, “সাত দিনের মধ্যে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।’’ সিটুর শাখা সম্পাদক মলয় বসু রায়ের প্রশ্ন, “এই এলাকাতেই ডিপিএসসি-র অন্য কয়েকটি ইউনিট আছে। সেখানে আমাদের সরানো হচ্ছে না কেন?” সোমেশবাবুর বক্তব্য, “অন্য ইউনিটেও যথেষ্ট শ্রমিক-কর্মী আছে। সেখানে সরালে ওঁরা বাড়তি হয়ে যাবেন।” ইসিএল কি পরবর্তী লিজগ্রহীতাকে এঁদের রেখে দেওয়ার শর্ত দিতে পারে? সংস্থার সিএমডি-র সংস্থার কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “টেন্ডারের নিয়মনীতি মেনে যে কোম্পানি রাজি হবে, তাকেই লিজ দেওয়া হবে। কিন্তু এ রকম শর্ত চাপানো সম্ভব নয়। যারা লিজ নেবে, এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার।” আসানসোলের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য বলেন, “এ ভাবে এত লোককে হঠাৎ বসিয়ে দেওয়া একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। এর পরে যে সংস্থা লিজ পাবে, আমরা তাদের বলব এঁদের কাজে নিতে হবে।” |