শ’পাঁচেক কলেজে ছাত্র সংসদ, আর ন’হাজার মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরেই অশান্তির শেষ নেই। এ বার ৫১ হাজার প্রাথমিক স্কুলের পরিচালন সমিতিও গড়া হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এর জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘দখল’ নিতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাত্রাও আরও চড়বে বলে স্কুলশিক্ষা আধিকারিকদের একাংশই আশঙ্কা করছেন।
স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে এক-একটি এলাকায় কার্যত সাধারণ নির্বাচনের চেহারা নেওয়াটাই এ রাজ্যের দস্তুর। একই ভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক রেষারেষি বহু ক্ষেত্রেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নেয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে রাজের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের তত্ত্বাবধানে। এই অবস্থায় নির্বাচনের তালিকায় রাজ্যের প্রায় ৫১ হাজার প্রাথমিক স্কুলকে ঢোকানো হলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তা হলে রাজ্য সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন?
স্কুলশিক্ষা দফতরের বক্তব্য, শিক্ষার অধিকার আইনে প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে পরিচালন সমিতি গড়তে বলা হয়েছে। এই স্কুলগুলি এত দিন গ্রাম শিক্ষা কমিটি বা ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটি বা স্কুল শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হত। শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, পরিচালন সমিতি হতে হবে ১৬ জনের। এর মধ্যে ৭৫%, মানে ১২ জন অভিভাবক প্রতিনিধি। বাকিরা হলেন স্থানীয় জন-প্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী প্রভৃতি। ১২ জন অভিভাবককে কী ভাবে বাছাই করা হবে, আইনে সে সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না থাকলেও রাজ্য সরকার এই প্রতিনিধিদের নির্বাচনের মাধ্যমেই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন বলেন, “প্রথম থেকে চতুর্থ চারটি শ্রেণিতে ১২ জন অভিভাবক প্রতিনিধি। মানে প্রতি শ্রেণিতে তিন জন। এঁদের মধ্যে তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, সংখ্যালঘু ইত্যাদি সংরক্ষণ থাকবে। এর ফলে গোলমালের আশঙ্কা অনেকটা কমে গেল।” কী ভাবে? সচিবের দাবি, বিভিন্ন সংরক্ষিত শ্রেণি থেকে আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে বলে গোলমাল এমনিতেই কমে যাবে।
যদিও স্কুলশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশের ধারণা অন্য রকমই। দীর্ঘদিন প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আশঙ্কা হচ্ছে, গোলমাল এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, যে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ার পরিবেশটাই লাটে উঠবে।” সরকারের এই উদ্যোগকে কেউ কেউ আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাম দলগুলির দখলমুক্ত করার চেষ্টা হিসাবেও দেখছেন।
শিক্ষক সংগঠনগুলিও এই ব্যাপারে মোটামুটি একমত। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, “এ ভাবে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ স্কুলগুলিতে ঢুকবে। যেখানে যে রাজনৈতিক দলের আধিপত্য, সেখানে সেই দল নিজের প্রতিনিধিদের ঢোকাতে চাইবে। ক্ষমতা প্রদর্শন আর শিক্ষা ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার চেনা ছবিটাই ফিরবে।” নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক সমর চক্রবর্তী এবং পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারও এতে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশের আশঙ্কাই করছেন।
|
অধ্যক্ষদের কাছে রিপোর্ট চাইল উচ্চশিক্ষা দফতর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ধর্মঘটের দিন কলেজে অনুপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সে ব্যাপারে অধ্যক্ষদের কাছে রিপোর্ট তলব করল উচ্চশিক্ষা দফতর। অনুপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীদের শো-কজ করে তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ জানতে হবে অধ্যক্ষদের। অর্থ দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় ধর্মঘটে অনুপস্থিতির জন্য যে সব কারণকে ‘গ্রহণযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও শিক্ষক বা কর্মচারী সেই সব কারণে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর ছুটি মঞ্জুর হবে। না হলে এক দিনের বেতন কাটার যে নির্দেশ সরকারি কর্মচারীদের বেলায় কার্যকর করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। কলেজগুলি নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, প্রমাণ-সহ সেই রিপোর্ট ২ এপ্রিলের মধ্যে যুগ্ম শিক্ষা অধিকর্তার (জয়েন্ট ডিপিআই) কাছে জমা দিতে হবে বলে অধ্যক্ষদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। |