রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ১১টি জেলার পরিকাঠানো উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বিশেষ অনুদান’-এর প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে গিয়েছে মহাকরণে অর্থ দফতরের কাছে। কিন্তু রাজ্যের যে সব দফতর ওই উন্নয়নের কাজ করবে, তারা এখনও কোনও টাকা পায়নি। শনিবার এক সরকারি বৈঠকে এই তথ্য উঠে এসেছে।
অভিযোগ, আর্থিক ভাবে চরম সঙ্কটে থাকা রাজ্য সরকার ওই টাকা সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়া ও অন্যান্য কাজে খরচ করার পরিকল্পনা করেছে। তাই বিশেষ অনুদানের অর্থ দিতে পারছে না দফতরগুলিকে। অর্থ দফতর অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, দফতরগুলি প্রকল্পের জন্য সবে মাত্র বরাত (টেন্ডার) দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তাই টাকার অভাবে কোনও কাজ আটকে নেই। কেন্দ্রের দেওয়া ওই টাকা গচ্ছিত রাখা আছে। অন্য কোনও কাজে তা খরচ করা হয়নি। সময় মতো তা দফতরগুলিকে দেওয়া হবে।
কিন্তু বিশেষ অনুদানের প্রথম কিস্তির টাকা পাঠানোর পাশাপাশি রাজ্যের কাছে কেন্দ্র একটি নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে ওই অর্থ প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থা (এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর)-কে দিতে হবে। নয়তো সুদ-সহ ওই অর্থ ফেরত দিতে হবে।
ক্ষমতায় এসেই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির জন্য কেন্দ্রের কাছে ‘বিশেষ অনুদান’ চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে বলে কেন্দ্র। এর ভিত্তিতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ড ফান্ড (বিআরজিএফ) প্রকল্পে ‘বিশেষ অনুদান’ ৮৭৭১ কোটি টাকা মঞ্জুর করে যোজনা কমিশন। ঘোষণা মতো সেই অর্থের প্রথম কিস্তির ২ হাজার ২৫১ কোটি টাকা মহাকরণের হাতে এসেছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে।
বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে যোজনা কমিশন। তাই টাকা পাঠানোর ১৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ার ক’দিনের মধ্যেই, শনিবার মহাকরণে এসে রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্য-সচিব সুধা পিল্লাই। বৈঠকে রাজ্যের অর্থ সচিব ছিলেন না। তাঁর পরিবর্তে সভা পরিচালনা করেন রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সচিব জয়া দাশগুপ্ত। আর ছিলেন অনুদানপ্রাপ্ত সাত দফতরের সচিব। পরে সুধা পিল্লাই বলেন, “কেন্দ্র বিআরজিএফ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫১ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। স্বাস্থ্য, সেচ, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ওই টাকা খরচ করে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে।”
মহাকরণের খবর, বিশেষ অনুদান প্রকল্পে দফতরগুলির কাজ কতটা এগোল, তা জানতে চান কমিশনের সদস্য-সচিব। উত্তরে কোনও কোনও সচিব জানান, তার দফতর কাজের বরাত দিয়েছে। কেউ আবার জানান, বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকেই জানিয়ে দেন, তাঁরা এ পর্যন্ত কোনও অর্থ পাননি। রাজ্যের বাজেটের (২৩ মার্চ) কারণে বৈঠকে অর্থ সচিব উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জয়াদেবীকে পাঠানো হয়। কিন্তু এ সব ব্যাপারে তিনি প্রায় কিছুই জানতেন না। সুধাদেবী স্মরণ করিয়ে দেন, এর পর রাজ্যে বর্ষা ও পূজার মরসুম শুরু হয়ে যাবে। তাই কাজ দ্রুত করতে হবে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, প্রথম কিস্তির (৩০% অর্থ) টাকা খরচ করার পর তার সংশাপত্র জমা দিতে হবে। সেই কাজ খতিয়ে দেখে পরের কিস্তির টাকা দেবে যোজনা কমিশন। প্রকল্পগুলি দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা। সদস্য-সচিব এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন।
এ দিকে, ‘সুসংহত অ্যাকশন’ প্রকল্প অনুযায়ী দেশের ৭৮টি আদিবাসী অধ্যুষিত অনুন্নত জেলাকে আলাদা করে টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত আর্থিক বছরে এ রাজ্যের একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ২৫ কোটি টাকা পেয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাকেও ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বার তাই ৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। এ দিন সেই প্রকল্পেরও পর্যালোচনা করেন সুধাদেবী। পরে বলেন, “আমি মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে গিয়েছি। অন্য ২০টি রাজ্যের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি। কিন্তু যে গতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজ হয়েছে, তা অভূতপূর্ব।” তবে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ওই প্রকল্পে এখনও টাকা খরচ হয়নি বলে জানান তিনি। |