রাজ্যসভায় মনোনয়ন তৃণমূলের
কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও জয়ই দেখছেন মমতা
রাজ্যসভায় কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও তাঁরা লড়বেন এবং জিতবেন। শনিবার জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় দলীয় চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেশের পর মমতা বলেন, “কংগ্রেস প্রার্থী দিতেই পারে। এটা যে কোনও রাজনৈতিক দলের অধিকার। তবে কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও ওদের বিধায়ক কম। আমরা লড়ব এবং জিতব।”
পাশাপাশিই এ দিন মমতা দাবি করেন, রাজ্যসভায় এ বার কংগ্রেসের জন্য তৃণমূল আসন ছাড়বে না বলে গত বছরই দু’দলের ‘বোঝাপড়া’ হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে তিনি শরিক দলকে সাহায্য করার ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের আবেদন নাকচ করেছেন। সমর্থনযোগ্য বিধায়ক কম থাকায় জোট শরিক তৃণমূলের ‘সাহায্যে’র জন্য পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ গত শনিবারই মমতার দ্বারস্থ হন। শাকিলকে তখনই ‘নিরাশ’ করেছিলেন মমতা। তারপর শুক্রবার তিনি তৃণমূলের চার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেন।
বিধানসভার লবিতে দলীয় চার প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে মমতা বলেন, “গত বছর যে আমরা কংগ্রেসকে একটা আসনে সমর্থন করব, তা আলোচনা করেই ঠিক হয়েছিল। তখনই ঠিক হয়েছিল, এ বছর একটা আসন আমাদের ছেড়ে দেবে কংগ্রেস। ওরা এ বার প্রার্থী দেবে না। আগামী বছর আবার ওদের (কংগ্রেস) একটা আসন ছাড়ব আমরা। সেই কথামতোই এ বার কংগ্রেসকে আসন ছাড়িনি।” আসন ছাড়া, না-ছাড়া নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের এই ‘পারস্পরিক বোঝাপড়া’য় কোনও ঝগড়া বা বিতর্কের অবকাশ নেই বলেই মন্তব্য তৃণমূল নেত্রীর।
তবে মমতার বক্তব্য ‘মনগড়া’ বলে দাবি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “গত বছর রাজ্যসভায় আমি কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলাম। যে সংখ্যক সমর্থন দরকার ছিল, তার চেয়ে বেশি বিধায়কই ছিল আমাদের। ফলে তৃণমূলের সাহায্যের দরকারই পড়েনি! তাই প্রার্থী দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে গত বছর এমন কোনও আলোচনা হয়েছিল বলে আমার জানা নেই।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, গত বছর রাজ্যসভায় কংগ্রেসের প্রয়োজন ছিল ৪১.৫ জনের সমর্থন। কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন (এখনও আছেন) ৪২ জন। ১ জন ছিলেন ‘অ্যাসোসিয়েট সদস্য’। ফলে অঙ্কের নিরিখে তৃণমূলের সাহায্য নিতে হয়নি কংগ্রেসকে।
তৃণমূলের চার প্রার্থীকে নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুমন বল্লভ
২০১৪ সালের রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেসকে একটি আসন ছাড়ার ব্যাপারে মমতার মন্তব্য নিয়েও কংগ্রেস নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৪ সালে রাজ্যসভার ভোটে কংগ্রেস এমনিতেই একটি আসন পাবে। তখন তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন হবে না। ঠিক যেভাবে ২০১১ সালে রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূলের সমর্থন ছাড়াই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই বিতর্কের পাশাপাশিই কংগ্রেসের তরফে রাজ্যসভার প্রার্থী নিয়ে দিল্লিতে দফায়-দফায় আলোচনা চলছে। এদিন সকাল থেকে শাকিল রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদদের ফোন করে তাঁদের মত জানতে চান। বিকেলে তিনি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে একটি নোট পাঠান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, শাকিলকে অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সিরা বলেন, কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়া উচিত। মৌসম বেনজির নূরও একই মত দেন। অবশ্য হাইকম্যান্ডকে শাকিল এ-ও জানিয়েছেন, রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, কংগ্রেস প্রার্থী দিলে বামেরা সেই প্রার্থীকে তাঁদের অবশিষ্ট ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেবে। পাশাপাশিই অবশ্য তৃণমূলের তরফে নতুন করে কংগ্রেস সম্পর্কে ‘সিপিএমের বি-টিম’ অভিযোগ আবার তোলার ‘আশঙ্কা’ও থাকছে। ফলে কংগ্রেস ‘উভয়সঙ্কটে’। প্রার্থী না দিলে দলের মনোবলে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়বে। প্রার্থী দিলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কে আঁচ পড়বে এবং রাজ্যেও ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ ক্ষুণ্ণ হবে। তবে অধীরদের বক্তব্য কংগ্রেস তো বামেদের কাছে সমর্থন চাইছে না! কোনও প্রার্থী ‘নিজ গুণে’ ভোট পেলে কার কী বলার আছে! তবে কংগ্রেসের একটি সূত্রের মতে, শেষ পর্যন্ত দল প্রার্থী না-ও দিতে পারে। কারণ, জাতীয় রাজনীতির কারণে মমতাকে ‘তুষ্ট’ রাখার একটা চেষ্টা এখনও হাইকম্যান্ডের তরফে চলছে।
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস প্রার্থী দিলে ভোট হচ্ছে ধরে নিয়ে এ দিনই তৃণমূলের সমস্ত বিধায়কদের ৩০ মার্চ, ভোটের দিন হাজির হয়ে ভোট দেওয়ার জন্য ‘হুইপ’ জারি করেছেন সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। যা থেকে তৃণমূলের একাংশের ধারণা, কংগ্রেস প্রার্থী দিলে ভোটে ‘তুল্যমূল্য’ লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের চার প্রার্থী মনোনয়ন পেশের আগে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শুভ্রা ঘোষ বিধানসভার সচিব যাদবলাল চক্রবর্তীর দফতরে এসে দু’টি এফিডেভিট ফর্ম নেন। তাতে গুঞ্জন শুরু হয় রাজনৈতিক শিবিরে। যদিও এই বিষয়ে কংগ্রেস ‘নীরব’। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, যে কেউই বিধানসভা থেকে এফিডেভিট ফর্ম এমনকী, মনোনয়পত্রও তুলতে পারেন। এখনও মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য এক দিন সময় রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “প্রদেশ কংগ্রেস লড়াইয়ে রাজি। হাইকম্যান্ড প্রার্থী দিতে রাজি হলেই তা সম্ভব।”
এ দিন দুপুরে দ্বিতীয় বারের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ পদে মনোনয়ন পেশ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (ভাবী রেলমন্ত্রীও) মুকুল রায়। তার পরে একে একে তিন সাংবাদিক প্রতিনিধি কুণাল ঘোষ, নাদিমুল হক এবং বিবেক গুপ্ত। প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ পর্ব শেষের মুখে হঠাৎই বিধানসভায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সোজা চলে যান যাদববাবুর দফতরে (সেখানেই মনোনয়ন পেশ করেন প্রার্থীরা)। জানতে চান, মনোনয়নপত্র পেশ সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে কিনা। মমতা যাদবলালবাবুকে বলেন, “এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, একবার ঘুরে যাই। চলে এলাম।” এর পরেই দু’আঙুল তুলে ‘ভি’ দেখান মুখ্যমন্ত্রী এবং সচিবের দফতরে উপস্থিত চার প্রার্থী-সহ তৃণমূলের মন্ত্রী-সদস্যরা। রাজ্যসভার মনোনয়ন পেশের মুহূর্তে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার ‘নজির’ সম্প্রতি নেই। শেষবার এমন ঘটনা ঘটেছে ‘সর্বসম্মত নির্দল’ প্রার্থী প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর রায়চৌধুরীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে। ওই দিন বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তৎকালীন বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের অতীশ সিংহ। তবে শঙ্করবাবু ছিলেন ‘সর্বসম্মত নির্দল’ প্রার্থী। ‘রাজনৈতিক প্রার্থী’ নয়। সে দিক দিয়ে মমতার উপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। যে ‘বার্তা’ বলছে, দলের বাইরে সংবাদজগতের তিন প্রতিনিধির প্রার্থীদের বিষয়ে তাঁর ‘পূর্ণ সম্মতি’ রয়েছে। মমতা বলেন, “আগেও রাজনীতির বাইরে আইএএস, আইপিএস, সিনেমা-সংস্কৃতি জগতের মানুষকে প্রার্থী করেছিলাম। এ বার সাংবাদিকদের প্রার্থী করা হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.