জালে লক্ষ্মণ
‘উনি নির্দোষ’, দাবি তমালিকার
ন্দীগ্রাম কাণ্ডে হাতকড়া পড়েছে স্বামীর হাতে। তবে লক্ষ্মণ শেঠের স্ত্রী, তথা হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তমালিকা পণ্ডাশেঠ এ দিন বলছেন, “উনি নির্দোষ। তৃণমূল ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ওঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। নন্দীগ্রামের মানুষের সার্বিক উন্নয়নই চেয়েছিলেন উনি।”
শনিবার সকালেও হলদিয়ায় ছিলেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমালিকাদেবী। দুপুরে লক্ষ্মণবাবুর গ্রেফতারের খবর আসার পরে তাঁকে আর হলদিয়ায় পাওয়া যায়নি। ক্ষুদিরামনগরে সিপিএম কার্যালয়েরই একাংশে সপরিবার থাকতেন লক্ষ্মণবাবু।
এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, সেই অংশটা তালাবন্ধ। বিকেলের দিকে কিছু লোক ওই কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেন। আবির মাখামাখিও করেন। তবে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি। হলদিয়ায় লক্ষ্মণবাবুর দীর্ঘ দিনের সহযোগী, সিটু নেতা সুর্দশন মান্নাও দাবি করেন, “মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে লক্ষ্মণবাবুদের।”
কিন্তু হলদিয়ার পুর-চেয়ারম্যান কোথায়? তমলুকে জেলা পার্টি-অফিসে গিয়েও দেখা মেলেনি লক্ষ্মণ-জায়ার।
তমালিকা পণ্ডাশেঠ
সেখানে জেলা নেতা কানু সাউ, নিরঞ্জন সিহিরা গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মণবাবু, অমিয় সাউ, অশোক গুড়িয়াদের সব রকম ভাবে আইনি সাহায্য করা হবে বলে জানান। এ দিকে, দুপুর থেকে মোবাইল ফোন বার বার বেজে গেলেও ধরেননি তমালিকাদেবী। শেষ পর্যন্ত রাতের দিকে ফোনে যোগাযোগ করা গেলে তিনি বলেন, “স্ত্রী হিসাবে নিশ্চয়ই মর্মাহত। কিন্তু আমি জানি, উনি নির্দোষ। বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রয়েছে। বিশ্বাস করি, সুবিচার পাব।” তমালিকাদেবীর দাবি, “সামনেই হলদিয়া পুরভোট। তাই পরিকল্পনা করেই লক্ষ্মণবাবুদের গ্রেফতার করা হল।” পুরভোটও নির্বিঘ্নে ‘করতে দেওয়া হবে না’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কেমিক্যাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণে ২০০৬-এর ২৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। তার ঠিক পর দিনই নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে জমি অধিগ্রহণের পক্ষে প্রচারসভা করেছিলেন পর্ষদের তদানীনন্তন চেয়ারম্যান, তমলুকের সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। নন্দীগ্রামকে ‘আর একটা হলদিয়া’ করার শপথ ঘোষণা করেছিলেন দাপুটে এই নেতা।
তাঁর সেই ‘দাপট’ অবশ্য পছন্দ করেননি নন্দীগ্রামের মানুষ। উর্বর কৃষিজমি, বাস্তু ছাড়তে রাজি হননি তাঁরা। ভূমি উচ্ছেদ-প্রতিরোধ কমিটি গড়ে শুরু করেছিলেন জমি-রক্ষার লড়াই। যে লড়াই দ্রুতই পায়ের তলার জমি কেড়ে নেয় লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর দলের। শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনও করতে হয় প্রাক্তন সাংসদকে।
কিন্তু যদি নির্দোষই হন, কেন আত্মগোপন করেছিলেন লক্ষ্মণবাবু? তমালিকাদেবীর বক্তব্য, “পরিস্থিতি এমন ছিল, যে কোনও সময়ে যা কিছু ঘটে যেতে পারত। আক্রমণ হতে পারত। তাই আইনজীবীদের পরমার্শক্রমেই উনি প্রকাশ্যে আসা বন্ধ করে দেন।” তাঁর দাবি, “গত ১১ নভেম্বরের পরে আমার সঙ্গেও আর দেখা হয়নি।” তবে ফোনে যে যোগাযোগ হত, তা স্বীকার করে তিনি বলেন, “কিন্তু আমিও কখনও জিজ্ঞাসা করিনি কোথায় আছেন, উনিও বলেননি।”
সিআইডি সূত্রের দাবি, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে লক্ষ্মণবাবু, অমিয় সাউদের যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে।
বস্তুত, এই মামলার চার্জশিটেও সিআইডি জানিয়েছে, নন্দীগ্রাম পুনর্দখলে হামলার ছক কষা হয়েছিল ২০০৭-এর ৪ নভেম্বর খেজুরির কলাগেছিয়ায় সিপিএম পার্টি অফিসের এক বৈঠকে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মণবাবু, অমিয়বাবুরা। ওই বৈঠকেই ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির উপরে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই মতোই ৬ নভেম্বর থেকে নন্দীগ্রামের দুই ব্লক জুড়েই শুরু হয়েছিল হামলা। আর ১০ তারিখ কমিটির মিছিলে চলেছিল গুলি। নিহত তিন জনের দেহ মিলেছিল। নিখোঁজ রয়ে গিয়েছেন ন’জন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.