দক্ষিণ কলকাতা
উদ্যোগী মন্ত্রী
হবে ঠিকানা
লকাতা পুরসভার নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে জওহরলাল নেহরু ন্যশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি)। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে আরও দু’বছর। কিন্তু কিছু দিন কাজ হওয়ার পরে চুক্তি নিয়ে কেআইটি এবং নির্মাণ সংস্থার মধ্যে গোলমাল দেখা দেওয়ায় আটকে ছিল গোটা প্রকল্পটি। অবশেষে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের হস্তক্ষেপে এই প্রকল্পের জট কাটতে চলেছে।
জেএনএনইউআরএম-এর অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য গল্ফক্লাব রোডের ঝোড়ো বস্তির ২২০টি পরিবার এবং উল্টোডাঙার ১১৬০টি পরিবারের জন্য ‘বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর’ (বিএসইউপি) প্রকল্পের আওতায় নতুন আবাসন নির্মাণের জন্য কেআইটি কর্তৃপক্ষ ২০০৭-এ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। সেই মতো এই দু’টি জায়গায় কেআইটি-র জমিতেই আবাসন নির্মাণের জন্য একটি সংস্থাকে টেন্ডারের মাধ্যমে বরাত দেওয়া হয়।
এই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে ২০১০-এর মার্চ মাসে কেআইটি-র যে চুক্তি হয় তাতে বলা হয়েছিল, ৩৪ কোটি টাকার এই সমগ্র প্রকল্পের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেবে ১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থের মধ্যে কেআইটি এই নির্মাণ সংস্থাকে ৯ কোটি টাকা এবং ৪০ কাঠা জমি দেবে। এই জমি ব্যবহার করেই নির্মাণ সংস্থা তাদের বাকি অর্থ জোগাড় করবে। গল্ফক্লাব রোডের ঝোড়ো বস্তিতে যেখানে এই প্রকল্প হচ্ছে সেই বস্তি সংলগ্ন এলাকাতেই এই জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। এ ছাড়া বলা হয়েছিল, ২০১০-এর মার্চ থেকে শুরু করে ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তবে শর্ত থাকবে, আবাসন প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ সংস্থাটি ওই জমি ব্যবহার করতে পারবে না।
কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে কেআইটি-র মতবিরোধ শুরু হওয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নির্মাণ সংস্থার ডিরেক্টর রানা সরকারের কথায়: “উল্টোডাঙায় আবাসনের জন্য ইতিমধ্যেই তিনতলা পরিকাঠামো নির্মাণ করেছি। কিন্তু কেআইটি কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন, তা ঠিক ভাবে মানছিলেন না। আবার, গল্ফক্লাবে যে জমি দেওয়া হচ্ছিল, তা পুরোপুরি ৪০ কাঠা হচ্ছিল না।”

কেআইটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, নির্মাণ সংস্থাটিকে শর্তসাপেক্ষে গল্ফক্লাব রোডে যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল তা না নিয়ে উল্টোডাঙায় অন্য জমি নেওয়ার জন্য তারা কেআইটি-র কাছে আবেদন জানায়। সেটি না দিতে পারায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও প্রকল্পটি ফের বাস্তবায়িত করতে বর্তমানে যে পরিমাণ খরচ বেড়েছে নির্মাণ সংস্থা সেটিও চাইছিল। সরকারি চুক্তি হঠাৎ করে পাল্টানো যায় না বলেও ওই আধিকারিক জানান।
এ বিষয়ে রানাবাবুর জবাব: “আমি কোনও নির্দিষ্ট জায়গা চাইনি। যেখানেই জমি দেওয়া হোক না কেন, সেখানে শর্তানুযায়ী ৪০ কাঠা জমি দেওয়া হোক বলে জানিয়েছিলাম। গল্ফক্লাবের জমিটি পুরোপুরি ৪০ কাঠা না থাকায় অন্য জায়গায় জমির কথা বলি। এ ছাড়াও এই জমিতে যাঁরা ছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্যও জায়গা যথেষ্ট ছিল না। যে সময়ে কাজ শুরু করেছিলাম, তা চালু থাকলে প্রকল্প নির্মাণে কোনও রকম আর্থিক সমস্যা হত না। কিন্তু বর্তমানে সেই নির্মাণ খরচ ৩৪ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি টাকায়।”
তবে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “যে নির্মাণ সংস্থা এই কাজ শুরু করেছিল, কিছু দিন পরেই তারা সেই কাজ বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকেই এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই নির্মাণ সংস্থা যেটুকু অংশের কাজ করেছে তার জন্য তাদের যে অর্থ পাওনা, তা বরাদ্দ করা হবে। তার পর এই প্রকল্পের কাজের জন্য নতুন করে দরপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। এই প্রকল্প ফেলে রাখার কোনও অর্থ হয় না। প্রকল্পটি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.