দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
কাজ শুরু
সুদিনের আশায়
মা জলের সমস্যা দূর করতে ভূগর্ভস্থ নর্দমা নির্মাণের কাজ শুরু করল রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দফায় কামালগাজী মোড় থেকে গ্রিন পার্ক পর্যন্ত চলছে ভূগর্ভস্থ নর্দমা নির্মাণের কাজ। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, বর্ষার আগে প্রথম দফার কাজ শেষ করলে বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জমা জলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া যাবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এত দিন পর্যন্ত রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার সিংহভাগই ছিল খোলা নদর্মার উপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভস্থ নর্দমার মাধ্যমে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উঠলে জমা জলের সমস্যার একটা সুরাহা হতে পারে বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিমত। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফার কাজের জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। কামালগাজী, গ্রিন পার্ক ও নেতাজি স্পোর্টস কমপ্লেক্স সংলগ্ন সমস্ত এলাকার নিকাশি পথকে ভুগর্ভস্থ নর্দমার সাহায্যে আদিগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোট পরিচালিত রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পুরসভার বিরোধী দল বামফ্রন্টও। পাশাপাশি তাদের দাবি, পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ডেই এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে। পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা বর্তমান কাউন্সিলর সিপিআইয়ের তড়িৎ চক্রবর্তীর কথায়: “এত দিনে কাজটা শুরু হল। এটা খুবই ভাল। কিন্তু এখন রাস্তার এক দিকে কাজ হচ্ছে। ফলে উল্টো দিকের বাসিন্দারা এর কতটা সুফল পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বাসিন্দাদের একাংশের। পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে ভূগর্ভস্থ নর্দমাটি নিয়ে গেলে আরও বেশি সংখ্যক বাসিন্দা উপকৃত হতেন। এক কাজের জন্য পুরসভাকে দু’বার অর্থ ব্যয় করতে হত না।”
পুরসভা সূত্রে খবর, এত দিন এই পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার সিংহভাগ জল বহন করত নরেন্দ্রপুর কালভার্ট। কিন্তু এই নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হলে নরেন্দ্রপুর কালভার্টের উপরেও চাপ অনেকটা কমবে। কারণ নবনির্মিত ভূগর্ভস্থ নর্দমার জল কামালগাজী মোড়ের নতুন কালভার্ট হয়ে আদিগঙ্গায় পড়বে। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের নিকাশি পথকেও আদি গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে।
তবে আদিগঙ্গার সঙ্গে কিছু এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাকে যুক্ত করার কথা শুনে ক্ষুব্ধ আদিগঙ্গার পাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এবং কয়েকটি আবাসনের আবাসিকেরা। তাঁদের কথায়: দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় আদি গঙ্গা থেকে থেকে এমনিতেই জল নড়ে না।
ফি বর্ষায় জমা জলের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। আদিগঙ্গার উপরে চাপ বাড়লে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা সূত্রে খবর, আদিগঙ্গার সংস্কার নিয়ে তাদের তরফে এর মধ্যে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেচ দফতরের তরফ থেকে আদিগঙ্গা সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুরসভার কার্যনির্বাহী বাস্তুকার পার্থ গুপ্ত বলেন, “পুর এলাকার নিকাশি জল বেরনোর পথে যে বাধাগুলি রয়েছে, সেগুলি দূর হলেই বাসিন্দারা এই পরিকল্পনার সুফল পবেন।”
সোনারপুর (উত্তর) বিধানসভার বিধায়ক এবং বর্তমান বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ফিরদৌসি বেগম বলেন, “আগের বোর্ডের কাছেও অনেক বার এই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। বর্তমান বোর্ডের চেয়ারম্যান এই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য আমাকে সমস্ত রকম সাহায্য করেছেন।” আদিগঙ্গার সংস্কার নিয়ে রাজপুর-সোনারপুর পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রাজ্য সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল। তাঁর কথায়: “আদিগঙ্গার অবস্থা আমি ঘুরে দেখেছি। পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। সংস্কারের জন্য দফতরের বাস্তুকারদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.