পূর্ব কলকাতা
রাজস্ব ফাঁকি
হোর্ডিংয়ের আড়ালে
রাদ্দ করা আয়তনের দ্বিগুণ জায়গা নিয়ে রয়েছে বিশাল হোর্ডিং। তা-ও আবার অনুমোদিত মাপের চাইতে বেশি। একটি-দু’টি জায়গায় নয়, বিধাননগরের অনেক জায়গায় এ ভাবেই চলছিল হোর্ডিং ব্যবসা। বাসিন্দারা বেশ কয়েক বার দৃশ্যদূষণ রোধে হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণের দাবি জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দায়িত্বভার নেওয়ার কুড়ি মাস বাদে সমীক্ষা করতে গিয়ে এমন ঘটনাই প্রত্যক্ষ করলেন পুরকর্তৃপক্ষ। এই বেআইনি কাজের ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই পুরকর্তৃপক্ষ প্রায় ১৭৯টি হোর্ডিংকে ‘বেআইনি’ এবং ১৯০টিকে আইনি ঘোষণা করেছেন। ‘বেআইনি’ হোর্ডিং কাটার কাজও শুরু হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে সকলের চোখের সামনে রাজস্ব না দিয়ে দীর্ঘ দিন কী ভাবে এই হোর্ডিং ব্যবসা চলতে পারে?
বাসিন্দাদের বক্তব্য, কতটা নিয়ম মেনে হোর্ডিং ব্যবসা চলছে তা দেখার মতো পরিকাঠামো নেই। যদিও এই বক্তব্য অস্বীকার করে পুরকর্তৃপক্ষ জানান, পরিকাঠামো আছে। কিন্তু তা এত দিন কতটা কার্যকরী ছিল তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। খোদ পুরসভার পূর্ত বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ অনুপম দত্তের মতে, হাতে গোনা কয়েক জন নিয়ে হোর্ডিং দফতর। তা নিয়েও কাজ করা যায়। এত দিন তা কার্যকরী ছিল না। তবে পরিকাঠামো আরও মজবুত করা প্রয়োজন।
বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিল, বিধাননগরে হোর্ডিংয়ে ভরে গিয়েছে। বিধাননগরের সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি দৃশ্যদূষণও হচ্ছিল বলে তাঁদের অভিযোগ। ইএ ব্লকের বাসিন্দা সৌমেন রায়ের কথায়: “আগে সল্টলেক গাছগাছালিতে ভরা ছিল। শহরটাতে ঢুকেই মন ভরে যেত। কিন্তু ইদানীং গাছের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনই বাড়ছে হোর্ডিংয়ের সংখ্যা। যেখানে-সেখানে হোর্ডিং। পরিকল্পনা করে হোর্ডিং বসালেই ভাল। রোটারি বা আইল্যান্ডগুলিতে হোর্ডিং যে সংখ্যায় এবং যে ভাবে বসানো হয়, তাতে রাস্তার এ পার থেকে ও পারে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।”
বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “যথাযথ পরিকল্পনার অভাব। পুরসভার আয় বাড়ানোর অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু শহরের সৌন্দর্য বিসর্জন দিয়ে নয়। নিয়ন্ত্রিত আকারে হোর্ডিংয়ের পরিকল্পনা করুক পুরসভা।” যদিও পুরসভার আয়বৃদ্ধিতেও সহায়ক হতে পারে এই হোর্ডিং। চেয়ারম্যান পারিষদ অনুপমবাবু জানান, বছরে দশ-বারো কোটি টাকা আয় হতে পারে এই হোর্ডিং থেকে।
কিন্তু সেই হোর্ডিং দফতরে কর্মীর সংখ্যা কার্যত দু’জনের বেশি নয়। অথচ, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন থেকে বছরে পাঁচ কোটির বেশি আয় হয়। সেখানে কিন্তু পরিকাঠামো মজবুত। অনুপমবাবু বলেন, “এত দিন পরিকাঠামো থাকলেও তা কাজে লাগানো হয়নি। তবে এ বার পরিকাঠামো আরও মজবুত করে সমস্যার সমাধান করা হবে।”
বিধাননগর হোর্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিধান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরাও বেআইনি হোর্ডিং কাটার পক্ষে। বিধাননগরের বাসিন্দা হিসাবে যত্রতত্র হোর্ডিং দেখতে খারাপ লাগে। সৌন্দর্য বজায় রেখে হোর্ডিং বসানো হোক। কিন্তু সমস্যা হল, সকলের পক্ষে আধুনিক ব্যবস্থায় হোর্ডিং ব্যবসা চালানো মুশকিল। আশা করি, পুরকর্তৃপক্ষ কর্মসংস্থান ও আর্থিক দিকটিও বিবেচনা করবেন।”
কিন্তু এত দিন অভিযোগ ছিল, আয় বাড়াতে গিয়ে প্রাক্তন বাম পুরকর্তৃপক্ষ যত্রতত্র হোর্ডিং বসানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন ফের আয় বাড়াতে গিয়ে হোর্ডিং ব্যবসায় গুরুত্ব আরোপ করলে সমস্যা কি কমবে? অনুপমবাবু বলেন, “হোর্ডিং থেকে আয় বাড়ানো হবে, এটা ঠিক। কিন্তু যত্রতত্র নয়।
সৌন্দর্যায়নকে মাথায় রেখে, ট্রাফিকের সমস্যা যাতে না হয়, সে দিকগুলি খেয়াল রেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.