|
|
|
|
|
|
|
ব্যাগ গুছিয়ে... |
এলেম নতুন দেশে...
চার পাশের নিকষ কালো অন্ধকারে ঠিকরে বেরোচ্ছে ক্রিস্টালের
সাতরঙা দ্যুতি। দশটি ঘরে সুবিন্যস্ত নানা নিদর্শন। লিখছেন
বুধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
যখন স্যুটকেস গুছিয়ে কলকাতা থেকে বেরিয়েছিলাম, নতুন এতগুলো দেশ যে এক লহমায় দেখা হয়ে যাবে, এটা ভেবেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছিল। মাত্র আট-ন’দিনে আমাদের ঘোরা হয়ে গিয়েছে ইউরোপের চার-চারটি দেশ! কিন্তু সব দেখার পরেও তো মনটা নতুন কিছু খুঁজতে চায়, তাই আরও যে দেশটা এক কোণে মুখ লুকিয়ে আছে, এ বার সেটা দেখার আনন্দ। ছবির মতো, ছিমছাম এই দেশ যেন রয়ে গিয়েছে প্রচারের আলো থেকে খানিকটা দূরেই। নাম তার অস্ট্রিয়া।
|
|
আমরা যাব অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরে। ভেনিস থেকে ঘণ্টা ছয়েকের পথ। ভেনিসকে বিদায় জানিয়ে যে দিন বেরোবো, সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মাঝরাস্তায় সঙ্গী হল ঝিরঝিরে খানিক বৃষ্টিও। দুপুর নাগাদ পৌঁছলাম সরভ্স্কি-র ক্রিস্টাল মিউজিয়ামে। বাস থেকে নামতেই চোখেমুখে ঝাপটা মারল কনকনে হাওয়া। কিছুক্ষণ আগে ফের এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় মিউজিয়ামের চারপাশ তখন আরও সবুজ। প্রবেশপথে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত এক ‘জায়ান্ট ফাউন্টেন’।
গাছ কেটে তৈরি করা এই দৈত্যের মুখ দিয়ে অবিরত জল পড়ে চলেছে। মিউজিয়ামের ভিতরে আবার অন্য এক জগৎ। চারপাশের নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে ঠিকরে বেরোচ্ছে ক্রিস্টালের সাতরঙা দ্যুতি। দশটি ঘরে সুবিন্যস্ত নানা নিদর্শন। রাণাপ্রতাপের ঘোড়া, ক্রিস্টালে মোড়া ‘চেতক’-এর পাশাপাশি দেখা যাবে সূর্য-চাঁদের ‘বল ডান্সও’। মিউজিয়ামের একতলায় বিশাল হলঘরে চলছে গয়না, ফুলদানি, স্মারক প্রভৃতির বিকিকিনি। সব মিলিয়ে এমন অনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। |
|
ইন্সব্রুক পৌঁছলাম পড়ন্ত বিকেলে। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে খালের মতো ‘ইন্ৎজ’ নদী। তার থেকেই নামকরণ এই শহরের। শনিবারের বিকেলে শহরটা যেন খানিকটা শান্ত। কারও কোনও তাড়াহুড়ো নেই। আমরাও ধীরে-সুস্থে হেঁটে দেখে নিলাম ছোট্ট শহরটার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, দু’পাশের সাজানো দোকান। মাঝেমধ্যেই, ঘোরার ফাঁকে মনে ভেসে উঠছিল কলকাতার সঙ্গে ইন্সব্রুকের তুলনা। এক ঘণ্টা শহরটা ঘুরে রাতের খাওয়া সারা হল হোটেল শের-ই-পঞ্জাবে। তার পরের ঠিকানা সোজা হোটেল।
ইন্সব্রুকে একটু বেশি দিন থাকার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। থাকার মেয়াদ মাত্র এক রাত। পরদিন ঘুম ভেঙে মনে হল, কোথায় যেন একটা মন-খারাপ-করা শেষের সুর বাজছে। এ বার আমাদের গন্তব্য ‘মুনচেন’ বা মিউনিখ। জার্মানির সব চেয়ে সুন্দর এই শহর ইন্সব্রুকের থেকে মাত্র তিন ঘণ্টা। |
|
যে দিন মিউনিখে পা রাখলাম, সেটা ছিল রবিবার। সোনা-রোদে মোড়া ছুটির সকালে শহর জুড়ে যেন বন্ধ-এর ছবি। সুনসান পথে মাঝে মাঝে হুশহাশ করে গাড়ি যাওয়ার শব্দ। বাস থেকে নামতেই জার্মান ভাষায় সাদর অভ্যর্থনা জানালেন স্থানীয় গাইড। আমাদের সক্কলের দেশ ভারতবর্ষ শুনে তাঁর কী আনন্দ! খানিকটা ইংরেজিতে, খানিকটা জার্মান ভাষায় তিনি শেষমেশ আমাদের বুঝিয়েই ছাড়লেন, ভারত তাঁর কত প্রিয়। তাঁর সঙ্গে ঘোরা হল ‘মারিয়ান প্লাৎজ’, ‘বিয়ার হাউস’ এবং ‘হার্ড রক কাফে’। ‘বিয়ার হাউস’-এ ঠিক কলকাতার কফি হাউসের মেজাজ। গান-বাজনার তালে, চুরুটের ধোঁয়ায়, ‘বিয়ার-মাগের’ ঠুংঠাং আওয়াজের সঙ্গে সেখানে চলছে নির্ভেজাল আড্ডা। কে বলল, বাঙালিই একমাত্র আড্ডাপ্রিয়! |
|
আর যা এত দিন দেখে এসেছি অলিম্পিকের চৌহদ্দিতেই, এ বার সেটা দেখলাম সামনাসামনি। তা হল ‘মিউনিখ ম্যারাথন’। তরুণ থেকে প্রৌঢ় বুকে ব্যাজ এঁটে দৌড়চ্ছেন সকলে। তাঁদের উৎসাহ দিতে রাস্তার দু’পাশে রঙিন পতাকা হাতে, গালে রং মেখে উৎসুক জনতার প্রবল ভিড়। যেন ইডেন গার্ডেন্সে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচ চলছে! সব মিলিয়ে একটা রঙিন পরিবেশ। ঘোরা যখন শেষ হল, তখন বিকেল। রাস্তায় একটু একটু করে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। আমাদের তখন ঘোরার শেষ প্রহর।
পশ্চিম দিগন্ত ভ্রমণ-শেষে এ বার ঘরে ফেরা। রোজকার কর্মব্যস্ত কলকাতা মহানগরীর অমোঘ টান এড়ানো সত্যিই বড় কঠিন। মনটা যতই পালাই-পালাই করুক, বাঙালির উচাটন মন প্রবাসে বেশি দিন রয় না যে! |
|
|
|
|
|