১৯ নভেম্বর, ১৯৮৯।
১৮ মার্চ, ২০১২।
সাড়ে বাইশ বছরের ব্যবধান। কিন্তু অদৃষ্টের এমন খেলা যে, একই ট্রাপিজের খেলার সামনে পড়তে হচ্ছে সচিন রমেশ তেন্ডুলকরকে। পাকিস্তানকে হারাও। ক্রিকেট-মাহাত্ম্যের প্রমাণ দাও।
কে মনে রাখবে করাচিতে সেই অভিষেক টেস্ট ম্যাচে যিনি ষোলো বছরের ঝাঁকরা চুলের বিস্ময় বালককে রক্তাক্ত করে দিয়েছিলেন, তিনি এখন কমেন্ট্রি বক্সে। ওয়াকার ইউনিস। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক যিনি ছিলেন, তিনি পাকিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়ছেন। ইমরান খান। প্রতিপক্ষের আর এক প্রধান বোলার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং পরামর্শদাতা। ওয়াসিম আক্রম। নিজের টিমের ক্যাপ্টেন এখন জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। ওপেনার এখন সাংসদ। নভজ্যোৎ সিধু।
বাকি সবাই অতীত। সচিন তেন্ডুলকর এখনও বর্তমান। কী রকম বর্তমান? না, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পর প্রথম ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আবহকেও যিনি পিছনে ফেলে দিতে পারেন। এমনিতে উপমহাদেশে এখন ভারত-পাক ম্যাচ মানে সচিনের শততম সেঞ্চুরির মতোই বিরল মঞ্চ। কিন্তু বরাবরের মহারণের সেই ছবিও ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছে সচিনকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করতে চান। আজই আসতে চেয়েছিলেন। কোনও কারণে সেটা হল না। পাকিস্তান ম্যাচের পর হতে পারে। চূড়ান্ত রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন আর পুষ্পস্তবক পাঠাতে যদিও ভোলেননি। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিনিধিরা চলে এলেন সকাল সকাল। পুষ্পস্তবক আর অভিনন্দন সহকারে। নৈশভোজের আমন্ত্রণও বোধ করি দেওয়া হল তাঁকে। |
কিন্তু তিনি সচিন তেন্ডুলকর—আপাতত সমস্ত নিমন্ত্রণই এক দিন পিছিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তান ম্যাচে না জিততে পারলে যে এশিয়া কাপ থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যেতে পারে। আর তা বেজে যাওয়া মানে যে, তিনি জিতেও টিম ইন্ডিয়া-র বিপর্যয় অব্যাহত থাকা, সেটা খুব ভাল মতোই তিনি বুঝতে পারছেন। এ দিন সাংবাদমাধ্যমের অনেককে যার জন্য অনুরোধ করলেন, পাকিস্তান ম্যাচটা পেরিয়ে যেতে দিন। তার পর আবার আপনাদের অনুরোধ রাখব।
সন্ধের দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নেমে সচিনদের কাজ যেন আরও কঠিন করে দিল। রবিবারের ম্যাচ নিয়ে সামান্য হলেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাতের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলেও রবিবার পরিষ্কার আকাশ না থাকে তা হলে সমস্যা। অদ্ভুত হচ্ছে, ভারতীয় শিবিরের কাছে যা খবর তাতে নেট রানরেটে তারা এগিয়ে। আবার বাংলাদেশ শিবির মনে করছে ভারতকে হারিয়ে তারা নেট রানরেটে এগিয়ে গিয়েছে। ভারত বনাম পাকিস্তান বরাবর এশিয়ার সেরা ক্রিকেট-যুদ্ধ। কিন্তু শুক্রবার বাংলাদেশ ধোনির দলকে হারিয়ে দেওয়ার পর যেন ভারত বনাম বাংলাদেশ একটা ক্রিকেটীয় রেষারেষির জায়গাও তৈরি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, গত কাল ম্যাচের পর বেশ কিছু মন্তব্য উড়ে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দিকে। সচিনের এমন মহাকীর্তির দিনেও। যার উত্তর একমাত্র দেওয়া সম্ভব যদি পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাকা করা যায়।
পরিস্থিতি বিচার করে মনে হচ্ছিল, সচিন শততম সেঞ্চুরি করে চাপ কেটে বেরোলেন? নাকি আরও বেশি করে চাপের মধ্যে পড়লেন? সচিনরা কি আদৌ চাপ থেকে বেরোতে পারেন? কে জানে! |