রাজ্যসভায় দলের উপনেতাকে জিতিয়ে আনা নিয়ে বিজেপির ভিতরের কোন্দলটা প্রকাশ্যে চলে এল ফের।
গত কাল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেট পেশের পর বিজেপির সব শীর্ষ নেতা রাজ্যসভার নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেন। রাজ্যসভায় দলের নেতা অরুণ জেটলি। আর উপনেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। প্রথম জনের নাম গুজরাত থেকে চূড়ান্ত হয়ে গেলেও অহলুওয়ালিয়ার ভাগ্য ঝুলিয়ে রেখেছে দল।
প্রকাশ্যে দলের বক্তব্য, বিহারে দু’টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পর তৃতীয় আসনটির জন্য জেডি(ইউ)-এর সমর্থন প্রয়োজন। ওই আসনটিই অহলুওয়ালিয়ার জন্য ভাবা হচ্ছে। যদিও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সেই আসনটি নিজেদের হাতেই রাখতে চান। সেই জট কাটাতে জেটলি আজ রাতে নীতীশের বৈঠকও করেন যদিও বিজেপি সূত্রেই বলা হচ্ছে, দলের রাজ্যসভার উপনেতাকে জিতিয়ে আনার জন্য নীতীশের সঙ্গে এই দর কষাকষির দরকারই ছিল না। দলের সব নেতা এক হলে প্রথম দু’টি আসনের মধ্যেই তাঁকে রাখা যেত।
বিহার থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদের আসনটি ফাঁকা হওয়ায় তাঁকে ফের সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজেপির ভাগের দ্বিতীয় আসনটিতে ওড়িশার নেতা ও নিতিন গডকড়ীর ‘বিশ্বস্ত’ ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এই প্রথম রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হচ্ছে। অহলুওয়ালিয়া এত দিন ঝাড়খণ্ডের সাংসদ থাকলেও এখন সেখান থেকে তাঁকে জিতিয়ে আনতে কেনাবেচার আশ্রয় নিতে হবে। সে কারণেই তাঁর নাম বিহার থেকে ভাবা হচ্ছে।
যদিও দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসল কারণটা ভিন্ন। দলের কিছু নেতা বাদ সাধায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে অহলুওয়ালিয়ার ভাগ্য। বিজেপির এক নেতার কথায়, রাজ্যসভার উপনেতা সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ। উভয়েই প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকারও করেন। সপ্তাহে প্রতি দিনই যে রঙের শাড়ি পড়ে আসেন সুষমা, অহলুওয়ালিয়াও সেই রঙের পাগড়ি পড়েন।
এ হেন সুষমা-ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে দলের রাজ্যসভার সদস্যরা অনেকেই পছন্দ করেন না। তাই বিহার থেকে তাঁর নাম তৃতীয় পছন্দে রেখে সুকৌশলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে অহলুওয়ালিয়ার ভাগ্য। এর মধ্যে গডকড়ী-জেটলি ‘অক্ষের’ হাতও দেখছেন অনেকে। অনেকে আবার এই সুযোগে সুষমা ও জেটলির মধ্যে বিবাদ আবার উস্কে দিতে চাইছেন।
এ বারের রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮টি আসন শূন্য হয়েছে। তার অনেকগুলিই বরাদ্দ হয়েছে গডকড়ী-ঘনিষ্ঠদের জন্য। বিহার থেকে ধর্মেন্দ্র প্রধান ছাড়াও হিমাচল প্রদেশ থেকে জগৎপ্রকাশ নাড্ডা ও মহারাষ্ট্র থেকে ব্যবসায়ী অজয় সঞ্চেতিকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসছেন বিজেপি সভাপতি। এমনকী, ভোট-ঘুষ কাণ্ডে জড়িত ফগ্গন সিংহ কুলস্তে, নাজমা হেপতুল্লা, উত্তরপ্রদেশে হারের পরেও বিনয় কাটিয়ারের নাম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তবু রাজ্যসভার উপনেতার নাম চূড়ান্ত করা হয়নি প্রথম দফায়।
বিহারের তৃতীয় আসনটি নিয়ে নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিবাদ থাকা সত্ত্বেও।
অহলুওয়ালিয়া-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে নানা বিষয়ে চাপে রাখার কাজটি কার্যত একা হাতেই করেন অহলুওয়ালিয়া। তাঁর দাপটে কংগ্রেস রাজ্যসভায় বিপাকেও পড়ে। বিজেপিতে নেতায়-নেতায় কোন্দলে যদি এমন এক জন দক্ষ নেতা রাজ্যসভায় ঠাঁই না পান, আখেরে দলকেই তার খেসারত দিতে হবে।” |