মহাত্মা গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই পটেল, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গাঁধী। তার পরে এ বারে নরেন্দ্র মোদী। ‘টাইম’ পত্রিকায় এই প্রথম ভারতের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে ‘প্রচ্ছদ নিবন্ধ’ প্রকাশিত হল। বলা হল, দু’বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচনে সনিয়া-পুত্র রাহুল গাঁধীকে টক্কর নিতে পারেন একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই। গোধরা কলঙ্ক থাকলেও দেশকে দুর্নীতি ও অদক্ষ নেতৃত্ব থেকে রেহাই দিতে মোদীই যে একমাত্র মুখ, সে কথা ফলাও করে দাবি করা হয়েছে এই পত্রিকায়।
পত্রিকার এই সংখ্যাটি প্রকাশের পর থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন মোদী। তাঁর সরকার বিষয়টি নিয়ে ঢালাও প্রচারও শুরু করেছে। বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও মোদীর হয়ে তারিফের সুর গাওয়া হচ্ছে। মোদী সরকারের পক্ষেও দাবি করা হচ্ছে, ১৯২৩ সাল থেকে এই পত্রিকায় আজ পর্যন্ত ভারতের যে ক’জন হাতে গোনা রাজনীতিক প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন, মোদী ছাড়া তাতে কোনও মুখ্যমন্ত্রী নেই, আর সকলেই কোনও না কোনও ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত।
লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিজেপির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড় অব্যাহত। সেই সময় মোদীকে নিয়ে এই ‘প্রচার’ ভাল চোখে দেখছেন না দলেরই অনেকে। বিশেষ করে মোদী সরকার যে ভাবে বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি করছে, তার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য দেখছেন নেতৃত্ব। দলের এক শীর্ষ নেতা কিছুটা কটাক্ষের সুরে বলেন, “আন্তর্জাতিক স্তরে মোদী যতই স্বীকৃতি পান, তা নিয়ে জাতীয় স্তরে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার যতই চেষ্টা করুন, আদতে বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্বই ভবিষ্যতে তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সেখানে কোনও আন্তর্জাতিক পত্রিকার মুরুব্বিয়ানা কাজে লাগবে না।”
আবার দলের এক মুখ্যমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্তরের তারিফকে প্রকাশ্যে খাটো করেও দেখাতে পারছে না বিজেপি। বিশেষ করে যে মোদীকে আমেরিকা ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল, তারাই যখন ধারাবাহিক ভাবে তাঁর তারিফ করছে। গত বছরও মার্কিন সরকারের একটি সমীক্ষক সংস্থা মোদীকে ‘ভারতের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী’ পদের যোগ্য বলে মন্তব্য করেছিল। বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নকভিকেও তাই আজ বলতে হয়েছে, “গোটা বিশ্বে মোদীর মতো নেতা নেই। আন্তর্জাতিক মহলও তাঁর কাজের স্বীকৃতি দিচ্ছে।” কিন্তু যখনই প্রশ্ন উঠছে, মোদীই কী বিজেপির ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী? সে প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে চলেছেন বিজেপি নেতারা।
যে সঙ্ঘ পরিবার মোদীর অহং-এ বীতশ্রদ্ধ, তাদের একাংশও এখন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছে। সঙ্ঘের পক্ষে পত্রিকার একটি নকল ছবিও বের করা হয়েছে। পত্রিকার আসল প্রচ্ছদে বলা হয়েছে, ‘মোদী মিন্স বিজনেস’। আর সঙ্ঘ নকল ছবি ছাপিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, ‘দিগ্বিজয় মিন্স আরএসএস’। যে দিগ্বিজয় কথায় কথায় আরএসএসকে তুলোধোনা করেন, তাঁকে ‘সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ’ বলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না তারা, আবার ভারতের রাজনীতি নিয়ে মার্কিন পত্রিকার জ্ঞানগম্যিকেও ব্যঙ্গ করা হল। কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভি অবশ্য বলেন, “গোটা বিশ্ব জানে, গুজরাতে দাঙ্গা করেছেন মোদী। সেই কলঙ্ক কোনও চেষ্টাতেই মুছবে না। আর রাহুল গাঁধীর সঙ্গে সেই মোদীর তুলনা করাটা একেবারেই হাস্যকর।” |