হিন্দি বলয়
কবে সাবালক হবে দল, প্রশ্ন ‘কারাট-তালুকে’ই
হিন্দি-বলয়ে বিধানসভা ভোটে বিশ্রী ফলাফলের পর নিজের ‘খাস তালুকে’ই প্রশ্নের মুখে প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীরা! তা-ও সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের আগেই!
কিউবায় কাস্ত্রো থেকে কেরলে উম্মেন চান্ডির সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত বা গ্রিসের অর্থনীতির সঙ্কট বাম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পৃথিবীর যে কোনও ঘটনার বিশ্লেষণ চলে যে ওয়েবসাইটে, সেখানেই উগরে দেওয়া হয়েছে হিন্দি-বলয়ে বামেদের হতশ্রী দশা নিয়ে ক্ষোভ!
তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাটের অনুগামীরা ওই সাইটের সম্পাদকীয় বোর্ডে আছেন। প্রভাত পট্টনায়ক, প্রসেনজিৎ বসুরা ওই সাইটে নিয়মিত লেখক। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ওই সাইটে যা ‘পোস্ট’ জমা পড়েছে, তার নির্যাস হিন্দি-বলয়ে আর কবে ‘সাবালক’ হবে সিপিএম? ‘যোগ্য নেতৃত্বে’র হাতে কেন হিন্দি-বলয়ে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না?
ঘটনাচক্রে, হিন্দি-বলয়ের যে তিন রাজ্যে ভোট হল, তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের দায়িত্বে যথাক্রমে কারাট ও তাঁর ঘরণী, পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। পঞ্জাবের দায়িত্ব নীলোৎপল বসুর হাতে। বাম রাজনীতির প্রতি ‘সহমর্মী’রা ওই সাইটে বলেছেন, হিন্দি-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে বামেরা কোনও আসন পায়নি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ‘উদ্বেগজনক’ তাদের ক্রমশ ভোট কমে-যাওয়া। এমনকী, এমনও বলা হয়েছে যে, দীর্ঘ গণ-আন্দোলন এবং সাড়ে তিন দশকের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বামদুর্গ নির্ভরশীল ছিল বিরোধী ভোট বিভাজনের উপর। কংগ্রেস-তৃণমূল সেই বিভাজনের ‘ক্রাচ’ কেড়ে নিতেই ভেঙে পড়ল বাম দুর্গ! প্রশ্ন উঠেছে, সর্বত্রই কেন সিপিএমকে এমন সব ‘ক্রাচে’ ভর করে চলতে হবে?
কেরল, দিল্লি বা তামিলনাড়ু থেকে বক্তব্য এসেছে: শুধু পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া এলাকায় সংগঠন গড়তে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়ার ‘লাইনে’র পুনর্বিবেচনা করা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের সালকিয়া প্লেনামে। তার সাড়ে তিন দশক পরেও হিন্দি-বলয়ে সিপিএম এঁটে উঠতে পারল না কেন?
এক সাবস্ক্রাইবারের ‘পোস্ট’: সৎ ও আন্তরিক ভাবে কাজ করবেন, এমন স্থানীয় নেতৃত্ব খুঁজে বার করতে পারলে তবেই সংগঠনের প্রসার ঘটানো সম্ভব। এ কে জি ভবনের ঠান্ডা ঘরে বসে বক্তৃতা করবেন, পার্টি সম্মেলনের নামে সারা ভারতে উড়ে বেড়াবেন এবং কখনও-সখনও বিলেতে বক্তৃতা করতে যাবেন শুধু এমন নেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে ভরাডুবি অনিবার্য!
সিপিএমের অন্দরের ব্যাখ্যায়, ওই আক্রমণের ইঙ্গিত কারাট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের দিকেই। এই সূত্রেই এসেছে রাজস্থানের কথা। ‘পোস্ট’ জমা পড়েছে, রাজস্থানে ২০০৮-এর বিধানসভা ভোটে সিপিএম তিনটি আসন জিতেছে। ওই রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় তাদের সাংগঠনিক অস্তিত্ব জমাট বাঁধছে। হিন্দি-বলয়ের মধ্যে রাজস্থানে এমন সম্ভব হলে গঙ্গা অববাহিকার অন্যান্য রাজ্যে কেন দাঁত ফোটানো যাবে না? ‘যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা’ চেয়েছেন মতদাতারা।
প্রাথমিক ‘ব্যাখ্যা’ যাঁর কাছে রয়েছে, ঘটনাচক্রে তিনি বঙ্গসন্তান! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান্নান মোল্লা। দলের তরফে রাজস্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হান্নান বলছেন, “রাজস্থানে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলেছি। ওখানকার সব চেয়ে বড় সমস্যা জল। তাই জলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করি। তার পর বিদ্যুৎ। মানুষের দাবি নিয়ে মানুষের মধ্যে কাজ করলে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়।” হান্নানের আরও বক্তব্য, “আদিবাসীদের নিয়েও আমাদের সংগঠন আন্দোলন করেছে। তবে শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, তার ফসলকেও সংগঠনের কাজে লাগাতে হবে। অন্য রাজ্যে সেটা হয়তো হচ্ছে না।” হান্নান না-বললেও তাঁর কথা থেকে যা বেরিয়ে এসেছে স্থানীয় সমস্যা বাদ দিয়ে শুধু তত্ত্ব-কথা আওড়ালে সংগঠন বাড়বে না।
রাজস্থানের উল্টো ছবি উত্তরপ্রদেশে! ২০০২-এ মেজা এবং নাজিবাবাদ আসন দু’টি জিতেছিল সিপিএম। মায়াবতীর সাফল্যের তোড়ে ২০০৭ সালে দু’টি আসনই হারানোর পর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্রের বিশ্লেষণ ওয়েবসাইটে উদ্ধৃত করেছেন এক ‘শুভাকাঙ্খী’! বোঝাতে চেয়েছেন, সিপিএমের আলোচনা আর ফলিত স্তরে প্রয়োগের তফাতের বৃহত্তম উদাহরণ পাঁচ বছরের ব্যবধানে উত্তরপ্রদেশ।
দলের অন্দরে চর্চা হচ্ছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) এ বার এসএফআইয়ের ‘ভূমিশয্যা’ নিয়েও। ওই নির্বাচনের দায়িত্বও ছিল কারাট-অনুগামীদের হাতে। কাছাকাছি সময়ে এসএফআই অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, মহারাষ্ট্রের বাবাসাহেব অম্বেডকর মারাঠওয়াড়া বিশ্ববিদ্যালয়, তামিলনাড়ুর তাঞ্জোর এবং নেল্লাই এম এস বিশ্ববিদ্যালয়, কেরলে ৯টির মধ্যে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিপুরার সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে (কেরল ও ত্রিপুরায় সিপিএমের সংগঠন অবশ্য শক্তিশালী) জিতেছে। রাজস্থানে গত দু’বছর ধরে তাদের আসন বাড়ছে। তা হলে জেএনইউ-এ সাম্প্রতিক কালের জঘন্যতম ফল হল কেন প্রশ্ন তা নিয়েই।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি-সহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে কারাট-শিবির এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। কোঝিকোড়ের পার্টি কংগ্রেসেও কারাটের ‘ইচ্ছা’র বাইরে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু তার আগেই ‘অপ্রিয় প্রশ্ন’ উঠে পড়ল কারাটের জন্য!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.