সমাজবাদী পার্টিকে শরিক করে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারকে স্থিতিশীল করতে চাইছে ঠিকই, কিন্তু এখনই সেই প্রস্তাবে বিশেষ আগ্রহী নন মুলায়ম সিংহ যাদব। তাঁর মত, তৃণমূল যত ক্ষণ ইউপিএ-র শরিক রয়েছে, তত ক্ষণ তাঁদের পক্ষে সরকারে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
তার কারণটাও নিতান্তই সহজ। সপা শিবিরের দাবি মতো প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মুলায়মকে দিতে রাজি নয় কংগ্রেস। মন্ত্রিসভায় মর্যাদার নিরিখে এর পরেই রয়েছে রেল মন্ত্রক। যা এখন তৃণমূলের হাতে। ফলে তৃণমূল যদি সরকারে থাকে সেই মন্ত্রকও মুলায়মের পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর তা-ই যদি হয়, তা হলে তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কোনও মন্ত্রক নিয়ে কেন মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে সপা! দলেও এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তবে মুলায়ম কংগ্রেসকে এটুকু আশ্বস্ত করে রেখেছেন যে, বাইরে থেকে ইউপিএ সরকারকে যে সমর্থন তিনি দিচ্ছেন, অটুট থাকবে।
কেন মুলায়মকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দিতে আপত্তি সে সম্পর্কে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমল থেকেই এই মন্ত্রক কোনও শরিকের হাতে ছাড়া হয়নি। তার অন্যতম কারণ ছিল, এনডিএ জমানায় প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। তখন মন্ত্রকের ভার ছিল শরিক নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজের হাতে। ইউপিএ আমলে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে সনিয়া-মনমোহন গোড়া থেকে সজাগ ছিলেন। সেই জন্য প্রথমে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পরে এ কে অ্যান্টনির মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়। আর এখন টুজি নিয়ে শরিক ডিএমকে-র বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তো প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শরিকের হাতে ছাড়ার ঝুঁকি নিতে আরও ভয় পাচ্ছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
অন্য দিকে তৃণমূল যত দিন সরকারে আছে তত দিন রেল মন্ত্রকের উপরে তাদের স্বাভাবিক দাবি থাকবে। তৃণমূলের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে রেল মুলায়মকে দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা তৃণমূলকে ইউপিএ থেকে বার করে দেওয়া হবে। স্বাভাবিক কারণেই তা করতে চায় না কংগ্রেস। ফলে মুলায়মের দাবি পূরণ করে তাঁকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া যাচ্ছে না।
তবে কংগ্রেসের আশা, মমতা যে দিন সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবেন, তার পর দিনই মুলায়ম মন্ত্রিসভায় সামিল হওয়ার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দেবেন। কংগ্রেসের ওই নেতার সরস মন্তব্য, “তখন তো মুলায়মের ‘একটা কিনলে দুটো ফ্রি’ পাওয়ার মতো অবস্থা হবে। শুধু যে তিনি রেলমন্ত্রী হতে পারবেন তা নয়, তাঁর দলের আরও দু’জনকে পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে।”
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূল মন্ত্রিসভায় থাকা অবধি মুলায়মের সরকারে যোগ দিতে না-চাওয়াটা হতাশার নয়। বরং আশা করা হচ্ছে, কেন্দ্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মুলায়মের সমর্থন হাতের পাঁচ হিসেবে থাকবে।
কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার যুক্তি, “মুলায়ম কেন্দ্রে কংগ্রেসের পাশে না-দাঁড়ালে আখেরে বিজেপি শক্তিশালী হবে। তাতে উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘুরা খুশি হবেন না। লোকসভা ভোটের সময় তার গুণাগার দিতে হতে পারে মুলায়মকে। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবকে সুশাসন কায়েম করতে গেলে কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন।”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, রেল বাজেট ও তার আগে পরের একাধিক ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর চটে রয়েছেন। একান্তে তাঁরা বলছেন, তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেই ভাল। কিন্তু দলের বর্ষীয়ান নেতাদের মতে, যত বেশি শরিক ও সমর্থক থাকবে ততই ভাল। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে। কারণ, সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থীকে জেতাতে তৃণমূলের সমর্থনও জরুরি। তা ছাড়া, মুলায়মকে কেন্দ্রে শরিক করার সুযোগ এর পরেও থেকে যাচ্ছে। সুতরাং কংগ্রেস কেনই বা তাড়াহুড়ো করে বিকল্প সীমিত করে ফেলবে? তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে তখন মুলায়মকে পাশে পেতে না হয় সব রকম ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
কংগ্রেসের তরফে তাই তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। তার ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ বলেন, “তৃণমূল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের গোড়া থেকে শরিক হিসেবে রয়েছে। এই সম্পর্ক থাকবে।” পাশাপাশি মুলায়মকে শরিক করার ব্যাপারে কংগ্রেসের তৎপরতাকে স্রেফ সংবাদমাধ্যমের জল্পনা বলেও উড়িয়ে দেন তিনি। |