নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার প্রশ্নে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) এলাকার মধ্যে তরাই এবং ডুয়ার্সকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।শুক্রবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে বৈঠকের পরে মোর্চা নেতারা বলেছেন, “তরাই ও ডুয়ার্সকে অন্তর্ভুক্ত না করে জিটিএ-র নির্বাচন করা যাবে না। আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।” যদিও মুখ্যসচিব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে তেমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং জিটিএ-এলাকায় যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন মেটাতে চায় সরকার।
দার্জিলিং পাহাড়ে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির পর্যবেক্ষকদের অনুমান, দু’পক্ষ ‘অনড়’ থাকলে, পাহাড়ে ফের ‘সংঘাতের’ ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সমতলেও। বস্তুত, বৃহস্পতিবারেই জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতায় তরাই-ডুয়ার্সের নানা এলাকায় রেল অবরোধে নামে ১১টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। যদিও মুখ্যসচিব বলেছেন, “মোর্চার এই দাবির কারণে নতুন কোনও সঙ্কট তৈরি হল বলে মনে করি না।” |
জিটিএ আইন কার্যকর করে বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার ‘জিটিএ নির্বাচনী বিধি’ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়। এটাই নির্বাচনের মাধ্যমে ৪৫টি আসন বিশিষ্ট জিটিএ গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ। সরকারি সূত্রের খবর, এর পরে জিটিএ-র নির্বাচন তদারকির জন্য কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচনী অফিসার নিয়োগ করে আরও দু’টি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। সেই সঙ্গেই জারি হবে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করার বিজ্ঞপ্তি। এই সব কাজ মিটলে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে রাজ্য। কিন্তু জিটিএ গঠনের পরে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) আওতায় যে এলাকা ছিল আপাতত সেখানেই জিটিএ-র নির্বাচন হবে। তাতেই বেঁকে বসেন মোর্চার কট্টরপন্থীরা। তাঁদের আশঙ্কা, শুধু ডিজিএইচসি আওতাভুক্ত এলাকায় ভোট হলে ঘরে-বাইরে মোর্চাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, সুবাস ঘিসিংকে হটিয়ে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করার পর থেকে বিমল গুরুঙ্গ তরাই-ডুয়ার্সের কিছু অংশ পাহাড়ের স্বশাসনের আওতায় আনা হবে বলে যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার কী হল?
এই পরিস্থিতিতেই এ দিন মোর্চার নেতারা (রোশন গিরি, হরকা বাহাদুর ছেত্রী প্রমুখ) মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ঘণ্টা দু’য়েকের বৈঠকের পরে রোশন গিরি বলেন, “আমাদের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের সই করা একটি স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছি। রাজ্য সরকার বলছে, জিটিএ-তে তরাই, ডুয়ার্স অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে কমিটি (শ্যামল সেন কমিটি) গঠন করা হয়েছে তার রিপোর্ট মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জিটিএ-এর মধ্যে তরাই, ডুয়ার্স না পেলে সমস্যা হবে।” ওই নির্বাচনের আগে মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি তৈরি করার প্রস্তাবও রাজ্য প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। রোশন গিরি, হরকা বাহাদুর ছেত্রীদের বক্তব্য, “সমস্যার সমাধান হবে কোন পথে, তা রাজ্য সরকারকেই ঠিক করতে হবে।” যদিও মুখ্যসচিব বলেন, “বহু আলোচনা করে মোর্চার সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চুক্তি হয়েছে। তারপরে জিটিএ আইন হয়েছে। অনেক ভেবেই এ সব করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট দেখার পর নির্বাচন হবেএমন কথা আইনে নেই। এখন আইনের বাইরে যাওয়ারও জায়গা নেই।” তাঁর বক্তব্য, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিটিএ এলাকায় নির্বাচন করতে হবে। আশা করি, মোর্চা নেতারা এটা বুঝবেন।” তাঁর সংযোজন, “ওরাই (মোর্চা) তো বলেছিল, ২৭ মার্চের মধ্যে জিটিএ বিল সই না হলে, আন্দোলন করবে। এই আইন তৈরি করার জন্য এত উদ্যোগ, রাষ্ট্রপতির সইএর তো একটা অলিখিত উদ্দেশ্য থাকে। তা হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যা সমাধানের পথে এগোনো।” |