‘নয়া চমক’ নেই, নতুন হকার-নীতি তৈরি করছে রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফুটপাথের হকার নিয়ন্ত্রণে নতুন হকার-নীতি তৈরি করছে রাজ্য সরকার। অবশ্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যে জাতীয় হকার-নীতি তৈরি করেছিল, তার ভিত্তিতে ২০১০ সালে রাজ্য সরকারও একটি খসড়া হকার-নীতি তৈরি করে। নতুন সরকার যে ‘নতুন’ হকার-নীতি তৈরি করছে, তার মধ্যে তেমন নতুন কিছু এখনও দেখা যাচ্ছে না। কলকাতা বা রাজ্যের অন্য কোনও বড় শহরে হকারেরা নতুন করে যাতে আর কোনও রাস্তা বা জায়গা দখল করতে না-পারেন, তা সুনিশ্চিত করা হবে হকার-নীতিতে। ফুটপাথ বা রাস্তার উপরে নতুন করে আর বড় ধরনের কাঠামোও গড়তে দেওয়া হবে না। হকার সমস্যার-সমাধানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রী-গোষ্ঠী গঠন করেছে, সেই গোষ্ঠীর প্রধান, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু শুক্রবার মহাকরণে এ কথা জানিয়েছেন।
পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, হকার-নীতি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আগামী বুধবার মহাকরণে ওই মন্ত্রী-গোষ্ঠীর বৈঠক বসবে। ওই গোষ্ঠীর অন্য সদস্যেরা হলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং হাওড়া, বিধাননগর, ব্যারাকপুর এবং দুর্গাপুর-আসানসোলের পুলিশ কমিশনারদেরও ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠক করেছিলেন। তার পরেই তাঁর নির্দেশে মন্ত্রী-গোষ্ঠী গঠন করা হয়। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, প্রাথমিক আলোচনায় হকার-নীতির একটা খসড়া ভাবা হয়েছে। তার মূল কথাই হল, ফুটপাথে পথচারীদের জন্যও যথেষ্ট জায়গা ছাড়তে হবে। গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য যে অসংখ্য হকার কলকাতা ও অন্যান্য শহরের রাস্তা বা ফুটপাথের অনেকটা জায়গা দখল করে কারবার চালাচ্ছেন, তাঁদের রাতারাতি তুলে দেওয়া যায় না। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো, তাঁদেরও গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান করার অধিকার আছে। কিন্তু, একই সঙ্গে ফুটপাথ দিয়ে পথচারীদের স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করার যে অধিকার রয়েছে, তাকেও এ বার হকার-নীতিতে স্বীকৃতি দেবে রাজ্য সরকার। গোটা ফুটপাথ যাতে হকারদের দখলে চলে না যায়, তা সুনিশ্চিত করাই হবে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। হাওড়ার বঙ্কিম সেতুতে সমস্যা চরমে ওঠায় ইতিমধ্যে সেখান থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোন রাস্তায় কোন হকার কত দিন ধরে বসছেন, প্রত্যেকটি থানাকে সেই তালিকা পেশ করতে বলা হবে। যেহেতু তাঁরা ব্যবসাই করছেন, তাই তাঁদের পরিচয়পত্র এবং পুরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। অধিকারের সঙ্গে সঙ্গেই হকারদের কর্তব্য সম্পর্কেও তখন সচেতন থাকতে হবে। তাঁদের একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে আনা হবে।
এর পাশাপাশি কোনও এলাকার গুরুত্ব, কী কী ধরনের ভবন সেখানে রয়েছে, তা বিবেচনা করে সেগুলিকে ‘প্রাইম জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে কোনও হকার বসতে দেওয়া হবে না। এর মধ্যে পড়বে বিড়লা তারামণ্ডল থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত এলাকা। এর পরে এ ধরনের অন্যান্য এলাকা চিহ্নিত করা হবে। তার সঙ্গে ঠিক করে দেওয়া হবে কোথায় কোথায় হকারেরা বসতে পারবেন, কোথায় একেবারে বসতে পারবেন না, কোথায় ডালা বা চলমান গাড়ি নিয়ে তাঁরা জিনিস বিক্রি করতে পারবেন, তা-ও। রাজ্য সরকার হকার-নীতি তৈরি করে দেওয়ার পরে সেই নীতি সুষ্ঠু ভাবে বিভিন্ন এলাকায় কার্যকর হচ্ছে কি না, নিয়মিত সেই নজরদারি করার জন্য তৈরি করা হবে নাগরিক কমিটি বা পড়শিদের কমিটি। |