১৪(ওয়াই) ধারা সংশোধনের উদ্যোগ |
লগ্নি টানতে জমি-সীমায় ‘ছাড়’ দিচ্ছে রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। এমনকী, সরকারের সঙ্গে কোনও ‘যৌথ উদ্যোগের’ প্রকল্পের জন্যও জমি অধিগ্রহণ হবে না বলে ঘোষণা করে দিয়েছে মমতার সরকার। কিন্তু বিনিয়োগ টানতে শিল্পমহলের ‘চাপে পড়ে’ রাজ্য এ বার জমির ক্ষেত্রে কয়েকটি ‘ছাড়’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ভূমি-আইনের ১৪(ওয়াই) ধারায় কয়েকটি শিল্পক্ষেত্রকে ঊর্ধ্বসীমা (সিলিং)-র বেশি জমি রাখার অনুমতিদান।
ভূমিসংস্কার আইনের ১৪(এম) ধারায় কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সর্বোচ্চ কতটা পরিমাণ (প্রায় ২৫ একর) জমি রাখতে পারবে, তার ব্যাখ্যা রয়েছে। অন্য দিকে ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি রাখতে যাবে কোন ধরনের শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে, তা বলা আছে ১৪(ওয়াই) ধারায়। পূর্বতন বাম জমানায় কয়েক বার সংশোধনের পরে মোট সাতটি শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা আছে এই ধারায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিল, কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি টাউনশিপ, চা বাগান, উপনগরী ইত্যাদি। শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প বিষয়ক সাব-কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার ওই ধারা সংশোধন করে কিছু পরিবর্তন করা হবে। কী সেই রদবদল?
শিল্প দফতর সূত্রের খবর: ১৪(ওয়াই) ধারা সংশোধন করে আগের তালিকা থেকে উপনগরী ও চা বাগানকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে যুক্ত হচ্ছে শিল্প-পার্ক, ফুড-পার্ক, খনিজ শিল্প, জাহাজের যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ইত্যাদি। তবে ধারাটি সংশোধন করে এ-ও বলা হবে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের আগাম অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। সরকার ‘কেস টু কেস’ বিবেচনা করে সম্মতি দেবে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন জেলায় ১৭টি শিল্প-পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ১৪(ওয়াই) ধারা সংশোধন হলে সেগুলোর ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি রাখতে কোনও অসুবিধে হবে না বলে মনে করছে শিল্প দফতর।
এ ছাড়া রাজ্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হল জমি বিক্রি ও হস্তান্তর সংক্রান্ত। পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগ বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত শিল্পের জন্য জমি নেয় সরকারের অধীনস্থ দুই সংস্থা রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিআইডিসি) এবং রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিআইআইডিসি)। তাদের হয়ে জমি অধিগ্রহণ করে ভূমি দফতর। এর বাইরে রয়েছে সরকারের হাতে থাকা ‘খাস’ জমি। এই জমিই নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য বিনিয়োগকারীদের হাতে ‘লিজ’-এর ভিত্তিতে তুলে দেয় শিল্পোন্নয়ন নিগম। বর্তমান বিধি অনুযায়ী, ‘লিজ’ পাওয়া এমন জমি কোনও সংস্থা বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারে না।
কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত: শিল্পোন্নয়ন নিগম বা পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের দেওয়া জমি সংশ্লিষ্ট সংস্থা এখন অন্য কাউকে ‘অ্যাসাইন’ করতে পারবে। অর্থাৎ, নিগম ‘লিজ হোল্ড’-এর অধিকার দিয়েছে যে সংস্থাকে, তারা জমিটি অন্য কোনও সংস্থাকে হস্তান্তর করতে পারবে। তবে এ জন্য সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি স্থির হয়েছে, প্রতিটি জমির জন্য ভূমিসংস্কার দফতরের সঙ্গে শিল্পোন্নয়ন নিগমের চুক্তি হবে। সেইমতো জমি হাতে পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে নিগমকে লিজ দেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে। একই ভাবে নিগম যে সব সংস্থাকে জমি লিজ দেবে, তাদের প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে তিন বছরের মধ্যে।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই পদক্ষেপ সম্পর্কে এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ দিন তিনি শুধু বলেন, “চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে আমরা এগোচ্ছি। সব সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।” |