কংগ্রেসকে ছাড় নয় রাজ্যসভায় মমতার প্রার্থী
মুকুল ও তিন সাংবাদিক
রাজ্যসভায় কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করার প্রশ্নে দাঁড়ি টেনে দিয়ে শুক্রবার তৃণমূলের চারজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার তরফে ওই ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গেই ওই তালিকায় নাম রয়েছে কুণাল ঘোষ, মহম্মদ নাদিমুল হক এবং বিবেক গুপ্তের। শেষোক্ত তিনজনই সংবাদজগতের সঙ্গে জড়িত। কুণাল একটি বাংলা কাগজ এবং চ্যানেলের সঙ্গে রয়েছেন। নাদিমুল একটি উর্দু সংবাদপত্র এবং বিবেক একটি হিন্দি সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত। পার্থবাবুর কথায়, “আমাদের দল আগেও বিভিন্ন পেশার মানুষদের রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়েছে। এবার সাংবাদিকতা পেশা থেকে তিনজনকে প্রার্থী করা হচ্ছে।”
মমতার এদিনের সিদ্ধান্তে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই। বস্তুত, কংগ্রেস প্রার্থী দিলে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই হবে। দ্বিতীয়ত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অনুরোধও রাখলেন না তৃণমূল নেত্রী।
এরপর কংগ্রেস রাজ্যসভায় প্রার্থী দেয় কিনা, সেটাই দেখার।
ঘটনাচক্রে, এদিনই নয়াদিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ, রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে রাজ্যসভার ভোট নিয়ে আলোচনা করেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজ্যসভায় প্রার্থী দেওয়া উচিত বলেই প্রদীপবাবুরা অভিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু সনিয়া কোনও মন্তব্য করেননি। এদিন রাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও ওই বিষয়ে সনিয়ার সঙ্গে আলোচনা করার কথা।
দেখার এ-ও যে, কংগ্রেস কোনও ‘সর্বসম্মত’ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে বামেদের অতিরিক্ত ভোট নিয়ে মমতার প্রার্থীকে হারাতে ময়দানে নামে কিনা। বামফ্রন্টের অন্দরের খবর, তেমন হলে তাদের কোনও ‘আপত্তি’ নেই। তবে জাতীয় রাজনীতির বতর্মান প্রেক্ষিতে কংগ্রেস সেই ‘ঝুঁকি’ নেবে কিনা, তা নিয়ে ফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের নেতাদেরই ‘সংশয়’ রয়েছে। তবে কংগ্রেস ‘সাহস’ করে কোনও ‘সর্বসম্মত’ প্রার্থী দিলে সিপিএম তাঁকে সমর্থন করে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে ‘বিভাজন’ ঘটাতে যে সচেষ্ট হবে, তা এদিন একান্ত আলোচনায় সিপিএমের একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় বামেদের প্রার্থী তপন সেন এদিন তাঁর মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএম নেতা রবীন দেবের উপস্থিতিতে রাজ্য বিধানসভার সচিব যাদবলাল চক্রবর্তীর কাছে মনোনয়ন জমা দেন তপনবাবু। সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপনবাবুকে রাজ্যসভায় পুনর্মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত মঙ্গলবার বামফ্রন্টেই বৈঠকেই চূড়ান্ত হয়েছিল। সেদিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ফ্রন্টের সমস্ত ভোটই (মোট ৬১টি) তপনবাবুকে দেওয়া হবে। তবে পাশাপাশিই বিমানবাবু প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস ‘সর্বসম্মত’ প্রার্থী দিলে তাঁকে ফ্রন্টের বাড়তি ভোট দেওয়া হবে কিনা, তা পরিস্থিতি সাপেক্ষে বামফ্রন্টে আলোচনা করে ঠিক হবে।
রাজ্যসভার ভোটে জিততে প্রত্যেক প্রার্থীকে ন্যূনতম ৪৯টি ভোট পেতে হবে। কংগ্রেসের ভোট রয়েছে ৪২টি। চোপড়ার নির্দল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ভোট ধরলে ৪৩টি। ফলে তাদের ছয় বা সাতটি ভোট দরকার। বামফ্রন্টের রয়েছে ১২টি বাড়তি ভোট। অঙ্কের হিসেবে সেই ভোট পেলে তৃণমূলের প্রার্থীকে হারাতে কংগ্রেসের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে ভোট হবে এবং তখন মোট ছ’জন প্রার্থী মধ্যে যে পাঁচজন বেশি ভোট পাবেন, তাঁরাই জিতবেন। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪৯টি ভোটের দরকার হবে না।
বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে তৃণমূলের রাজ্যসভায় তিনটি আসন পাওয়া নিশ্চিত। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী (আপাতত ‘ভাবী রেলমন্ত্রী’) তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু যে রাজ্যসভায় আবার মনোনয়ন পাবেন (তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ ফুরোচ্ছে আগামী ২ এপ্রিল। রাজ্যসভার ভোট হবে ৩০ মার্চ), তা নিশ্চিতই ছিল। বাকি দু’টি আসনের একটিতে উর্দু কাগজের সঙ্গে জড়িত নাদিমুল মনোনয়ন পাবেন, তা-ও ঠিকই ছিল। তৃতীয় আসনের জন্য মমতা প্রাথমিক ভাবে নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষের নাম ভেবে রেখেছিলেন। সম্প্রতি মহাকরণে তিনি অর্পিতার নাম নিয়ে দলের তিন বর্ষীযান নেতা মুকুলবাবু, পার্থবাবু এবং সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। তখনও ঠিক ছিল, অর্পিতাই তৃতীয় প্রার্থী হচ্ছেন। মমতার সেই ইচ্ছার কথা কাগজে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল নেত্রী সিদ্ধান্ত বদলান। দলের একাংশ পাশাপাশিই তাঁকে কবীর সুমনের উদাহরণ দিয়ে বোঝান, ‘বিশিষ্টজন’দের প্রার্থী করার অনেক ঝক্কি রয়েছে। তাঁরা পুরোপুরি ‘রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন’ হয়ে উঠতে পারেন না। একবার সেই ‘ঝুঁকি’ নিয়ে ধাক্কা খেয়েছে দল। আরও একবার তা নেওয়া উচিত হবে না।
সংবাদব্যক্তিত্ব কুণাল দীর্ঘদিন ধরেই মমতার ‘ঘনিষ্ঠ’। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বিভিন্ন প্রচারসভায় তিনি বক্তৃতা করেছেন। একুশে জুলাইয়ের ব্রিগেডের সভা পরিচালনার দায়িত্বও মমতা তাঁকে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর মনোনয়নে আপাতদৃষ্টিতে ‘চমক’ থাকলেও কোনও ‘বিস্ময়’ নেই। চতুর্থ প্রার্থী বিবেককে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে তিনটি ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে।
প্রথমত, বিবেক যে এলাকার বাসিন্দা, সেই এলাকা থেকে গত বিধানসভা ভোটে দীনেশ বাজাজকে টিকিট না-দিয়ে মমতা স্মিতা বক্সিকে টিকিট দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, আমরি-কান্ডে তিনি ‘অবাঙালি’-দের প্রতি ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণ করেছেন বলে প্রধান বিরোধীদল সিপিএমের তরফে একাধিক বার অভিযোগ করা হয়েছিল। তৃতীয়ত, সদ্য মমতার ‘কোপগ্রস্ত’ দীনেশ ত্রিবেদী অবাঙালি মহলে বিশেষ ‘প্রিয়’। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “অবাঙালি সমাজকে সদর্থক বার্তা দিতেই বিবেককে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, তালিকায় একজন সংখ্যালঘু মুসলিমের পাশাপাশি এক হিন্দু প্রার্থীও রইলেন।”
সংবাদজগতের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের একাংশ বলতে শুরু করেছে যে, তার মানে দলে প্রার্থী পাওয়া গেল না! যা নস্যাৎ করে দলের অন্য অংশ বলছে, ওই তিনজন পেশাগত ভাবে সাংবাদিক হলেও যথেষ্ট ‘রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন’। তার প্রমাণ সাম্প্রতিক অতীতে বহুবার পাওয়া গিয়েছে। যেমন আমরি-কান্ডে অবাঙালিদের অভিযোগের সময় বিবেকের সংবাদপত্র মুখ্যমন্ত্রীর ‘পাশে’ ছিল।
ঘটনাচক্রে, এদিনই মহাকরণে গিয়ে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি মমতার সঙ্গে দেখা করে দার্জিলিং থেকে একজনকে রাজ্যসভার প্রার্থী করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পরে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি পরে বিষয়টি দেখবেন।” ঠিক যে কথা মমতা এক সপ্তাহ আগে মহাকরণে বসেই বলেছিলেন এআইসিসি-র দূত শাকিল আহমেদকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.