নাটক সমালোচনা...
দুঃখকে ভোলা যায় না
‘শ্যামবাজার মুখোমুখি’র নতুন নাটক ‘চেনা দুঃখ চেনা সুখ’। তিন পুরুষের বাদ্যযন্ত্রের সাবেকি দোকান ভেঙে শপিং মল হবে। সজল আগলে রেখেছিল দোকান। এখন সেই দোকান ভাঙা হলে টাকার ভাগ নিয়ে কথা বলতে আসে দুই ভাই সুজিত আর সমীর। সুজিত স্বার্থসর্বস্ব। নিজের ভাগ বুঝে নিতে তৎপর। সমীর দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। তার স্ত্রী কেকা বুদ্ধিমতী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্না। বড় ভাই সজল সৎ ও হৃদয়বান। তার স্ত্রী নমিতাও চিরাচরিত বাঙালি স্ত্রী ও মা-এর মতই স্নেহপ্রবণ। ব্যতিক্রম হয়ে থাকে সজলের বড় ছেলে রাজা। স্বপ্ন দেখে এক দিন সে পর্বতারোহী হবে। নতুন রুট দিয়ে এভারেস্টে উঠবে। চেনা সুখ-দুঃখের সঙ্গে এইভাবে অচেনাকে জয় করার স্বপ্ন নিপুণ হাতে বুনে দেন তরুণ প্রতিশ্রুতিমান নাট্যকার সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। চেনা ছকের বিন্যাস-প্রতিবিন্যাস থেকেই গড়ে ওঠে এই নাটক।
নির্দেশক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় মুন্সিয়ানার সঙ্গে এই কাহিনীকে রূপ দিয়েছেন মঞ্চে। জয় সেনের আলো এবং তপন সিংহের আবহ তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেছে। তবে হিরণ মিত্রের মঞ্চ এবং মালবিকা মিত্রের পোশাক পরিকল্পনা অবশ্যই প্রশংসা পেতে পারে। অভিনয়ের মানও নাটকের বড় প্রাপ্তি। সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন দুলাল লাহিড়ি। প্রয়োগও করেছেন। অন্য দুই ভাই-এর চরিত্রে সৌমিত্র মিত্র ও শুভব্রত দে খুবই বিশ্বাসযোগ্য। কেকার চরিত্রে চৈতালী ঘোষ অল্প অবকাশেও ছাপ রেখে যান। মহারাজার চরিত্রে শুভঙ্কর মিত্র স্বচ্ছন্দ। ব্যতিক্রমী চরিত্র রাজার ভূমিকায় দেবদূত ঘোষ নিজের অভিনয় ক্ষমতার প্রমাণ রাখেন। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিনী হিসেবে শকুন্তলা বড়ুয়াকে বেশ মানানসই মনে হয়।

পঞ্চাশ পেরিয়েও
পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে দিল নাট্যসংস্থা ‘সংগঠনী’। দেশভাগের পর একদল মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন উত্তর শহরতলির নিমতা উদয়পুরে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন সংস্কৃতিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলেছিলেন এই সংগঠনটি। নাটকই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এ বারও সংস্থা আয়োজন করেছিল ১২টি দলের একাঙ্ক নাট্য-প্রতিযোগিতার। পুরস্কৃত হয়েছে কৃষ্ণনগর সিঞ্চন-এর ‘সমুদ্র মন্থন’ (প্রথম), ইছাপুর আলেয়া’র ‘ইচ্ছেডানা’ (দ্বিতীয়) ও আগরপাড়া থিয়েটার পয়েন্ট-এর ‘আগাছা’ (তৃতীয়)।
বিভিন্ন বক্তার মুখেই শোনা গেল নানা ইতিহাস। সেই কবে প্রদীপ জ্বালিয়ে একাঙ্ক নাটকের সূচনা করেছিলেন নাট্যকার মন্মথ রায়। কখনও প্রযোজনা, কখনও বা নাটক রচনা। অভিনয় করেছেন পরেশ ঘোষ, সত্যেন সাহা, অহীন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ। ছিল বীরু মুখোপাধ্যায় রচিত ‘রাহুমুক্ত’। এক সময়ে এই মঞ্চে অভিনয় করেছেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়রাও। সরোজ চক্রবর্তী রচিত ‘জিয়নকাঠি’ বেলঘরিয়া গণনাট্য সঙ্ঘের অধিবেশনে মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেই সময় দর্শকাসনে ছিলেন সত্যজিৎ রায়। শেষ দিনে সংস্থা আয়োজিত ও অভিনীত ‘সাজাহান’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রযোজনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মনোরঞ্জন ঘড়া।

ওপার বাংলার কমেডি
এ বারের নান্দীকার নাট্যমেলায় বাংলাদেশের নাটক ছিল অন্যতম আকর্ষণ। যে দু’একটি প্রযোজনা আমাদের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারেনি তাদের অন্যতম এ বারের নাটক আরণ্যকের ‘রাঢ়াং’ (দূরাগত মাদলের ধ্বনি)। বাংলাদেশের জনজাতিদের বঞ্চনা ও সংগ্রামের কাহিনি। সাঁওতালরা জমিতে চাষ-আবাদ করেও হিন্দু গদাই ও মুসলিম মোড়ল হাতেম আলির চক্রান্তে জমির অধিকার পায় না। নাটকের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ও সাম্প্রতিক মাওবাদী অন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। এ ছাড়াও নাটকের সাবটেক্সটে আছে সাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু পরিচালক ও নাট্যকার (মামুনুর রশীদ) বিষয়ের ট্র্যাজিক অভিঘাত মঞ্চস্থ করতে পারেননি। নাটকের বাঁধুনি শিথিল, মূল বিষয়ের সঙ্গে গৌণ বিষয়ের মেলবন্ধন হয়নি। নাটক এগোয় সাঁওতাল পুরুষ আর লিপস্টিক রঞ্জিত ঠোঁটের আর নর্তকীর মতো শাড়ি পরা সাঁওতাল রমণীদের নাচগান আর হাড়িয়া খাওয়া সাঁওতাল আর মাতাল দারোগা-পুলিশের ভাঁড়ামির দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে। এই নাটকে প্রায় সকলেই ভাঁড়। সাঁওতালদের জনগুরু তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বৃহল্লাঙ্গুল বিশ্বম্ভর, তার ভাইপো সলেজ, খল চরিত্র গদাই পাদ্রি, পুলিশ ও কালা হাতেম আলি। কমিক উপাদান কখনও ধারালো ব্যঙ্গ হয়ে ওঠে না যেমন হত উৎপল দত্তের রাজনৈতিক নাটকে। উৎসবের নাচ এবং যুদ্ধের দৃশ্যে কোনও তফাত হয় না।
আর আলফ্রেড সোরেন, যে সাঁওতাল যুবা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়, তার চরিত্র নাটকে গড়ে ওঠে না। নাটকের সবচেয়ে জরুরি সংলাপ ‘তোরা লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে চলে এলি কেন, জীবনে একবারই তো লড়বি’ উচ্চারণ করে ভাঁড়ের মতো চক্রান্তকারী গদাই। মঞ্চে আলো সব সময়েই ফ্ল্যাট। কোনও নাটকীয়তা গড়ে তোলে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.