সম্প্রতি ভবানীপুর সঙ্গীত সম্মিলনীর উদ্যোগে সঙ্গীতরত্ন মোহিনীমোহন মিশ্র স্মরণ সন্ধ্যা সম্পন্ন হয়। মোহিনীমোহনের পৌত্র দিলীপ মিশ্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্মিলনীর কক্ষে বিশিষ্ট গুণীজনের উপস্থিতিতে মোহিনীমোহনের প্রতিকৃতি সংস্থাপন হয়। এই উপলক্ষে আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে প্রথমে তবলা লহরা পরিবেশন করেন জ্যোতির্ময় রায়চৌধুরী। ঝাঁপতালে নিবদ্ধ পরিবেশনার বিভিন্ন মুহূর্তে শিল্পীর পরিচ্ছন্ন রেওয়াজি হাত ও পরিণত শিল্পবোধের পরিচয় মেলে। হারমোনিয়ামে নগমা রাখেন শেলী রায়চৌধুরী। পরবর্তী শিল্পী সৃজনী বন্দ্যোপাধ্যায় সেতারে বাগেশ্রী রূপায়ণ করেন। গায়কী অঙ্গের বিস্তার ছন্দের কারুকৃতি ও দ্রুত লয়ে কিছু দুরূহ তেহাইয়ের আদায়ে সপ্রতিভতার ছাপ ছিল। তবলায় প্রশান্ত দেবরায়ের সাহচর্য উল্লেখযোগ্য। পরিশেষে যোগ রাগে খেয়াল পরিবেশন করেন ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়। গোছানো বিস্তার, নিখুঁত রাগ উন্মোচন, কিছু ছুট তান ও অনবদ্য সরগম সপ্রশংস নজর কাড়ে। শেষের পাহাড়ী শেষ হবার পর রেশ রেখে যায়। হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়, তবলায় সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বস্তিদায়ক সহযোগিতা করেন।
|
শব্দটি হল প্রেম। যুগ যুগ ধরে অনুপ্রাণিত করে আসছে কবি ও কবিতাকে। রবীন্দ্রনাথও ব্যতিক্রমী ছিলেন না। তবে রবীন্দ্রনাথের গান যেমন সকলের থেকে পৃথক, ঠিক সেইরকমই পৃথক তাঁর প্রেমের গান। সে রকমই নির্বাচিত কিছু গান নিয়ে সম্প্রতি কলকাতার জি.ডি.বিড়লা সভাঘরে হয়ে গেল রাহুল মিত্রের একক ‘ওগো এত প্রেম-আশা’। নিবেদনে উৎসাহ-উদ্ভাস। পরিচালনায় গৌরী রায়চৌধুরী।
দিনের শেষে আলো যখন ঘুমোতে যায়, সেই আঁধারে কে যেন চেয়ে থাকে ওই আলোর দিকেই। জেগে থাকা, জাগিয়ে রাখা। প্রেম যখন জাগিয়ে রাখে, তখন তার এক রূপ, সেই রূপ ফুটে ওঠে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সারির প্রেমের গানে।
‘আমি ভাসি জলে
বহে চলি জীবনের তালে তালে।’
দ্বিতীয় সারির প্রেম পূর্ণতা পায় অনন্ত সাগর স্নানে। আর সেই প্রেম যখন তল খুঁজে পায়, তখন সে অতল রচনা করে। এই দুই সারির গান পরস্পরের সাথি হয়ে যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি দু’টি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বের প্রথম গানই ‘আমি স্বপনে রয়েছি ভোর’ শ্রোতাবৃন্দকে সত্যিই যেন বাস্তব জগৎ থেকে দূরে নিয়ে যায়। এছাড়া প্রথম পর্বের ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিণী’, ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না’ এবং দ্বিতীয় পর্বের ‘কেন বাজাও কাঁকন’, ‘আজি যে রজনী যায়’, ‘ওগো, এত প্রেম আশা’ প্রভৃতি গানের মধ্যে দিয়ে রাহুল রবীন্দ্রনাথের এক পৃথক রূপের সঙ্গে পরিচিতি ঘটান। সেই রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রনো গুহঠাকুরতা এবং কবি জয় গোস্বামী। যন্ত্রশিল্পীরা ছিলেন বেহালায় অম্লান হালদার, পাখোয়াজ-শ্রীখোল-তবলায় গৌতম চৌধুরী ও স্বপন অধিকারী, তানপুরায় সুতনু সিংহ ও অচ্যুত বেরা, বাঁশিতে সুশান্ত নন্দী। |