|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
বউ ভয়ে খামচে ধরছে |
তাঁর বব বিশ্বাসকে দেখে সবাই ভয় পাচ্ছেন। বাহবা-ও দিচ্ছেন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সেই কনট্র্যাক্ট কিলারের মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায় |
|
পত্রিকা: আপনার বউ, টলিউডের বন্ধুরা, এখানকার পরিচালকরা যা পারেননি, তা বিদ্যা বালন আর সুজয় ঘোষ কিন্তু করে দেখালেন...
শাশ্বত: বিদ্যা বালন আর সুজয় ঘোষ করে দেখালেন? কী সেটা...বুঝতেই পারছি না তো... একটা সুপার হিট হিন্দি ছবির অংশীদার করলেন আমায়, সেটাই তো বলছেন?
পত্রিকা: তার থেকেও বড় কথা, বিদ্যা আর সুজয়ের জন্য অবশেষে আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে বাধ্য হলেন ‘কহানি’তে...
শাশ্বত: (হাসি) ভেরি ভেরি ইন্টারেস্টিং কোশ্চেন... হ্যাঁ, মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে আমায়। কিন্তু মোবাইলের খারাপ দিকটাও তো দেখাল ‘কহানি’, সেটা তো বলছেন না আপনি...
পত্রিকা: বব বিশ্বাসকে দেখে কিন্তু পুরো ভারতবর্ষ ভয় পাচ্ছে...
শাশ্বত: জানি, জানি। হয়তো আমি চরিত্রটায় অভিনয় করেছি বলে বুঝতে পারছি না। কিন্তু লোকে যে ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝছি। এই সে দিন সাউথ সিটিতে দেখতে গিয়েছিলাম ছবিটা। অনেক অবাঙালি দর্শক, যাঁরা আমাকে চেনেন না তাঁরা এসে বলে গেলেন, ‘ইউ ওয়ার সো সো স্কেয়ারি’... সে দিন উষাদি (উত্থুপ) কোচিনের একটা হলে ছবিটা দেখে ফোন করে প্রশংসা করলেন। রনিও (রজতাভ দত্ত) ফোন করে কনগ্র্যাচুলেট করল। পুরোটাই কিন্তু সুজয়ের কৃতিত্ব। এ রকম একজন কনট্র্যাক্ট কিলার আগে তো হয়নি। আর কৃতিত্ব বিদ্যারও। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’এ বিদ্যা যেখানে নিজেকে নিয়ে গেছে সেই গতিটা ‘কহানি’তেও ছিল। লোকে বিদ্যাকে দেখতে এসে আমাকে দেখে ফেলছেন।
পত্রিকা: বিধু বিনোদ চোপড়ার বউ এবং চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর সমালোচনায় আপনার অভিনয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন...
শাশ্বত: (হেসে) এই রে! উনি ভয় পাননি তো? বউ আমায় দেখে ভয় পেয়েছে জানলে হয়তো বিধু বিনোদ চোপড়া আর কাজই দেবেন না আমায়। আমি শুধু ভয় পাওয়াই না বিধুজি, আমি হাসাতেও পারি...
পত্রিকা: অমিতাভ বচ্চন সেদিন ট্যুইট করেছেন ‘কহানি’ নিয়ে...
শাশ্বত: শুধু অমিতাভ বচ্চন কেন! আর একজনও ফোন করেছিলেন। একটা পার্টিতে ছিলাম সেদিন। সুজয়ের ফোনে রেখাজির ফোন এল। রে-এ-খা! এমন একজন হিরোইন যাঁর জন্য স্কুল-লাইফে অনেক রাত ঘুমোতে পারিনি। তিনি আমার পরিচালককে ফোন করেছেন, যে পরিচালকের সঙ্গে আমার তুই-তুকারি সম্পর্ক...পুরো ব্যাপারটাই এখনও ‘সাররিয়েল’ আমার কাছে। রেখারও খুব ভাল লেগেছে ‘কহানি’।
পত্রিকা: আপনার ভক্তরা আপনাকে টালিগঞ্জের রাহুল দ্রাবিড় বলেন। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন, অথচ স্পটলাইটটা আপনার ওপর থাকে না। ‘কহানি’ এতদিনে হিসেবটা মেলাল...
শাশ্বত: একেবারে। দারুণ সব চরিত্র পাচ্ছি, ব্যাটে-বলে হচ্ছে। বেশ খাপে-খাপ একটা ব্যাপার যে হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। ‘রং মিলান্তি’ বলুন, বা তার পর মিঠুনদার সঙ্গে ‘নোবেল চোর’। এবার ‘কহানি’। দারুণ লাগছে। উপভোগ করছি সময়টা। কিন্তু কখনওই মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতন নয়। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি যেন মাথাটা না ঘোরে। কী বলুন তো? এটা ‘শোবিজ’ তো, বড় অদ্ভুত জায়গা। এই উত্থান। এই পতন। এটাই অভিনেতাদের জীবন। সে দিন বিদ্যার সঙ্গেও এই নিয়ে কথা হয়েছিল। ও নিজেও একই কথা বলছিল।
পত্রিকা: আপনি যে নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তার মধ্যে বিদ্যাই কি সেরা?
শাশ্বত: হ্যাঁ, হ্যাঁ। একটা কথা বলি?
|
|
পত্রিকা: বলুন।
শাশ্বত: জানি না বলা উচিত হবে কি না, কিন্তু সুন্দরী, ছিপছিপে, লম্বা, দুর্দান্ত গ্ল্যামারাস নায়িকাদের দিন প্রায় শেষ হিন্দি ছবিতে। একটা বিদ্যা বালনই যথেষ্ট। ও নিজে কিন্তু নায়িকার সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছে বলিউডে। এটা পারছে কারণ ও অসামান্য বুদ্ধিমতী। আর একজন অভিনেত্রী হিসেবে ও জানে অনুভূতিটা কী আর কতখানি আর কোথায় ব্যবহার করতে হয়। তাই, শুধু নাচলাম, সুন্দরী হয়ে ঘুমোলাম, বড় আই-ল্যাশ পরে কাঁদলাম সেই সব নায়িকাদের এ বার ঘোর দুঃসময়। কিন্তু জানেন, বিদ্যার মতো এ রকম আর একজন ছিলেন, মানে আছেন... জানি না...
পত্রিকা: কে তব্বু?
শাশ্বত: হ্যা। তাঁর সঙ্গেও কাজ করেছি। তিনিও বিরাট মাপের অভিনেত্রী। কিন্তু কেন জানি না, কেরিয়ারে যেখানে পৌঁছনোর কথা সেখানে পৌঁছলেন না তব্বু। হয়তো মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিটা সেই সময় তব্বুকে ঠিক ব্যবহার করতে পারেনি। জানি না...
পত্রিকা: বিদ্যা বলেছিলেন এই ছবিতে আপনার আর বিদ্যার কমন ফ্যাক্টর ছিল....
শাশ্বত: ...আমাদের পেট। হ্যা। দু’জনেই প্রস্থেটিক পেট নিয়ে শ্যুটিং করেছিলাম। পেটে পেটে ধাক্কাও খেতাম শ্যুটিঙের সময়... মাঝে, মাঝে বিদ্যাকে জিজ্ঞেস করতাম, “হাউজ ইয়োর বেবি ডুয়িং?”
পত্রিকা: মেট্রোতে বিদ্যাকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্যটা তো ক্রোমায় শ্যুট করা?
শাশ্বত: হ্যা। ক্রোমায়। আমি আর বিদ্যা ছিলাম শুধু। ট্রেনটা ছিল না। ওটা পরে বসানো হয়েছে। সারা রাত কালীঘাট স্টেশনে শ্যুটিং করেছিলাম। সেটাও একটা অভিজ্ঞতা। শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পর ঢুকেছিলাম, ভোর পাঁচটায় বেরিয়েছিলাম।
পত্রিকা: অনেক পার্টিতে, ঘরোয়া আলোচনায় আপনাকে আফশোস করতে শুনেছি-‘টালিগঞ্জে সেই রকম চ্যালেঞ্জিং রোল পাচ্ছি না...’ বব বিশ্বাসের ভূমিকায় অভিনয়টা তা হলে কি টালিগঞ্জের কাছে নিজের ক্ষমতাটার জানান দেওয়া?
শাশ্বত: দেখুন সেটা বলাটা ঠিক হবে না। অ্যাট লিস্ট দু’জন পরিচালক কিন্তু আমাকে সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জিং রোল দিয়েছেন। একজন অঞ্জন দত্ত। ‘বং কানেকশন’ এর ছোট রোল করার পর আমাকে প্রচুর সুযোগ দিয়েছেন। অন্য জন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ‘রং মিলান্তি’তে তিনি আমায় দুর্দান্ত চরিত্র দিয়েছেন। এ ছাড়া টেলিভিশনেও অনেক কাজ করেছি কিন্তু টেলিভিশন যেহেতু তাই হয়তো আমায় লোকে সে রকম সিরিয়াসলি দেখেননি।
পত্রিকা: ‘কহানি’র পর কোনও অফার পেলেন বলিউড থেকে?
শাশ্বত: শুনেছি দু’একটা অফার পেতে পারি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিটা তো বোঝেন। যতক্ষণ না আঁচাচ্ছি ততক্ষণ বিশ্বাস করছি না যে খেয়েছি।
পত্রিকা: আপনার মেয়ে দেখেছে ছবিটা?
শাশ্বত: না, এমনিতেই যা ভয় পায়! আগে ডিভিডি রিলিজ হোক, তখন দেখাব। হলে দেখলে আরও ভয় পাবে। মেয়ের মা নিজেই আমাকে খামচে ধরেছিল কয়েকটা সিনে। মেয়েকে তাই হলে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।
পত্রিকা: এ রকম একটা সাফল্য। নিশ্চয়ই বাবার কথা মনে পড়ছে?
শাশ্বত: সত্যি বলছি, খুব মিস করছি। যখন এত ভাল ভাল ব্যাপার ঘটছে আমার কেরিয়ারে। এই সময়টা দেখতে পেলে খুশি হতেন। কী আর করা যাবে... তা তো আর হওয়ার নয়...
পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। বলিউডে হই হই। অফারও আসতে শুরু করেছে। এবার কি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করবেন?
শাশ্বত: আমি বলিউডের একজনের নাম নিচ্ছি, যিনি মোবাইল ব্যবহার করেন না। আমির খান। অনেক বড় স্টার। আমি কোনও স্টারই নই। কিন্তু ভাই, চলে তো যাচ্ছে ল্যান্ডলাইন দিয়েই। ল্যান্ডলাইনের বিলটাও নিয়মিত দিই। একটা আনসারিং মেশিনও লাগিয়েছি। যাঁর আমাকে খোঁজার দরকার ঠিক খুঁজে নেবেন। যেচে কেউ জীবনে বাঁশ নিয়ে আসে? মোবাইলটা বড় বাঁশ। ওটা ছাড়াই বেশ আছি।
|
|
|
|
|
|