|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ১... |
|
ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সবার আগে ইকাকে পাঠাই |
বিদ্যার পাশে সমান ঝকঝকে। ইনবক্স ভরে যাচ্ছে শুভেচ্ছায়।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। মুখোমুখি দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী |
|
পত্রিকা: জ্যোতিষী কী বলল?
পরমব্রত: (থতমত খেয়ে) ইয়ে মানে কোনও দিনও হাত দেখাইনি। তবে খুব ইচ্ছে আছে দেখানোর। (থেমে) প্রশ্নটা কেন করলেন বলুন তো?
পত্রিকা: না মানে বৃহস্পতি তুঙ্গে সেটা কনফার্ম করে নিতেন আর কী!
পরমব্রত: কী যে বলেন! টাচ উড! (কফি শপের দেওয়াল হাতড়ে কাঠ খোঁজার চেষ্টা। না পেয়ে নিজের মাথায় হাত ছুঁয়ে নেন)। বিনয়ের সঙ্গে এটুকু বলতে পারি শুনতে ভাল লাগছে।
পত্রিকা: ‘কহানি’ বিদ্যা বালনের ছবি সবাই জানত। কিন্তু আড়াই ঘণ্টা তাঁরই সঙ্গে পর্দায় থেকেও না থাকা। এবং তার পরেও সারা দেশের প্রশংসা আদায় করে নেওয়া... এর পরেও বিনয় দেখাবেন?
পরমব্রত: কাজটা সহজ ছিল না জানি। তবে সুজয় (ঘোষ) এর ব্রিফটাও তো তাই ছিল। নিজেকে জাহির না করে অভিনয়টা করা। তাই করেছি। অনেকদিন আগে, তখন টেলিভিশন করি। একজন আমার অভিনয় দেখে বলেছিলেন যে আমার অভিনয়ের সব থেকে ভাল দিক হচ্ছে অন্য সবাই যখন লাইমলাইট কাড়ার চেষ্টা করে আমি সেটা করি না। তাই চোখে পড়ি। মনে হয় এখন সেই আর্টটা আরও রপ্ত করেছি।
পত্রিকা: ট্যুইটার খুললে তো শুধুই আপনার প্রশংসা। টালিগঞ্জের কথা বাদ দিন। বলিউডের তাবড়রা উচ্ছ্বসিত...
পরমব্রত: (আবার একটু লজ্জালজ্জা ভাব) তরণ আদর্শ ট্যুইট করেছেন। জিতেশ পিল্লাই টেক্সট করেছেন। কিন্তু সবথেকে খুশি হয়েছি অনুরাগ কাশ্যপ ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠানোয়। নতুনদের মধ্যে আমার কাজ ওঁর দারুণ সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। যেটা পড়ে সত্যি বেশ লেগেছে।
পত্রিকা: একজন দেখলাম লিখেছেন যে আমদাবাদে তাঁকে মহিলারা বলছেন আপনি সন্দেশের মতো মিষ্টি। পুলিশ অফিসারের রোল। তাও একটা থ্রিলারে। সেখানে এই কমপ্লিমেন্ট! ভাবা যায়!
পরমব্রত: আরে দিনের শেষে এই চরিত্রটা তো একটা ২০-র কোঠার
ছেলের। বি এ পাশ। খেলাধুলো করে। বাড়ির বড়রা বলেছে পুলিশের চাকরির পরীক্ষা দে। দিয়ে পেয়েছে। ছ’মাস হল চাকরি। প্রেমের অভিজ্ঞতা বলতে কোনও এক বান্ধবীর সঙ্গে পার্কে বসা। আর যৌনতা বলতে পাশের বাড়ির নাইটি পরা বউদি।
পত্রিকা: চরিত্রটা করার আগে এগুলো মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন?
পরমব্রত: নয় কেন? আর সেই ছেলে যখন বিদ্যার মতো এক মহিলার সংস্পর্শে আসে...ওই রকম সুন্দরী। ও রকম আবেদন যাঁর...
পত্রিকা: আপনার অবস্থা তার মানে...
পরমব্রত: ও রকম একজন মহিলার সামনে বলছেন? বিদ্যা চূড়ান্ত সেক্সি। সুন্দরী। কিন্তু মজাটা কোথায় জানেন? ও যা ও তাই। অন্য নায়িকাদের মতো ওকে ঠোঁট ফুলিয়ে সেক্সি দেখাতে হয় না। বা বুক, পেছন বের করে ছবি তোলাতে হয় না। আমি খোলাখুলিই বলছি। কিছু মনে করবেন না। এই যে ওকে এখন বলিউডে খানদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে সেটা ওর কাজের জন্য। আলটিমেটলি সেটাই ম্যাটার করে।
পত্রিকা: আপনার তো ইনটেলেকচুয়াল বলে খ্যাতি আছে। বিলিতি ডিগ্রি-টিগ্রি। কথাবার্তা। তা এ রকম মহিলাই নিশ্চয়ই পছন্দ করেন?
পরমব্রত: (খুব জোরে হেসে) অন্য রকম মহিলা হলেও আই ডোন্ট মাইন্ড। (সিরিয়াস হয়ে) প্রেমের ক্ষেত্রে উত্তরটা হয়তো হ্যা। বাকিটা জেনারেলাইজ না করাই ভাল (ফিচেল হাসি)।
পত্রিকা: বিদ্যার কথায় ফিরি। ‘কহানি’ যখন করছেন ‘ডার্টি পিকচার’এর শ্যুটিংও শুরু হয়নি। জাতীয় পুরস্কার তো দূরস্ত। উল্টে বলিউড জুড়ে তাঁর ড্রেস সেন্স আর ফিগার নিয়ে বক্রোক্তি। সেই বিদ্যা আর ‘কহানি’র পর বিদ্যার কতটা তফাত?
পরমব্রত: দেখা হল তো ওই প্রমোশনের সময়টুকু। মানুষের ওকে দেখে পাগলামোটা সাংঘাতিক বেড়ে গেছে। কিন্তু ওর কোনও চেঞ্জ চোখে পড়েনি। প্রচণ্ড পেছনে লাগতে পারা, দারুণ ইন্টেলিজেন্ট একটা মেয়ে।
|
|
পত্রিকা: কলকাতায় শ্যুট। সহ- অভিনেতারা সব কলকাতার। বিদ্যার পেছনে তো আপনার লাগার কথা...
পরমব্রত: ওরে বাবা! বিদ্যার মতো প্র্যাঙ্কস্টার কম আছে! ওর পেছনে আমি লাগব কী! ‘কহানি’তে একটা দৃশ্য আছে না পার্ক স্ট্রিট থানা থেকে আমি বেরোচ্ছি আর বিদ্যা উল্টো দিকে গাড়িতে বসে আছে? আমি রাস্তা ক্রস করে বলছি ‘কুছ নহি মিলা’। এক শটে সুজয় ‘ওকে’ বলল। কিন্তু বিদ্যা বলল, না আবার একবার নাও প্লিজ। সুজয় আর কী করে, বলল ঠিক আছে। আমি আবার রাস্তা ক্রস করে এলাম। বিদ্যা গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বসে আছে। আমি আবার বললাম, ‘কুছ নহি মিলা’। আর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যা আমার কলারটা ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে শুরু করল ‘তুম মুঝে ছোড়কে কিঁউ যা রহে হো’! আমি হতবাক। কী করব বুঝতেই পারছি না। সুজয়ও থতমত। একটু বাদে বুঝলাম আমাকে সিম্পলি বোকা বানানো হচ্ছে। সিনেমাটোগ্রাফার সেতুকে বিদ্যা বলে রেখেছিল যে ক্যামেরা রোল করবেন না।
পত্রিকা: বাপস রে!
পরমব্রত: আরও আছে। ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারে রাতের শট। সবাই খুব ক্লান্ত। রাত প্রায় তিনটে। আমার আর বিদ্যার ফাইল চুরির সিন। আমাদের হুড়মুড় করে ফাইল খুঁজতে হবে। বিদ্যা হঠাৎ পাগলের মতো নাচতে শুরু করল। আমি থ। দেখি বিদ্যার দেখাদেখি সুজয়ও নাচছে। এ দিকে ক্যামেরা চলছে। আমি তো গরিব ইন্ডাস্ট্রির ছেলে, খালি বলছি ‘ক্যামেরা বন্ধ করো।’
পত্রিকা: মুম্বইয়ের ফ্লাইটটা কবে ধরছেন?
পরমব্রত: ধুর পাগল নাকি! এখন অনেকে ফোন-টোন করছেন। বি কিংবা সি গ্রেডের ছবি। আমি ইন্টারেস্টেডই নই। ভাল রোল না হলে কী মুম্বই, কী কলকাতা আমার কাছে ম্যাটার করে না।
পত্রিকা: সুজয় ঘোষই তো আপনাকে নিয়ে হিন্দিতে ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ প্ল্যান করছেন।
পরমব্রত: (ফিচেল হাসি) করছে নাকি? করলেই ভাল। জোকস অ্যাপার্ট, সুজয় বলেছে ওর আমার সঙ্গে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে। ইন ফ্যাক্ট, সুজয়ের দু’টো চিত্রনাট্য আমার কাছে আছে। ও চায় আমি সেটা থেকে ছবি করি।
পত্রিকা: এই রে! পরিচালনার পোকাটা তো আবার চাগাড় দিচ্ছে... প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে পরের ছবি করতে চলেছেন তো?
পরমব্রত: এই, এটা নিয়ে এখন কোনও কথা নয়।
পত্রিকা: বেশ। তা হলে প্রেম নিয়ে কথা হোক।
পরমব্রত: হ্যা। সেটা বেশ ভাল বিষয়।
পত্রিকা: মহিলা নিয়ে আপনার যে খ্যাতি ছিল, ইকা জীবনে আসার পরে সেটা অনেকটা থিতিয়েছে?
পরমব্রত: মানে লোকে আমাকে মেয়েবাজ বলত তো? আমার মনে হয়, মেয়েবাজ ঠিক না। নাছোড় প্রেমিক টাইপের ছিলাম। বারবার প্রেমে পড়তেই হত আমাকে। বেঁচে থাকার রসদ প্রায়। ইকার সঙ্গে সম্পর্কটা আমাকে সেই নাছোড় ভাবটা থেকে বের করে এনেছে। আমি বুঝেছি,(থেমে) হয়তো, ভালবাসা আসলে কী-ভালবাসা মানে কখনও জাজমেন্টাল না হওয়া। আগের সম্পর্কগুলোতে দেখেছি জাজমেন্টাল হওয়া কত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পত্রিকা: লোকে বলে, আপনি এখানে। ইকা নেদারল্যান্ডসে। এটা ওপেন রিলেশনশিপ। ও ওখানে ওর মতো আছে। আপনি আপনার মতো। মাঝে মধ্যে সময় কাটান এক সঙ্গে সুবিধেমতো...
পরমব্রত: এটা ঠিক যে আমরা হাজার হাজার মাইল দূরে থাকি। কিন্তু তাতে কী? ইকা সে রকম মেয়ে যে এ দেশে এলে যেখানে সময় কাটাতে সব থেকে বেশি ভালবাসে সেটা সুন্দরবন। আমার পরিচিত একটি ছেলের গ্রামের বাড়ি সেখানে। সেখানে পুকুরে স্নান করে। ছেলেটির মা, যিনি এক বর্ণ ইংরেজি কেন আমাদের মতো বাংলাও বলতে পারেন না তিনি যখন বলেন, ‘তুমি চুল আঁচড়াও না কেন?’ তখন আমার কাছে উনি কী বললেন সেটা জেনে নিয়ে চিরুনি হাতে ওঁর কাছে চুল আঁচড়াতে বসে ইকা। এই ছেলেটি তার বিয়েতে ইকাকে নেমন্তন্ন করেছিল আমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে যে বিয়ের ইংরেজি কী। ফোন করে বলেছিল ‘মাই ওয়েডিং’। বাকিটা কী বলেছিল ইকা বুঝতেই পারেনি। কিন্তু টিকিট কেটে নেদারল্যান্ডস থেকে ওর বিয়েতে এসেছিল। আমার ছবির ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো আমি সবার আগে ওকে পাঠাই। অনেক চুমুটুমুর দৃশ্য থাকলে ও বলে ‘এ বার তোমার ফর আ চেঞ্জ নিজের বান্ধবীকেও চুমু খাওয়া দরকার...’ ব্যাস। ওইটুকুই। এই হল ইকা।
পত্রিকা: আপনার জীবনে তার মানে ইকার প্রভাব অনেকটা?
পরমব্রত: আমার মা আমার জীবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। ইকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর একজন মানুষ যিনি এখন নেই... বাবা।
পত্রিকা: খুব মিস করেন?
পরমব্রত: করি। আমার ২০ বছরের জন্মদিনের তিন দিন পরে বাবা মারা যান। সে বারই প্রথম বাবার সঙ্গে ড্রিংক শেয়ার করেছিলাম। সেটাই শেষ। এখন আমার বাড়িতে, যেখানে একা থাকি, ড্রিংক বানিয়ে চুমুক দেওয়ার সময় নিজের অজান্তেই গ্লাসটা বাবার ছবির দিকে তুলে ধরি। মনে মনে বলি ‘চিয়ার্স’...
|
|
|
|
|
|