‘সচিনময়’ মহানগর
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি নিয়েই মাতল শহর
হরের একটি শপিং মলে জায়ান্ট-স্ক্রিনে খেলাটা চলছিল। সচিন ৫০ পেরোতেই তার সামনে জমাটি ভিড়। সেঞ্চুরির পরে সেই ভিড়টাই ফেটে পড়ল উচ্ছ্বাসে। একশোয় একশো!
প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। একটা প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল শুক্রবার সাতসকালেই। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে আসন্ন বাজেট পেশের উৎকণ্ঠা উড়িয়ে দিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট জুড়ে তাই তখন থেকেই শততম সেঞ্চুরির স্বপ্ন। পড়শি দেশের মাঠে শৃঙ্গজয়ের ঠিক আগে জাতীয় ক্রিকেটবীরের সতর্ক পদক্ষেপের তালে অবশ্য ধুকপুকুনি বেড়ে গেল কলকাতার।
সিএবি-তে মোমবাতি জ্বেলে কেক কাটছে খুদেরা।
আশুতোষ কলেজের পাশে একটি ছোট্ট কাফেতে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। নব্বইয়ের কোঠায় সচিন তেন্ডুলকর ছোট ছোট রানে এগোচ্ছেন দেখে স্নাতক স্তরের দুই ছাত্রের সঙ্গে ম্যানেজার ‘অর্ণবদা’র একপ্রস্ত বাজি হয়ে গেল। ঘোর নৈরাশ্যবাদী ম্যানেজার বলছেন, ‘‘মুম্বই-মেলবোর্নে ফস্কে গিয়েছে, এ বারও হল না রে!’’ দুই বন্ধু শঙ্কর ও জ্যোতি তাঁকে থামিয়ে দিলেন, “হলে কিন্তু ফ্রি-তে স্যান্ডউইচ খাওয়াচ্ছ তুমি। শুনে রাখ, আজ কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
সচিনকে নব্বইয়ের ঘরে ‘নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে’ রেখে রায়নার বাহারি ‘স্ট্রোক-প্লে’-তেও ধৈর্য হারিয়েছে টিভিমুখো কলকাতা। মাহেন্দ্রক্ষণে মধ্য কলকাতার একটি থানার ‘বড়বাবু’র ঘরে টিভির সামনে গুটিকয়েক অতিথি ও পুলিশকর্মী ‘স্পিকটি নট’। ৯৯-এ পৌঁছে সচিন পরপর দুটো বল ঠুকলেন দেখে গম্ভীর মুখে থানার এক দারোগার মন্তব্য, “হুম্, দেশের অর্থমন্ত্রীর মতোই সাবধানে পা ফেলছে।’’
সচিন পরম কাঙ্ক্ষিত রানটি কুড়োনোর পরে গোটা শহরেরই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
একটি সেঞ্চুরির জন্য এক বছর ধরে অপেক্ষার জেরেই কি উন্মাদনায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল কলকাতার?
দিনভর বাজেট-আলোচনার পরে বিকেলে টিভিতে সচিন-বন্দনা শুরু হতে না-হতেই সিএবি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১০০ জন বাচ্চাকে জোগাড় করে ফেলে। সচিনের মুখ-আঁকা টি-শার্ট গায়ে ইডেনের সামনে যারা ১০০ মোমবাতি জ্বালিয়েছে। চুটিয়ে হোলি খেলেছে বেহালায় সৌরভের পাড়াও। কালীঘাটে পাড়ার শিল্পী স্বপন দাসকে পাকড়ে পোস্টার লেখাতে বসেন ক্রিকেট-পাগলেরা। তাড়াহুড়োয় স্বপনবাবু ‘প্রিন্স অফ ক্রিকেট’ লিখেছেন দেখে ‘‘ওটা প্রিন্স নয়, গড হবে’’ বলে স্থানীয় যুবক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কী বকা!
সৌরভের পাড়ায় উৎসবের মেজাজ। শুক্রবার।
ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বিশ্বক্রিকেটের রানমেশিনকে নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের রেশটাও কিন্তু আনন্দের দিনে কলকাতাকে ছুঁয়ে থেকেছে। সকালে প্রত্যাশার মধ্যেও কোথাও একটা তির্যক সুর ছিল। ফেসবুকে শহরের জনৈক ক্রিকেট-রসিকের সরস টিপ্পনি, “বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৩০০ করলে বরং সচিনের একটা চান্স থাকবে!” বিকেলের তাঁরাই কেউ বলেছেন, ‘অঙ্কের নতুন হিসেব ১০০ x ১০০= তেন্ডুলকর’। ব্র্যাডমানের সঙ্গে তুলনা টেনে কারও সাহসী মন্তব্য, ‘সচিন আজকের ডন হলে, ব্র্যাডম্যান প্রাচীন সচিন’।
শেষমেশ অবশ্য ম্যাচ হেরেছে ভারত। তবু রেকর্ডটা বাংলাদেশের মাঠে হল বলেই কি ক’মাস আগের ইডেনের ‘শোকের’ কিছুটা ‘সান্ত্বনা’ খুঁজে পেল কলকাতা?
চায়ের দোকানের জটলায় টুকরো মন্তব্য, ‘যাকগে! সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা অন্তত বাঙালিদের সামনেই হল!’

ছবি: শঙ্কর নাগদাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.