ভারত ম্যাচ হেরে যাওয়ায় জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, শততম সেঞ্চুরি করেও কি তিনি সাংবাদিকদের
মুখোমুখি হবেন? কবে তিনি শেষ বার সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছেন মনেই করা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ায়
গোটা সফরে এক বারও আসেননি। শেষ পর্যন্ত মীরপুরে অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে এলেন
সচিন তেন্ডুলকর। সেই কথাবার্তার নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হল... |
স্বস্তি, উচ্ছ্বাস না হতাশা?
সচিন: মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আমরা একটা ভাল স্কোরে পৌঁছতে চেয়েছিলাম। আমি যখন বিরাটের সঙ্গে ব্যাট করছিলাম, তখন ঠিক করি ২৭৫-২৮০ এই উইকেটে ভাল স্কোর হবে। বিরাটও তখন বলল, প্রথম ম্যাচটা যে পিচে খেলেছিলাম এটা সেটা নয়। আমাদের মনে হয়েছিল ২৮৯ উইনিং স্কোর। শেষ তিন ওভারে ৩৩ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের ভালই নিয়ন্ত্রণ ছিল ম্যাচের উপর। ওরা দারুণ সব শটও খেলেছে।
শততম সেঞ্চুরির দীর্ঘ প্রতীক্ষা
সচিন: বেশ কঠিন ছিল এই সময়টা। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াতেই যেমন ভাল ব্যাট করছিলাম, কিন্তু সেঞ্চুরি হচ্ছিল না। মুম্বইতে আমি এত কাছে চলে এসেছিলাম। কিন্তু কোনও ভাবে ১০০ সংখ্যাটা হচ্ছিল না। খুব তৃপ্ত লাগছে যে, ব্যাপারটা ঘাড় থেকে নেমেছে। এ বার আমি নিজের মতো করে ম্যাচে মনঃসংযোগ করতে পারব।
ঈশ্বর ক্রিকেট-ঈশ্বরের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন কি না
সচিন: প্রথমত আমি ঈশ্বর নই। আমি এক জন ক্রিকেটার। আমি সচিন। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষার ব্যাপারটা সত্যি। নিরানব্বইটা সেঞ্চুরি করার পরেও তোমাকে বুঝতে হচ্ছিল, একটা সেঞ্চুরিরও কী মূল্য! মোটেও সহজ ছিল না। অনেক লোক আছেন যাঁরা আমাকে এই সময়টা সমর্থন করে গিয়েছেন। অনেকে আমার জন্য প্রার্থনা করেছেন। তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলব, দয়া করে আমার জন্য প্রার্থনা করে যান। |
অপশনাল নেটে হাজির হয়ে তরুণ দুই স্পিনারকে নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচের জন্য নিজেকে তৈরি করা
সচিন: আমি একটু ব্যাটে-বলে করতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ, অপশনাল নেট ছিল। আসতেও পারতাম, না-ও আসতে পারতাম। এমন নয় যে যারা আসেনি তারা শুধু আরামই করতে চায়। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল ছুটির দিন বলে বসে না থেকে আমি যাই। ব্যাট-বলের একটা অনুভূতি আছে। সেটা পেতে চেয়েছিলাম। জানতাম ওটা করলে আমার ভাল লাগবে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু। সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই রবিবার নতুন চ্যালেঞ্জের ম্যাচ
সচিন: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। পাকিস্তান ম্যাচ আমাকে আরও ভাল প্লেয়ার করে দেয়। আমরা ভুল করি ঠিকই, কিন্তু প্রক্রিয়াটা কখনও থামে না। এই ম্যাচের পর যেমন ফিরে গিয়ে আমরা নিজেদের নিশ্চয়ই বলব যে, একই ভুল আমরা আর করব না। আমি রবিবারও আমার ক্রিকেট উপভোগ করতে চাই। আমাদের কাছে এটা বড় ম্যাচ। ফিরে গিয়ে আমাদের নতুন স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে। সবাই আবার এক জায়গায় হতে হবে।
২৮৯ রক্ষা করতে না পারা নাকি ৩০ রান কম করা? দিনের শেষে কোনটা হারের কারণ?
সচিন: দিনের শেষে অনেক মন্তব্য ঘোরাফেরা করতে পারে। দিনের মধ্যে যখন খেলাটা চলে তখন কেউ মন্তব্য করে না। তখন ক্রিকেটাররা মাঠে দাঁড়িয়ে খেলে। ২৮৯ যে কোনও মাঠে, যে কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভাল স্কোর। কখনও-সখনও প্রতিপক্ষকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। ওরা রানটা দারুণ তাড়া করেছে। আমাদের বোলাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। অস্ট্রেলিয়া যদি ৪৩৪ রান করেও ম্যাচ হারতে পারে তা হলে আপনি কাকে দোষ দেবেন?
আর একটা ‘স্টোন’ (পাথর)-কে মাইলস্টোনে পাল্টে দিলেন কি না। এর পর কী?
সচিন: আমি মাইলস্টোনের জন্য খেলি না। রেকর্ডের জন্য খেলি না। আমি খেলি কারণ ক্রিকেট খেলতে ভালবাসি। উপভোগ করি। এ সব আপনারা তৈরি করেন কারণ আপনারা লেখেন।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড থেকে মীরপুর, প্রথম থেকে শততম সেঞ্চুরির যাত্রা
সচিন: একশো সেঞ্চুরির মধ্যে সবথেকে কঠিন শততম সেঞ্চুরিটা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার সফরের শিক্ষা
সচিন: মতামত ছিল, থাকবে। কিছু আমার পক্ষে। কিছু আমার বিপক্ষে। আমি কোনওটাই পড়ি না। আমি আমার কাজ করতে এসেছি। সেটাই করে যাব। উত্থান-পতন জীবনের অঙ্গ। এমন কোনও মানুষ নেই যে, জীবনে এটার মুখোমুখি হয়নি। প্রত্যেক ক্রিকেটারের জীবনেই এটা আসে আর এই সব অধ্যায়গুলো অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। বুঝতে হবে ভাগ্যও সব সময় আপনার সঙ্গে থাকবে না।
হতাশ হয়ে পড়ছিলেন কি না
সচিন: হ্যাঁ। আমাকে সত্যি কথাটা স্বীকার করতেই হবে। আমিও মানুষ। মনের মধ্যে একটা অশান্তি তো চলছিলই।
গত এক বছরে রক্তমাংসের মানুষ হলেন কি না
সচিন: আমি সব সময়ই রক্তমাংসের মানুষ ছিলাম (হাসি)।
সেঞ্চুরি পাওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া
সচিন: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। যা কিছু তুমি আমায় দিয়েছ...। কখনও কোনও লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছি বলে আগে থেকে ধরে নিইনি। চেষ্টা করেছি সৎ থেকে, পরিশ্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছনোর। আর একটা কথা বলতে পারি। সেঞ্চুরিটাই শুধু মাথায় একমাত্র ভাবনা ছিল না। আমি বারবার স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাচ্ছিলাম টিমের স্কোর দেখার জন্য। রানরেট দেখার জন্য। নিজের রান দেখার জন্য নয়।
জল্পনা চলছিল একশো সেঞ্চুরি করে আপনি ওয়ান ডে থেকে অবসর ঘোষণা করবেন
সচিন: যে দিন আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নেব, সে দিন নিশ্চয়ই আপনাকে এসে জানাব। চিন্তা করবেন না। আপনাদের সবাইকে জানাব। আপাতত এটুকুই বলতে পারি যে, সে রকম কোনও ভাবনা নেই। আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি। যত দিন টিমের জন্য অবদান রাখতে পারব, খেলব। কোনও কোনও দিন ২২৫ করেও ম্যাচ জেতা যায়। কোনও কোনও দিন ২৮৯ করে হেরে যেতে হয়। এগুলো খেলার অঙ্গ। আতঙ্কিত হয়ে পড়ার কিছু নেই।
নাগপুরে ৯৯তম সেঞ্চুরি থেকে মীরপুর প্রত্যাশার চাপ কী করে সামলালেন
সচিন: বিশ্বকাপের সময় আপনারা এটা নিয়ে অত লেখালেখি করছিলেন না। আপনাদের মনে তখন এটা ছিল না। আর আমার মনে কখনওই ছিল না। ইংল্যান্ড সফরের আগে থেকেই দেখলাম হঠাৎ লেখালেখি শুরু হয়েছে যে, আমি নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাইনি ইংল্যান্ডে শততম সেঞ্চুরিটা করব বলে। আরে, সেঞ্চুরি কি এ রকম প্ল্যান করে করা যায় নাকি? যে কোনও ব্যাটসম্যানকে জিজ্ঞেস করুন। সে বলবে, আমি সেঞ্চুরি করতে চাই। আমিও চেয়েছি। এখনও চাই। কারণ সেঞ্চুরি করা মানে টিমের জন্য একটা দারুণ অবদান রাখতে পারা। আমি এই যাত্রাটা সম্পূর্ণ করতে পেরে খুব তৃপ্ত। কত লোকের কত প্রশ্ন ছিল। যারা কখনও কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়নি, লড়াই জেতেনি, তারা কী করে বুঝবে! তাদের কাছে তো শুধু প্রশ্নই থাকবে। উত্তর নয়। |