বরাদ্দ বাড়ল শিক্ষা-স্বাস্থ্যে, খুশি মন্ত্রক
সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই ‘টানাটানির’ বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রের উন্নতিতে যথাসম্ভব উদার হওয়ার চেষ্টা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এক দিকে বুনিয়াদি শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের সহজে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার মতো সিদ্ধান্ত, অন্য দিকে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের সফল রূপায়ণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর উন্নয়ন। অর্থাৎ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যথেষ্টই জোর দিতে চেয়েছেন প্রণববাবু। এই প্রাপ্তিতে মোটের উপর সন্তুষ্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রীরাও।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি যে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য, গত বাজেটেই তা বুঝিয়েছিলেন প্রণব। এ বারও একই পথেই হেঁটেছেন তিনি। শিক্ষায় গত বারের তুলনায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬১,৪২৭ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রণববাবু। যে টাকার একটি বড় অংশ (প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা) খরচ হবে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিতে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানাচ্ছে, এই বৃদ্ধি গত বারের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে গত বার অবশ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রায় ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছিলেন প্রণববাবু।
অমর্ত্য সেনের মতে, ভারতের মতো দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য যে দু’টি ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, সেগুলি হল প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। এই দু’টি ক্ষেত্রই সব থেকে বেশি উপেক্ষার শিকার বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। গত বছরও এই বৈষম্য দূর করতে তৎপর হয়েছিলেন প্রণববাবু।
বিপুল আর্থিক ঘাটতি সত্ত্বেও এ বারও বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ তাঁর মন্ত্রককে দেওয়া হয়েছে, তাতে যথেষ্ট খুশি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল। তাঁর মন্ত্রককে দেওয়া অর্থের মধ্যে ৪৫,৯৬৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মূলত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার জন্য। যার মধ্যে আবার ২৫,৫৫৫ কোটি টাকা খরচ হবে শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণ করতে। ছয় থেকে চোদ্দ বছরের মধ্যে সমস্ত শিশু ও কিশোরকে শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসতে এই ক্ষেত্রটিতে গত দু’ বছর ধরে আরও বেশি অর্থ সাহায্যের দাবি জানিয়ে আসছিল মন্ত্রক।
সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে ওই আইনটির রূপায়ণের দায়িত্ব যৌথ ভাবে বহন করে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি এই খাতে সমান অনুপাতে অর্থ ব্যয় করবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, তামিলনাড়ু, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো অধিকাংশ রাজ্য। তাদের দাবি, এই খাতে রাজ্যগুলিকে আরও বরাদ্দ দিক কেন্দ্র। বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি হওয়ায় রাজ্যগুলির দাবি মানার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ করার কথা ভাবা যেতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারা। এ ছাড়া প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ধরে রাখতে ‘মিড ডে মিল’ খাতে ১৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান পরিকল্পনায় এ বারে ৩১২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই টাকার একটি বড় অংশ খরচ হবে ৬০০০টি ‘মডেল’ স্কুল গড়ে তুলতে। যার মধ্যে আবার আড়াই হাজার স্কুল গড়ে তোলা হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি মডেল)। বরাদ্দ বেড়েছে উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষাতেও। এ ছাড়া গরিব ও সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশের ছাত্রছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষা খাতে সহজে ঋণ পায়, তার জন্য একটি ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড’ গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রণববাবু।
শিক্ষার মতোই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও। প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। যে টাকার প্রায় সত্তর ভাগ খরচ হবে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের সফল রূপায়ণে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, অপুষ্টি দেশের অন্যতম সমস্যা। শুধু গ্রামীণ ভারতই নয়, দেখা গিয়েছে, শহরাঞ্চলের কিশোর-কিশোরীরাও অপুষ্টির শিকার। ইতিমধ্যেই ২০০টি জেলাকে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক যেখানকার কিশোর-কিশোরীরা অপুষ্টিতে ভুগছে। এই সমস্যা দূর করতে গোটা দেশে একটি সুসংহত পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রণববাবু। এ ছাড়া অপুষ্টি দূরীকরণে খাদ্যে সয়াবিনের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সয়াবিনজাত পণ্যের আমদানি শুল্ক ত্রিশ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। প্রো-বায়োটিক পদার্থের ক্ষেত্রেও ওই শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি ও উৎপাদন শুল্ক কমেছে আয়োডিনের ক্ষেত্রেও। পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া, এইচআইভি, ক্যান্সারের মতো রোগে বিদেশ থেকে আমদানি করা জীবনদায়ী ওষুধের আমদানি শুল্ক পাঁচ শতাংশ কমানো হয়েছে। ওই ধরনের ওষুধ দেশে তৈরি হলে মকুব হবে উৎপাদন শুল্কও।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, গত এক বছরে দেশে নতুন কোনও শিশু পোলিওর শিকার হয়নি। আজ সেই সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রণববাবু জানান, দেশের সব শিশুকে টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই ‘ভ্যাকসিন সিকিউরিটি’-র লক্ষ্যে বর্তমান টিকা তৈরির কারখানাগুলির আধুনিকীকরণের পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের জন্য একটি নতুন কারাখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.