শুল্ক বাড়ায় অস্বস্তিতে গাড়ি শিল্প, দাম বাড়াচ্ছে অনেক সংস্থা |
দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত • কলকাতা |
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। চলতি অর্থবর্ষে চড়া সুদ ও পেট্রোলের দাম বাড়ার কারণে এমনিতেই সঙ্কটে গাড়ি শিল্প। তার উপর শুক্রবার বাজেটে শুল্ক বাড়ায় আগামী দিনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে এই শিল্প। অবস্থা সামাল দিতে ইতিমধ্যেই গাড়ির দাম বাড়ানোর কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে অধিকাংশ সংস্থাই।
প্রাথমিক ভাবে শিল্পমহলের ধারণা ছিল এ বার বাজেটে ডিজেল গাড়ির উপর শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটবে কেন্দ্র। তা না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও, উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা অস্বস্তিতে ফেলেছে সংস্থাগুলিকে। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাজেটকে স্বাগত জানালেও, গাড়ি শিল্পে বিশেষত বড় গাড়িতে উৎপাদন শুল্ক বাড়ায় শঙ্কিত নির্মাতা সংস্থাগুলির সংগঠন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম)। তবে, ব্যাটারি-সহ হাইব্রিড গাড়ির যন্ত্রাংশের উপর আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়াকে প্রশংসার চোখেই দেখছে তারা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বাজেটে সাধারণ ভাবে উৎপাদন শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ১২% করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি, ইস্পাতের চাদরের উপর আমদানি শুল্ক ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭% করা হয়েছে। এরই সঙ্গে, এখন থেকে বড় গাড়ির ক্ষেত্রে দামের উপর সর্বোচ্চ উৎপাদন শুল্ক হবে ২৭%। ৪০,০০০ ডলারের (২০ লক্ষ টাকা) বেশি দামি আমদানি করা তৈরি গাড়ি (সিবিইউ) ও স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) এবং মাল্টি ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এমইউভি) দামের উপর আমদানি শুল্কও ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। এর ফলে গাড়ি তৈরির খরচ বাড়ার পুরোটাই ক্রেতাদের উপর চাপানোর কথা জানিয়েছে সংস্থাগুলি।
সামগ্রিক ভাবে বাজেটকে স্বাগত জানালেও, গাড়ি শিল্পের উপর প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি-র এমডি-সিইও শিনজো নাকানিশি। এ দিন তাদের সমস্ত গাড়িরই দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সংস্থা।
একই সঙ্গে গাড়ির দাম বাড়াচ্ছে টাটা মোটরস, ফোর্ড, জেনারেল মোটরস ও টয়োটা কির্লোস্কর-ও। তবে, দাম ঠিক কত বাড়বে তা জানায়নি তারা। অন্য দিকে, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রার প্রেসিডেন্ট পবন গোয়েন্কা জানান, ট্রাক্টর-সহ তাদের সংস্থার গাড়ির দাম ৩ থেকে ৩৫ হাজার বাড়বে।
গাড়ির দাম বাড়ার কথা জানিয়েছেন হোন্ডা সিয়েলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্ঞানেশ্বর সেনও। তিনি বলেন, ছোট গাড়ি ব্রিও-র দাম বাড়ছে প্রায় ৭ হাজার টাকা এবং সেডান অ্যাকর্ডের দাম বাড়তে পারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
ছোট গাড়ি স্যান্ট্রো থেকে এসইউভি সান্টা ফে-র দাম ৫ থেকে ৮১ হাজার টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হুন্ডাই-ও। মার্সিডিজের ডিরেক্টর (বিপণন) দেবাশিস মিত্র জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দাম বাড়ানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, তা বাড়তে পারে ১.৫ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। গাড়ির দাম বাড়ানোর কথা ভেবে দেখছে অন্যতম জার্মান সংস্থা অডি-ও।
এ দিন বাজেটের জেরে দাম বাড়ালেও, তা সঙ্কটে থাকা গাড়ি শিল্পকে আগামী দিনে আরও বিপদে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিকাংশ সংস্থাই। সে ক্ষেত্রে এক মাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেই কিছুটা সুরাহা হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। গাড়িঋণে সুদের হার কমলে ক্রেতারা গাড়ি কিনতে উৎসাহী হবেন বলে মনে করছেন তারা। ফলে বিক্রি বাড়ার হাত ধরে বাড়তে পারে ব্যবসা।
তবে, সিয়ামের প্রেসিডেন্ট এস শাণ্ডিল্যের ধারণা, আমদানি করা গাড়ির উপর শুল্ক বাড়ায় এখন থেকে দেশে গাড়ি তৈরিতে উৎসাহী হবে সংস্থাগুলি। ফলে পরোক্ষে ভারতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
|