বাজার ধরে রাখা নিয়ে চিন্তায় আবাসন শিল্প |
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
মেনুতে বিরিয়ানি নেই। তার বদলে রয়েছে সাধারণ মাছ-ভাত। এ বারের বাজেটকে এ ভাবেই দেখছে নির্মাণ শিল্পমহল।
মন্দা পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে যে ‘আম আদমি’র বাজার আঁকড়ে এগোচ্ছে নির্মাণ শিল্প, সেই বাজার ধরে রাখতে ২০১২-’১৩ সালের বাজেটে কয়েকটি পদক্ষেপ করেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যেমন, ‘অ্যাফোর্ডেবল’ বা সাধারণের জন্য তৈরি আবাসন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রত্যাশার ঝুলি আংশিক ভাবে পূরণ করেছে। নির্মাণ সংস্থাদের সংগঠন ক্রেডাই-এর অভিযোগ গৃহঋণে সুদ না-কমায় আবাসন শিল্পে বৃদ্ধির হার ধরে রাখা কঠিন হবে। বাজেটে যে ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার ফলে নির্মাণ শিল্পে নগদ টাকার জোগানের অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
শুক্রবার সংসদে পেশ হওয়া বাজেটে গৃহঋণে কোনও ছাড়ের ঘোষণা নেই। গত বারের মতোই এ বারও ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণে ১ শতাংশ সুদ ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি, এই ঘোষণা বাজারে বড় কোনও প্রভাব ফেলবে না। মূল্যবৃদ্ধির হার যেখানে রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এটা বড় কোনও ছাড় নয়।
মন্দার সময়ে শিক্ষা নিয়েছিল ভারতের আবাসন শিল্প। দামি বাড়ির ক্রেতা না-পেয়ে বড় অঙ্কের লাভের আশা ছেড়েছিল নির্মাণ সংস্থাগুলি। ব্যবসা টিঁকিয়ে রাখার দায়ে মধ্যবিত্তকেই আঁকড়ে ধরেছিল তারা। কারণ সাধারণ বাড়ি-ফ্ল্যাটের বাজার প্রয়োজনের তাগিদেই তৈরি হয়। তাই ফাটকা নয়। নিজের মাথার উপরে ছাদ জোগাড় করতেই ফ্ল্যাট কেনেন এই ক্রেতারা। চাহিদা ও জোগানের নিয়ম মেনেই এই বাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে বলে মনে করেন বেঙ্গল পিয়ারলেসের কর্তা কুমারশঙ্কর বাগচি। তিনি বলেন, “গৃহঋণে সুদের হার কমালে আরও বেশি মানুষ নিজেদের বাড়ি কিনতে পারতেন। তা ছাড়া, সাধ্যের মধ্যে বাড়ি বলতে সুনির্দিষ্ট কোনও দামের কথা বলা হয়নি। ফলে সুযোগের অপব্যবহারও হতে পারে।” ‘অ্যাফোর্ডেবল’ বা সাধারণের জন্য তৈরি আবাসন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নেওয়ার সুবিধার প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নির্মাণ শিল্প। কুমারশঙ্করবাবুর মতে, অকারণে ঋণের বোঝা বাড়লে দাম বাড়বে। তাতে সাধারণ ক্রেতার অসুবিধাই হবে। অন্য দিকে সিদ্ধা গোষ্ঠীর সঞ্জয় জৈন জানান, এ ধরনের আবাসন প্রকল্প গড়তে বিদেশি ঋণের সুবিধা আরও অনেক সংস্থাকে উৎসাহ দেবে।
বাজেটে গ্রামীণ আবাসন ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে তহবিল তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য, গৃহঋণ পাওয়া সহজ করা। কিন্তু এ সব সুবিধা কতটা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও এতে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা ভিবজিওরের কর্ণধার রাজা ভদ্র। তিনি বলেন, “জেলায় আবাসন তৈরি করছে যে-সব সংস্থা, তারা অবশ্যই উৎসাহী হবে। সাধারণ ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেছে বাজেট, এটা খুবই ইতিবাচক দিক।”
সব মিলিয়ে গত বারের মতোই এ বারেও সংস্কারহীন বাজেট দেখে হতাশ হয়েছে নির্মাণ শিল্প। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ড ইন্ডিয়ার কর্তা অনুরাগ মাথুর বলেন, “সাধারণ ক্রেতার জন্য কিছু সামান্য ছাড় ছাড়া আবাসন শিল্পের জন্য বিশেষ কোনও সুবিধা নেই বাজেটে। গত বারের মতোই এ বারও সাবধানে পা ফেলতে চেয়েছে সরকার।”
অবশ্য, চলতি আর্থিক বছরের মাঝামাঝি গৃহঋণে সুদ কমতে পারে বলে মনে করছে ব্যাঙ্কিং মহল। সেই ভরসায় আপাতত বাজার ওঠার আশায় দিন গুনছে নির্মাণ শিল্পমহল। |