|
|
|
|
বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের সুবিধা পাবে রাজ্য |
কান্দিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, বরাদ্দ ফরাক্কায় |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে খুশি করতে পারে, এমন কোনও সরাসরি ঘোষণা হয়তো কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আজকের বাজেটে রইল না। তবে তাঁর অতীত ধারা বজায় রেখে পশ্চিমবঙ্গকে একেবারে নিরাশও করলেন না প্রণব।
কী পেল রাজ্য? মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪৩৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আজ ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে রাজ্যে জলের গুণমান বিশেষ করে আর্সেনিক সমস্যা নিয়ে গবেষণার জন্য কলকাতায় একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান পত্তনের প্রস্তাব দিলেন বাজেটে। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, “প্রয়োজনে টাকা আরও বরাদ্দ করা হবে। এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ জন্য জমির ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য অনুরোধ করছি।” তা ছাড়া, পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লবে আরও উৎসাহ দিতে সামগ্রিক বরাদ্দ এক ধাক্কায় ৪০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে বরাদ্দ এক হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। যার সুবিধা পাবে রাজ্য। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, অনগ্রসর এলাকা অনুদান খাতে আগামী অর্থবর্ষে যে ১২ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতেও পশ্চিমবঙ্গ উপকৃত হবে।
পাশাপাশি বাজেট নথিতে জানানো হয়েছে, ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় নদী ভাঙন রুখতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যারেজ ও গেট প্রতিস্থাপনের জন্য বরাদ্দ করা হবে ১৫০ কোটি। ফরাক্কা ব্যারেজের মেরামত, পরিচালনার জন্য দ্বাদশ যোজনা কালে আরও সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
তৃণমূলের দাবি ছিল, ঋণগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে রাজ্যের বেরনোর যেন একটা দিশা থাকে এ বারের বাজেটে। দৃশ্যত সেই আশা পূরণ হয়নি। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠলে প্রণববাবু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আমি জানি। কিন্তু ফেডারাল বাজেটে রাজ্যের ঋণভার কমানোর সুযোগ থাকে না। কেরল, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গের ঋণভার সবচেয়ে বেশি। ব্যয়বরাদ্দসংক্রান্ত সচিবকে এ ব্যাপারে আমি রিপোর্ট দিতে বলেছি। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। এই কাজটা হবে।” এ ছাড়া তিনি জানান, অনগ্রসর এলাকা অনুদান তহবিল (ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ড) দ্বাদশ যোজনাতেও থাকছে। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে এই খাতে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশার কিছু এলাকা এবং বুন্দেলখণ্ডের খরাকবলিত এলাকার জন্য ১২ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। তার একটা বড় অংশ পাবে পশ্চিমবঙ্গ।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, রাজ্যওয়াড়ি ঢালাও প্রকল্প বা বরাদ্দও সাধারণ বাজেটে বিশেষ ঘোষণা করা হয় না। সীমিত সেই সুযোগের মধ্যেও প্রণববাবুর গত তিন বারের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ প্রতি বারই কিছু না কিছু পেয়েছে। তা সে খড়গপুর আইআইটি এবং কলকাতার আইআইএম-এর জন্য বিশেষ অনুদান হোক বা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপন।
সে দিক থেকে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণব আজ যে প্রকল্প ঘোষণা করেছেন সেটাই সব থেকে উল্লেখযোগ্য। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে আজ ঘোষণা করা মাত্রই, বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী লোকসভাতেই রীতিমতো লাফিয়ে ওঠেন এবং প্রণববাবুকে ধন্যবাদ জানান। প্রণববাবু অবশ্য সহাস্যে বলেন, “এটা আমার নির্বাচন কেন্দ্রের জন্য ভাবলে ভুল হবে।” পরে অধীর বলেন, এই প্রকল্পের জন্য ১৭০ কিলোমিটার সাইকেল যাত্রা করেছি। এত দিনে ফল পাওয়া গেল। কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থে এ বার ময়ূরাক্ষী, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা ইত্যাদি নদ-নদীতে নাব্যতা বাড়ানো, বন্যার জল ধরে রাখা, খাল কাটা-সহ সামগ্রিক বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ হবে। পশ্চিমবঙ্গের সেচ ও ক্ষুদ্র শিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া কলকাতায় বলেন, “এর ফলে কান্দির ৮টি ব্লক ছাড়াও বীরভূমের মুরারই ও তার সংলগ্ন এলাকা উপকৃত হবে।” তিনি জানান, প্রতি রাজ্যে সেচ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম গড়ার যে রূপরেখা প্রণববাবু বাজেটে পেশ করেছেন, তার ফলেও উপকৃত হবে পশ্চিমবঙ্গ। কারণ, প্রকল্প গড়তে বাজার থেকে ঋণ নিতে পারবে এই নিগম।
তা ছাড়া সামগ্রিকভাবে কর আদায় বাড়িয়ে মোট রাজস্ব আদায় বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, স্বাভাবিক ভাবেই তাতে চলতি বছরের তুলনায় আগামী অর্থবর্ষে বেশি অর্থই পেতে চলেছে রাজ্য। কর বাবদ কেন্দ্রের আদায়ের থেকে রাজ্যের অংশ হিসাবে এ বার ৩২০৮ কোটি টাকা পাবে রাজ্য। এই করের অংশ-সহ অন্যান্য প্রাপ্র্য মিলিয়ে আগামী অর্থবর্ষে রাজ্যের ভাগে বরাদ্দ ১৫০ শতাংশ বাড়বে বলেই প্রণববাবু জানান। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও উৎকর্ষ কেন্দ্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে আজকের বাজেটে। এর মধ্যে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স-এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা।
বাজেট নথি থেকে জানা গিয়েছে, কলকাতার মেট্রো রেল সম্প্রসারণের স্বার্থে আগামী আর্থিক বছরে মোট ৫৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে চলেছে কেন্দ্র। |
|
|
|
|
|